ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জলে জন্ম, জলেই মৃত্যু

জসিম উদ্দিন, গলাচিপা (পটুয়াখালী)
🕐 ১:৪২ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৩১, ২০১৯

গোধূলির শেষ লগ্নের লালবর্ণ আকাশ যেমন পাল্টে দেয় সন্ধ্যা তারায়। একইভাবে কৃত্রিম আলোর পশরায় এক নিপুন সন্ধ্যা নেমে আসে বঙ্গোপসাগরের মোহনায়। সন্ধ্যা হলে শত শত প্রদীপের আলোতে আলোকিত হয়ে ওঠে বুড়াগৌরাঙ্গ, লোহালিয়া, রামনাবাদ, আগুনমুখা ও তেঁতুলিয়া নদীর তীর। ক্লান্ত চোখে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে নদীর পাড়ের দিঘল এই আলোর পশরায়। সভ্যতা থেকে ছিটকে পরা এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নাম মান্তা সম্প্রদায়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকার নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এই পরিবারগুলো এখন বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ এলাকায় বসবাস করছেন। বাংলাদেশের নাগরিক হলেও অন্যদের মতো মৌলিক চাহিদা মেটাতে অক্ষম এই জনগোষ্ঠী।

এদের প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা তো দূরের কথা, নাই স্বাস্থ্যসেবা অথবা পরিবার পরিকল্পনা এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি জানে না তারা। রোগ-বালাই সারতে দৌড়ে যায় স্থানীয় কবিরাজ, বৈদ্যের কাছে। জন্ম সূত্রে বাংলাদেশি অথবা মুসলিম দাবি করলেও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি থেকে রয়েছে তাদের প্রতি চরম অবহেলা। গ্রাম পর্যায়ে সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সাহায্য দেওয়া হলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ভূমিহীন অথবা নদীতে বসবাসকারীদের জন্য কোনো সাহায্য দেওয়া হয় না, তাড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তাদের।

শিক্ষা বলতে বাবা-মায়ের সঙ্গে শিশু-কিশোরদের মাছ ধরা অথবা মাছ ধরার কাজে সাহায্য করা। কথা হয় মান্তা জনগোষ্ঠী পরিবারের সদস্য আলেয়া বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার চরকাজল ইউনিয়নের আদিবাসী ছিলেন।

নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে শত বছর আগে তার পূর্ব পুরুষ চরকাজল ইউনিয়নের বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর কিনারে ঘাটি বাঁধে। তারপর থেকেই এই নদীর কিনারে তাদের বসবাস। সাগরের নোনা জল যেমন জীবন বাঁচায়, তেমনি সাগরের এক-একটি ঢেউয়ের সঙ্গে ক্ষয়ে যায় তাদের ছোট-ছোট স্বপ্ন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, জলে জন্ম, জলে মৃত্যু জলেই ভাসে জীবন।

 
Electronic Paper