ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কবিতায় বসন্ত অনুরাগ

অলোক আচার্য
🕐 ১২:১৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২০

হয়ত বা সব ফুল এখনো ফোটেনি, হয়তো সব কোকিল এখনো ডাকেনি, হয়ত কোনো প্রেমিক হৃদয় আজও তার প্রেমিকাকে খুঁজে পায়নি। তবুও সময়ের পরিক্রমায়, কালের নিয়মে বসন্ত এসেছে ধরায়। ধরণীর পরে আজ ঋতুরাজের আগমন ঘটেছে। তাই ‘ফুল ফুটুক, আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’ কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা কবিতায় বসন্তের চিরচেনা শাশ^ত রূপ ফুটে উঠেছে।

আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে, কবিতায় লিখেছেন- অতি নিবিড় বেদনা বনমাঝে রে/ আজি পল্লবে পল্লবে বাজে রে- দূরে গগনে কাহার পথ চাহিয়া/ আজি ব্যাকুল বসুন্ধরা সাজে রে। বসন্তের আগমনে প্রকৃতির অধীর আগ্রহের অবসান হয়। এ চঞ্চলতা শীতের জড়তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া। এ চঞ্চলতা কাউকে কাছে পাওয়ার। প্রকৃতির মিলনমেলায় ভালোবাসার পাখিরাও গান গেয়ে ওঠে। কোনো এক গাছের ডালে বসে কোকিল তার সঙ্গিনীকে খুঁজে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল স্বরে ডাকতে থাকে। কোকিলের ডাকে সাড়া দিয়ে হয়ত কোনো সাথীবিহীন কোকিলাও ছুটে আসে তার কাছে। বসন্ত হারানোর বেদনাও তাই প্রকট। বসন্তকে বিদায় জানানো কষ্টদায়ক।

বিশ্বকবির বর্ণনায়- ‘যে বসন্ত একদিন করেছিল কত কোলাহল/ লয়ে দলবল/ আমার প্রাঙ্গণতলে কলহাস্যে তুলে/ দাঁড়িয়ে পলাশগুচ্ছে কাঞ্চনে পারুলে/ নবীন পল্লবে বনে বনে...। বসন্তের প্রতীক্ষাও যে বড় কষ্টের। বসন্তের আগমনের জন্য আগেভাগেই প্রকৃতির কত আয়োজন। বসন্ত তবে প্রেমের দূত। কবিগুরুর ‘ওরে তোদের তর সহে না আর?’ কবিতায় বলেছেন- বসন্ত সে আসবে যে ফাল্গুন/ দখিন হাওয়ার জোয়ার জলে ভাসি/ তাহার লাগি রইলি নে দিন গুনে/ আগে-ভাগেই বাজিয়ে দিলি বাঁশি। বসন্ত নিয়ে কেবল কবিগুরুই মাতামাতি করেননি। মেতেছেন বহু কবি। সুফিয়া কামাল তার বাসন্তী কবিতায় বসন্তের আগমনে যে পরিপূর্ণতার পরিবর্তন হয় তাই ফুটিয়ে তুলেছেন।

তিনি লিখেছেন- আমার এ বনের পথে/ কাননে ফুল ফোটাতে/ ভুলে কেউ করতো না-গো/ কোনদিন আসা যাওয়া/ ...সেদিন ফাগুন প্রাতে/অরুণের উদয় সাথে/সহসা দিল দেখা/ উদাসী দখিন হাওয়া। যে পথে কেউ কোনদিন আসেনি, ফুল ফোটেনি তো সে হোক বনে অথবা মনে ফাগুনের আগমনের সাথে সাথেই সে পথ ফুলে ফুলে ভরে উঠতে থাকে। এই তো বসন্তের স্বকীয়তা। এখানেই সে ঋতুরাজ। নির্মলেন্দু গুণও লঘুচালে বসন্তের রূপের বন্দনা করেছেন ‘বসন্ত বন্দনা’ কবিতায়। তিনি লিখেছেন- হয়ত ফোটেনি ফুল রবীন্দ্রসঙ্গীতে যত আছে/ হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে/ বনের কুসুমগুলি ঘিরে। আকাশে মেলিয়া আঁখি/ তবুও ফুটেছে জবা, দুরন্ত শিমুল গাছে গাছে/ তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্ত পথিক। বসন্ত কেবল বাঙালি কবি সাহিত্যিকদের মনেই প্রভাব বিস্তার করেনি। বসন্ত শীতপ্রধান দেশেও তার রূপ দিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেছে। সে প্রভাব বাঙালির চেয়েও তীব্র। কারণ মনে হয় শীত যেখানে যত তীব্র বসন্তের অনুভূতি সেখানে তত তীব্র। শীতপ্রধান দেশে বসন্ত তাই জড়তা থেকে মুক্তির সময়কাল। সঙ্গে উচ্ছ্বাস আর প্রাণচাঞ্চল্য তো আছেই।

রবার্ট্র ফ্রস্ট তার ‘এ প্রেয়ার ইন স্প্রিং’ কবিতায় বসন্তের কাছে প্রার্থনা করেছেন- তুমি আমাদের পুষ্পের আনন্দ দাও, তুমি আমাদের ভালোবাসা দাও, ভালোবাসার চেয়ে ভালো কিছুই হয় না।’ আবার উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ তার প্রাক-বসন্তে লেখা কবিতায় বলছেন, ‘বসন্ত আসে স্বয়ং স্বর্গ থেকে, প্রকৃতি পবিত্রতায় পুষ্পিত হয় অতএব এখন শোক করবার সময় নয়।’

 
Electronic Paper