ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিশেষ কলাম

পলিথিনের বিকল্প ভাবতে হবে

অয়েজুল হক
🕐 ২:২৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১

পলিথিনের বিকল্প ভাবতে হবে

পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ ছিল কয়েক বছর। যদিও একেবারে বন্ধ ছিল বললে ভুল হবে। তবে কিছুটা কমেছিল বটে। মানুষ পলিথিনের ব্যাগ ভরে বাজার নিতে ভয় পেত। সেটা কেটে গেছে। কেন গেছে সে প্রশ্নও বোধগম্য নয়। ‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (৬) এর ‘ক’ ধারা মোতাবেক পলি ইথায়লিন ও পলি প্রপাইলিন বা এর কোনো যৌগের মিশ্রণে তৈরি প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করা মূলত নিষেধ। এসব পণ্য বিক্রির জন্য বিক্রেতা ও ব্যবহারকারীর বিভিন্ন দ- নির্ধারণ করা আছে। যদিও এ ব্যাপারে উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী ও ক্রেতা আমরা সকলেই উদাসীন। সহজে, সস্তায় যা পাওয়া যায় আমরা সেটাই গ্রহণ করি।

পরিবেশ নিয়ে যারা ভাবেন, মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবেন এ মানবিক মানুষগুলো বারবার হুঁশিয়ার করছেন অবিলম্বে প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যের ব্যবহার বন্ধ না করলে; পরিবেশ ও মানুষ ভয়াবহ হুমকির মধ্যে পড়বে। আইন, সতর্কতার পরও এসব পণ্য ব্যবহার বন্ধ হয়নি। বরং বেড়েছে বহুগুণ। শহর এলাকাগুলোতে ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্য যা একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয় যেমন, বোতল, প্লেট, গ্লাস, চা বা কফির কাপ, বিভিন্ন প্রকার বক্স এসব প্লাস্টিক বর্জ্যরে স্তূপ চোখে পড়ে মোড়ে মোড়ে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত দুই দশকে শুধু রাজধানীতেই প্লাস্টিক বর্জ্য বেড়েছে তিন গুণের বেশি। ভারতীয় ওয়েবসাইট বোল্ডস্কাই-এর স্বাস্থ্য বিভাগে প্রকাশিত হয়েছে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্লাস্টিকের মধ্যে রয়েছে বেসফানল এ (বিপিএ)। পানির বোতল বা শিশুদের বোতলে সাধারণত এই উপাদান ব্যবহার করা হয়। এমনকি বোতলজাত খাবারেও এটি পাওয়া যায়। বিপিএ হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাস্টিকের পাত্রে গরম করা ও গরম খাবার খাওয়া ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। এর দ্বারা প্লাস্টিকের পাত্রে থাকা রাসায়নিক পদার্থ খাবারের মধ্যে চলে যায়। এটি খাবার থেকে শরীরে প্রবেশ করে। ফলে ঝুঁকি বাড়ছে ক্যান্সার, অ্যাজমা, অটিজম, হরমোনজনিত সমস্যা, গর্ভপাতসহ নানা রোগ-বালাইয়ের। রোগ-বালাইয়ের তোয়াক্কা আমাদের খুব একটা নেই। মানুষ ওয়ান টাইম পাত্রে খাবার খেতেই বেশি পছন্দ করেন। শহুরে সভ্যতায় এটা একটা স্টাইল হয়ে দাঁড়িয়েছে। যত্রতত্র প্লাস্টিকের এসব বর্জ্য অপচনশীল হওয়ায় এগুলো টিকে থাকছে; রাস্তায়, ড্রেনে, মাটির নিচে। অর্থাৎ ওপরে নিচে সব জায়গাতেই প্লাস্টিক বর্জ্য সমস্যা সৃষ্টি করছে। মাটির ওপরে এগুলো থেকে ছড়াতে পারে নানাবিধ রোগ-জীবাণু। বৃষ্টির সময় এগুলোতে পানি জমে থাকে বিধায় এডিস মশার বংশ বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

জলাবদ্ধতার পেছনেও প্লাস্টিক অনেকাংশে দায়ী। রাস্তা ও ড্রেনের মুখে এসব বর্জ্য আটকে পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করছে। এর ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। নদী বা সাগরেও এসব প্লাস্টিক বোতল প্রাকৃতিক পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করছে। অনেক মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণী ভুল করে প্লাস্টিক সামগ্রী খেয়ে ফেলছে। মানুষ যেখানে বোঝে না সেখানে নদী বা সামুদ্রিক প্রাণীর বোঝার কথা তো নয়! তারা অবলীলায় প্লাস্টিক ভক্ষণ করছে কিন্তু হজম করতে পারছে না। এ কারণে অনেক সামুদ্রিক প্রাণী মারা যাচ্ছে। আমাদের সি বিচগুলোতে কিংবা নদীর পাড়ে কী পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা হচ্ছে তার হিসাব করা কঠিন। এটাও হিসাব করা কঠিন মাটির নিচে কী পরিমাণ প্লাস্টিক, পলিথিন জমা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অনাগত পৃথিবী এমন না হয় নদীতে বা সাগরে মাছের বদলে উঠে আসছে শুধু প্লাস্টিকের বোতল, ছেড়া পলিথিনের ব্যাগ!

বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশনের (ইএসডিও) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশে বছরে ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বর্জ্যরে পরিমাণ ৮৬ হাজার ৭০৭ টন।’ আমরা যদি এই বর্জ্য পাঁচ টনের ট্রাকে ভর্তি করে হিসাব করি তাহলে সতের হাজার তিনশত বিয়াল্লিশ ট্রাক হবে! এ পরিমাণ বর্জ্য প্রতি বছর ফেলা হচ্ছে যা পচে না, নষ্ট হয় না! হাতে হাতে পলিথিন, ঘরে বাইরে পলিথিন। মাটির নিচে পলিথিন। এগুলো পচনশীল না হওয়ায় একে তো মাটির জৈব গুণ নষ্ট হচ্ছে পাশাপশি বৃষ্টিসহ অন্যান্য পানি ভূগর্ভস্থে পৌঁছাতে বাধার সৃষ্টি করছে। ফলাফল পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা যা আমরা দেখছি, উপলব্ধি করছি।

হঠাৎ করে পলিথিন বা প্লাস্টিক সামগ্রী বন্ধ করে দেওয়াও সম্ভব নয়। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্ব যখন অনেকটা প্লাস্টিক আর পলিথিননির্ভর সেক্ষেত্রে বিকল্প উদ্ভাবন না করে এটা বন্ধ করাও সম্ভব নয়। আবার পরিবেশবান্ধব নয়, ক্ষতিকর এমন বস্তুর বিস্তার ঠেকানো মানবসভ্যতা তথা আমাদের টিকে থাকার জন্য অপরিহার্য। এক্ষেত্রে পাট থেকে উৎপাদিত ব্যাগ, শক্ত কাগজের মোড়ক বিকল্প হতে পারে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সময় এসেছে বিকল্প পদ্ধতি উদ্ভাবন করে পরিবেশ ও মানুষের জীবনকে সুন্দর করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।

অয়েজুল হক : কলাম লেখক, খুলনা
[email protected]

 
Electronic Paper