ভোলায় ইলিশের খরা
ছোটন সাহা, ভোলা
🕐 ৯:৫১ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৭, ২০১৮
ভোলার নদীগুলোতে ঈদের পর কিছু ইলিশ মাছ পাওয়া গেলেও এখন আর ধরা পড়ছে না। সারাদিন জাল ফেলেও মাছের দেখা পাচ্ছেন না জেলেরা। মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন জেলেরা। অভাব-অনটন আর অনিশ্চয়তার মধ্যে কাটছে তাদের দিন। পরিবার নিয়ে কেউ কেউ দুই বেলা ঠিকমতো খেতেও পারছেন না।
ইলিশ আহরণের বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য আড়ৎদার মো. আল-আমিন বলেন, ‘নদীতে ইলিশ সংকট এখনো কাটেনি, পানি বাড়লে কিছুটা মাছ বাড়ে, কিন্তু পানি কমে গেলে মাছও কমে যায়। তখন জেলেরা জাল ফেলেও মাছের দেখা পান না। গত কয়েকদিন ধরে শুধু আমবশ্যা-পূর্ণিমার জোর ওপর মাছ পাওয়া না পাওয়া নির্ভর করছে।’ তিনি বলেন, ‘ঈদের পর থেকে নদীতে কিছুটা মাছ পাওয়া যাচ্ছিল। তবে তা কাঙ্খিত পরিমাণ নয়। কারণ এ সময় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ার কথা, কিন্তু জালে মিলছে না ইলিশ। সারাদিন জাল ফেলেও মাছের দেখা পাচ্ছেন না জেলেরা। ইলিশ সংকট নিয়ে শুধু জেলেরা নয় লোকসানের মুখে রয়েছেন আড়ৎদাররাও।’
জেলেরা জানান, মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ইলিশ শিকার বন্ধ থাকার পর মে মাস থেকে শুরু হলেও গত দুই মাস ধরে নদীতে ইলিশ সংকট। এতে কষ্টে আছেন জেলেরা। ইলিশের আশায় নদীতে গিয়ে একদিকে যেমন তেল পুড়ছে, তেমনি জালও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। পাইকারি মোকামে এক কেজি ওজনের হালি প্রতি ইলিশ চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা, ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রামের প্রতি হালি দুই থেকে আড়াই হাজার, ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা এবং ঝাটকা হালি প্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভোলা সদরের তুলাতলী এলাকার জেলে বশির মাঝি বলেন, ‘ভোর ৫টা থেকে ১১টা পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টা নদীতে মাছ শিকার করে মাত্র ছয়টি ইলিশ পেয়েছি। যা বিক্রি করে সাত জেলের মধ্যে ১১০০ টাকা ভাগাভাগি করা হয়েছে।’ একই অবস্থা হারুন মাঝির। তিনিও জাল ফেলে পেয়েছেন মাত্র দুটি ইলিশ।
ভোলায় ১২৭টি মৎস্য ঘাট রয়েছে। এসব ঘাটকে কেন্দ্র করে জেলেদের জীবন জীবিকা। নদীতে মাছ ধরার পড়লে জেলেদের মুখে হাসি ফোটে, আর না পেলে মলিন মুখ। বশির মাঝি বলেন, ‘কয়েক দিন থেকে নদীতে ইলিশ মিলছে না।
এতে পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে চরম কষ্টে আছি। এনজিও থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে কিভাবে কিস্তির টাকা শোধ করব, কিভাবে পরিবারের মুখে খাবার জুটবে ভেবে পাচ্ছি না। কিছুতেই যেন অভাব কাটছে না। বশির মাঝির মতো একই অবস্থা সাত উপজেলার ৮০ হাজার জেলে পরিবারের।
তবে মৎস্য বিভাগ বলছে, গত তিন মাস ধরে ইলিশের সময়সীমা পরিবর্তন হয়েছে। তাই ইলিশ ধরা পড়ছে না। তবে গত বছরের তুলনায় এ মৌসুমে ইলিশের উৎপাদন একটু বেশি।
ভোলা সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মসদ আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এ মৌসুমের মে-জুন দুই মাসে ১৮ হাজার ৩৭৫ টন ইলিশ আহরণ হয়েছে। আগামী আগস্ট থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ ধরা পড়বে।’