ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সাম্য রাইয়ান সময়ের বিপরীতে হাঁটা শব্দসাধক

সৈয়দ আহসান কবীর
🕐 ৪:২২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৬, ২০২১

সাম্য রাইয়ান সময়ের বিপরীতে হাঁটা শব্দসাধক

শব্দের প্রজ্জ্বলিত শিখা তার কবিতায় প্রাঞ্জলতা ছড়ায়। অন্যরকম মনে হয়। জেগে ওঠার অনুভূতি জাগায়। রাষ্ট্র, সমাজ, সভ্যতার আনাচেকানাচে ঘোরে তার শব্দতীর; খুঁজতে থাকে কুপিবাতি। পাঠিকা পাঠকের চোখে, মনে, মগজে গেঁথে দেন অস্থির বাস্তবতার প্রশ্ন। তিনি কবি সাম্য রাইয়ান।

সম্প্রতি ‘মার্কস যদি জানতেন’ তার কাব্যগ্রন্থটি পড়ছিলাম। পড়তে গিয়ে ‘ম্যাডামের দেশে’ ঘুরে এলাম। যেখানে তিনি লিখেছেন- ‘...এটা দাস ক্যাপিটালের যুগ/ ঘরে ঘরে মার্কস ঢুকে যাবে।’ আমি অভিভূত।

কাব্যগ্রন্থজুড়ে অধিকাংশ কবিতায় কবি সাম্য রাইয়ান সমাজের আধখোলা চোখ বর্ণনায় মত্ত হয়েছেন বলে আমার মনে হয়েছে। শীতল দ্রোহের গনগনে শব্দরা ভর করেছে পঙ্ক্তিমালায়। প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন সাদামাটা ভাষায়; রেখেছেন ধোঁয়াশা। যদিও পড়তে গিয়ে কিংবা ভাব বুঝতে গিয়ে হোঁচট খেতে হয়নি। উপমা, অলংকরণ, চিত্রকল্প সৃষ্টি করেনি জটিলতা। মেটাফোরিক্যাল কবিতাগুলোও হৃদয় ছুঁয়ে গেছে; গাম্ভীর্যের আতিশয্যে দুর্বোধ্য হয়নি।

কিছু কবিতায় তুলে ধরেছেন তার পর্যবেক্ষণ। ‘বিশ্বরূপ’ শিরোনামে লেখা কবিতায় তাই হয়তো কবি লিখেছেন- ‘চর্বিত মগজের পাশে হাতঘুড়ি ঝুলে আছে হৃদয়ের গোপন কোটরে।’ ‘যুদ্ধবাদ’ কবিতায় লিখেছেন- ‘বোমারু রোবটের হাতে শব্দের ঝুলি, ক্রমিক সংখ্যার মতো নিক্ষেপ করছে তীব্র অপরিকল্পিত শব্দের ফোঁটা; ফলত পাখিরা হচ্ছে মানুষের মতো- চিৎপটাং। অস্থিরতার মতো ভয়াবহ পৃষ্ঠাগুলো অকপটে সঙ্গী হচ্ছে মানুষের। অতিদূর নক্ষত্রের মতো আবছা হলে দূরবর্তী দৃশ্যের ছায়া, আমি তবে কীভাবে তোমাকে ছোঁব?’

কবি সাম্য রাইয়ানের ওপর হাইকু’র ঢঙেও কবিতা ধরা দিয়েছে। যদিও সেখানে তিনি সমাজ সদস্যদের অবয়ব তুলে ধরতে সচেষ্ট থেকেছেন। উঠিয়ে এনেছেন মানুষের মতো দেখতে কারও কারও মধ্যে লুকিয়ে থাকা নিকৃষ্ট বৈশিষ্ট্য। তাদের ‘পরিচয়’-এ তাই তিনি বোধ করি লিখেছেন- ‘তুমি কি তাহার কুকুর?/ লেলিয়ে দিয়েছে বলে/ আক্রোশে ছুটে এলে!’

কাব্যগ্রন্থের নাম-কবিতা ‘মার্কস যদি জানতেন’-এ রাষ্ট্রের অধিবাসীদের প্রতি নান্দনিক খেদ প্রকাশ করেছেন। আগের নির্ভয় দিনগুলোকে প্রথমে তিনি তুলে ধরে পরে বর্তমান বাস্তবতাকে পঙ্ক্তিমালার পর্বে পর্বে এঁকেছেন। পরে ফের ফিরেছেন কালজয়ী মার্কসের কাছে। বলেছেন- ‘মার্কস যদি জানতেন/ অন্ধকারেও কত কাণ্ড ঘটছে রোজ।’ আর শুরুতে নির্ভয় দিন এঁকেছেন এভাবে- ‘বড় ভালো ছিল সেই প্রেমিকাসকল/ খুব ভোরে স্নান করে নিত- হেসে খেলে/ ওরা ধোয়াজামা গায়ে খোলা ময়দানে যেত।’

কবি কবিতার প্রতি দায় রেখেছেন। বলেছেন কবিজীবনের কথা। সোচ্চার হয়েছেন শব্দবুলেট ছুড়তে। সচেষ্ট হয়েছেন জোরালো বক্তব্যের মাধ্যমে কবিত্বের নিজস্ব সত্তা ঘোষণায়। তিনি লিখেছেন- ‘যদি অব্যাহত বেঁচে থাকি/ শ্বাস নিই গ্যালন গ্যালন;/ প্রতিটি রক্তফোঁটা থেকে শব্দ জন্মাবে আর/ গহিন থেকে বেরুবে নির্ভীক সিরাজ সিকদার।’ এ দৃঢ়তা কবিকে কাব্যসময়ের সিঁড়িতে কাল ধরে রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।

‘বাঘ’ লেখাটি একটি চমৎকার অণুগল্প হতে পারত। লেখাটি সমাজের দর্পণ বটে। সত্য ও ন্যায়ের মলিন প্রচ্ছদে উঠে এসেছে আলো ও কালোর পার্থক্য। যদিও কবিতা হিসেবেই উপস্থাপিত হয়েছে। সব মিলিয়ে গ্রন্থটি পড়ে আমার মনে হয়েছে- কবি সাম্য রাইয়ান সময়ের বিপরীতে হাঁটা শব্দসাধক। যা তাকে বিশেষত্ব দিচ্ছে, পরেও দেবে বলে বিশ্বাস।

 
Electronic Paper