নবায়নযোগ্য শক্তি, ডিজিটাল অর্থনীতি, টেক্সটাইল ও পোশাক, স্বাস্থ্যসেবা ও ফার্মাসিউটিক্যালস এবং কৃষি প্রক্রিয়াকরণ- এ পাঁচটি খাতে ব্যাপক বিদেশি বিনিয়োগ আসতে পারে।
বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রফতানিকারক দেশ বাংলাদেশ, এ খাতে প্রচুর বিদেশি বিনিয়োগ আসতে পারে। অন্যদিকে ওষুধ শিল্প এ মুহূর্তে সর্বোচ্চ সম্ভাবনাময় খাত, এখানেও অর্থ ঢালতে পারেন বিদেশিরা। নবায়নযোগ শক্তির দিকে ঝুঁকছে, বিনিয়োগ সম্মেলনে এ খাতে আকৃষ্ট করতে চাইবে বাংলাদেশ। নতুন হাওয়া তুলেছে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, এখানেও ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন বৈশ্বিক ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা। এছাড়া ডিজিটাল অর্থনীতিতে বিনিয়োগকারীদের টানতে চেষ্টা থাকবে সরকারের।
টেক্সটাইল ও পোশাক খাত নতুন আলো ছড়াতে পারে
পোশাক শিল্প থেকে রফতানির পরিমাণ ৫০ বিলিয়ন ডলারের মতো, যা মোট রফতানির ৮০ শতাংশের বেশি। বর্তমানে তৈরি পোশাক রফতানিতে বিশ্বে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ২য় এবং শীর্ষ স্থানে রয়েছে চীন। ডব্লিউটিও’র বর্তমান বৈশ্বিক হিসেবে মোট পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের দখলে ৬.৪ শতাংশ হিস্যা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর ৩০ শতাংশ এবং বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। চীনের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বেশি হওয়ায় তাদের সঙ্গে এখন পাল্লা দেবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে পোশাক রফতানিতে তৃতীয় অবস্থানে আছে ভিয়েতনাম, তাদের ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় এদেশের ক্রয়াদেশ চলে আসতে পারে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হতে পারে।
ওষুধ শিল্প ও স্বাস্থ্যসেবা খাতও আকর্ষণীয়
বর্তমানে বাংলাদেশে ওষুধ শিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজার প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার উপরে এবং আন্তর্জাতিক বাজার ৬৫০ কোটি টাকারও বেশি। এ খাতে প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৯ শতাংশের উপরে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বর্তমানে সরকারি তালিকাভুক্ত ৮৫০টি ছোট-বড় ওষুধ কারখানা ও ২৬৯টি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রস্ততকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণ করে বিশ্বের ১৬০টিরও বেশি দেশে ওষুধ রফতানি করে আসছে।
দেশে বছরে এখন প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ওষুধ ও কাঁচামাল উৎপাদিত হচ্ছে। পোশাক শিল্পের সাফল্যের পর ওষুধ শিল্পকে বাংলাদেশ অন্যতম প্রধান রফতানি পণ্য হিসেবে দেখছে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ বিশ্বের অনুন্নত ৪৮ দেশের মধ্যে ওষুধ উৎপাদনে শীর্ষে অবস্থান করছে, তবে ২০২০ সালে ওষুধ রফতানিকারক দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭২তম। এ খাতে নতুন নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ পেলে খুব সহজেই বিনিয়োগকারীরা লাভ পাবেন, দেশও হবে লাভবান। এ খাতে বিনিয়োগ টানতে সচেষ্ট সরকার ও নীতিনির্ধারকরা।
অন্যদিকে কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য চলে যেত ভারতে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারতে যাওয়ার স্রোতে ভাটা পড়েছে। এ সময় দেশে উন্নত মানের হাসপাতাল নির্মাণ এবং অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আমদানি করে এ খাতে নতুন ঢেউ তোলা যায়। ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিনিয়োগ টানতে মরিয়া বাংলাদেশ।
নবায়নযোগ্য শক্তিতে শক্তি জোগাতে পারেন বিদেশিরা
জীবাশ্ম জ্বালানির সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা শক্তির মূল পার্থক্য হলো শক্তির উৎসটির নবায়নযোগ্যতা, তথা যে উৎসটি ব্যবহার করা হবে সেটি যাতে সহজে নিঃশেষ না হয়ে যায়। জীবাশ্ম জ্বালানির বিভিন্ন উৎস যেমন প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, খনিজ তেল ইত্যাদির ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে সহজে নিঃশেষ হয়ে যায়। অপরদিকে নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস যেমন সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ ইত্যাদি ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে সহজে নিঃশেষ হয়ে যায় না। সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস হিসাবে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ, বায়োমাস, বায়ো ফুয়েল, জিওথার্মাল, নদীর স্রোত, সমুদ্রের ঢেউ ইত্যাদিকে শনাক্ত করেছে। এ খাতে বিদিশি বিনিয়োগকারীদের চোখ পড়তে পারে।
কৃষি প্রক্রিয়াকরণে যুক্ত হতে পারে বিদেশিরা
২৪ নভেম্বর ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত একটি খাত। শিল্পটি বাংলাদেশের দ্রুত বর্ধনশীল খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম, যেখানে দেশের শ্রমশক্তির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নিযুক্ত। কৃষিখাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের অবদান জিডিপিতে এখন ৭.৭ শতাংশ। বর্তমানে দেশে ৪৮৬টি কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনা রয়েছে, যার মধ্যে ২৪১টি রফতানিকারক এবং ২৩৫টি অভ্যন্তরীণ বাজার পূরণ করে থাকে। রফতানিতে এখন প্রায় ৩.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, তার মধ্যে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের অবদানই বেশি। বাংলাদেশে বর্তমানে ৬৩টি মৌলিক কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য ১৪০টিরও বেশি দেশে রফতানি হচ্ছে। এ খাতে আকৃষ্ট হতে পারেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা।
ডিজিটাল অর্থনীতিতে জোয়ার আসতে পারে
ফ্রিল্যান্সিং খাতের সঙ্গে জড়িত কর্মীসংখ্যা দিক থেকে (সেপ্টেম্বর ২০২২) বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় (প্রায় ৩৭ হাজার, যা বৈশ্বিক মোট সংখ্যার ১৬ শতাংশ, ভারত ৬২ শতাংশ নিয়ে প্রথম স্থানে)। এসব ফ্রিল্যান্সার জড়িত আছেন ক্রিয়েটিভ ও মাল্টিমিডিয়া, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজি, সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং সাপোর্ট, লেখা ও অনুবাদ, ডেটা এন্ট্রি ও প্রফেশনাল সার্ভিস সেবাসহ বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী কর্মকাণ্ডে। দেশের বিজনেস টু কনজিউমার্স ই-কমার্সের আকার প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার। ক্রমবর্ধমান এ খাতে দৃষ্টি ফেরানোর চেষ্টা করা হবে বিনিয়োগ সম্মেলনে।
কেকে/এআর