ঢাকা, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ | ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্বল করেছেন শেখ হাসিনা

নিজাম উদ্দিন হাজারী
🕐 ১:০৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৬, ২০২৪

বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্বল করেছেন শেখ হাসিনা

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনারা রাতের আঁধারে বাংলাদেশের ঘুমন্ত মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরতম গণহত্যা। বঙ্গবন্ধুর সাহসী নেতৃত্বে একটি রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ। দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ শেষে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের মহিমান্বিত বিজয়।

 

মহান স্বাধীনতার এই দিনে আমরা স্মরণ করছি জাতির জনক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও পাকিস্তানি হানাদারদের দ্বারা নিগৃহীত ২ থেকে ৩ লাখ মা-বোনকে। মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী মিত্রবাহিনীর শহীদ যোদ্ধাদের স্মরণ করছি কৃতজ্ঞচিত্তে। 

বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নয় মাসব্যাপী রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে আমরা অর্জন করি স্বাধীনতা। 

একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর মেশিন গান, কামান, ট্যাঙ্ক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। শুরু করেছিল নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ। রুখে দাঁড়িয়েছিল বাঙালী বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে। তুলে নিয়েছিল হাতে প্রতিরোধের অস্ত্র। গড়ে তুলেছিল দুর্গ। সম্মুখসমরে জীবনবাজি রেখে লড়াই করেছিল। সেদিন কেবল পাকিস্তানী সেনার সঙ্গে নয়, তাদের এ দেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধেও লড়াই করতে হয়েছে। বিজয়ের চূড়ান্ত মুহূর্তে আলবদর, রাজাকাররা বাঙালীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদেরও হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পাকিস্তানী হানাদার ও তাদের সহযোগীরা পর্যুদস্ত হয়ে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। রেসকোর্স ময়দানে ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানী সেনারা। দখলদার বাহিনীর দখলমুক্ত হয় বাংলাদেশ।

১৯৭১ থেকে ২০২৪- স্বাধীনতার ৫৩ বছরে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে নতুন মর্যাদায় আসীন। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সারা বিশ্বেই এখন প্রশংসিত হচ্ছে। স্বাধীনতালাভের পর বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এসে দারিদ্র্য আর দুর্যোগের সেই বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের পথে। এই সময়ে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে। বেসরকারি খাত বিকশিত হয়েছে ব্যাপকভাবে। প্রবাস থেকে আসছে বড় অঙ্কের রেমিট্যান্স। কৃষি খাতের উন্নয়ন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। দেশের তৈরি পোশাকশিল্প, মাছ উৎপাদন ও রপ্তানি, ওষুধশিল্প সারা বিশ্বেই সমাদৃত। এ ছাড়া স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। গড় আয়ু, লিঙ্গসমতা, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, নারী শিক্ষা, নারীর রাজনৈতিক অধিকার, নারী ও শিশু মৃত্যুহার, স্যানিটেশন, খাদ্যপ্রাপ্যতা ইত্যাদি নানা সূচকে বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশকেও ছাড়িয়ে গেছে। 

সাড়ে সাত কোটি মানুষের অসীম ত্যাগ আর সাহসিকতার ফসল ছিল মুক্তিযুদ্ধের বিজয়। রাজনৈতিক নেতৃত্বের অকুতোভয় সংগ্রাম, রাজনৈতিক নির্দেশনায় লড়াই করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা, যাদের অবদান এই স্বাধীন দেশ।

বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে উনসত্তরের গণ-আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের শুরুতে অসহযোগ আন্দোলনসহ অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম ও সর্বশেষ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের এই জায়গায় পৌঁছাতে হয়েছে। আর সে ক্ষেত্রে আমরা ঋণী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে। 

বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন, তারই কন্যা শেখ হাসিনা আমাদেরকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। দেশের আর্থ-সামাজিক কাঠামোকে তিনি এমনভাবে রূপান্তর করেছেন যা শুধু দেশেই নয়, বরং বিদেশেও সমানভাবে প্রশংসিত হয়েছে। দেশের প্রতিটি সেক্টরে শেখ হাসিনা যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাতে তার শাসনামলে সামগ্রকিভাবে বাংলাদেশ উন্নয়নের চূড়ায় পৌঁছেছে।  

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও তত্ত্বাবধানে দেশের প্রতিটি সেক্টরে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছে। কৃষি ব্যবস্থার আধুনিকায়নের জন্য বাংলাদেশ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে তাই নয়, বরং আর্ন্তজাতিকভাবেও বাংলাদেশ সামনের সারিতে চলে এসেছে। দেশ এখন চাল ও মাছ উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, শাকসবজিতে চতুর্থ এবং আম উৎপাদনে বিশ্বে অষ্টম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পদক্ষেপ প্রতিবেশি দেশ গুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বকে সুদৃঢ় করেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার দূরদর্শিতা, সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে তার অঙ্গীকার, পরিবেশ সুরক্ষায় আপসহীনতা এবং সুক্ষ্ম কূটনীতির মধ্যদিয়ে বিশ্বে একজন দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী নেতা হিসেবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্বল করেছেন শেখ হাসিনা। 

লেখক: সংসদ সদস্য, ফেনী-২ (সদর) ও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদ

 
Electronic Paper