রবিবার, ৩ আগস্ট ২০২৫,
১৯ শ্রাবণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

রবিবার, ৩ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: এনসিপি-ছাত্রদলের সমাবেশ আজ      নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কাটেনি      এক দফা ঘোষণা      চব্বিশের স্মরণে ২৪ দফা ইশতেহার দেবে এনসিপি      রোববার শাহবাগ এলাকা এড়িয়ে চলার অনুরোধ      ৫ আগস্ট বিকালে ঘোষণা হবে জুলাই ঘোষণাপত্র      জামায়াত আমিরের ওপেন হার্ট সার্জারি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন      
খোলাকাগজ স্পেশাল
ঘুরে ফিরে দুর্নীতিবাজরা গাজীপুর বনে সিন্ডিকেটে জিম্মি ভাওয়াল বন
তানজেরুল ইসলাম
প্রকাশ: সোমবার, ৩ মার্চ, ২০২৫, ১:১৫ পিএম
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

# বনে বদলি নীতিমালা উপেক্ষিত
# বেড়েছে বন দখল, গাছ কর্তন
# অপরাধ করেও অধরা তারা

জনবল সংকটের দোহাই দিয়ে বছরের পর বছর ধরে বন বিভাগের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গাজীপুরে কর্মরত আছেন। এতে অবাধে বন দখলের পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য। বেশ কয়েক বছর একই কর্মস্থলে কর্মরত থাকায় বনখেকোদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠেছে বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এতে উচ্ছেদ অভিযানে জটিলতা, বন দখল, অবাধে বনের গাছ কর্তন এবং পাচার হচ্ছে। বন দখলকারী বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে সীমানা নির্ধারণের নামে বন দখলের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এতে ক্ষোভ জানিয়েছে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনসহ পরিবেশ সচেতন মহল।

বদলি নীতিমালা ২০০৪ এর ৩ (ক) বন বিভাগের মাঠ পর্যায় লঙ্ঘন হচ্ছে কি না সেটি জানতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জোনায়েদ কবীর সোহাগ গত ২ ফেব্রুয়ারি প্রধান বন সংরক্ষককে (সিসিএফ) চিঠি দেন। চিঠি প্রদানের এক মাস পেরিয়ে গেলেও গাজীপুরে পুরাতন জনবল বদলি করার উদ্যোগ নেয়নি ঢাকা বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক হাসান ইউসুফ খান বলেন, পুরাতন জনবল বন বিভাগ বদলি করছে না এটিও দুর্নীতি এবং অনিয়মের পর্যায় পড়ে। এটি বদলি নীতিমালা সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বন বিভাগ কোনো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান নয় যে বদলি করা যাবে না। বদলি নীতিমালা করা হয়েছে বদলি করার জন্য। বন বিভাগেও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে। পুরাতন জনবল বছরের পর বছর একই কর্মস্থলে থাকলে স্থানীয় ভূমিদস্যুদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। এতে বনভূমি দখলের সুযোগ তৈরি হয়।

 জানা গেছে, ৫২ হাজার একরের বেশি বনাঞ্চল নিয়ে গাজীপুরের বনভূমি দেখভালের দায়িত্বে দুটি বিভাগ। বিভাগ দুটির মধ্যে পোস্টিংয়ে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং স্বজনপ্রীতির শীর্ষে ঢাকা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। বিগত ২০১২ সালে বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষা এবং বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল নিশ্চিতে বিভাগটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে পুরাতন জনবল দিয়ে বছরের পর বছর ধরে বিভাগটি পরিচালিত হওয়ায় এখন দুর্নীতির ডেরায় পরিণত হয়েছে। এসব দুর্নীতি কয়েকজন কর্মকর্তা মিলেমিশে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
 
অনুসন্ধান বলছে, ঢাকা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষকের (এসিএফ) দায়িত্বে ছিলেন মোজাম্মেল হোসেন। গত ২৯ জানুয়ারি তিনি এলপিআর-এ যান। বিগত দিনে তিনি গাজীপুর শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। পরবর্তীতে এসিএফ পদে পদোন্নতি পেয়ে গাজীপুরে এসিএফ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ডিমারকেশন বা সীমানা নির্ধারণের নামে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ, দুর্নীতিগ্রস্ত ফরেস্টারদের রক্ষা ও দুর্নীতিগ্রস্ত ফরেস্টার এবং কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের নামে তাদের রক্ষা, গাজীপুর ভাওয়াল বনের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণসহ বহুমুখী দুর্নীতির অভিযোগ ছিল এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। নানা অভিযোগ নিয়ে গত ২৯ জানুয়ারি তার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়।

তিনি এলপিআর-এ গেলেও তার নানা অনিয়মের অন্যতম সহযোগী গাজীপুর জাতীয় উদ্যান রেঞ্জের বাউপাড়া বিট অফিসার মো. আবুল কালাম সামসুদ্দিন, ভাওয়াল রেঞ্জের বারুইপাড়া বিট কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বহাল তবিয়তে কর্মরত আছেন। এ সিন্ডিকেটের ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করছেন বিকেবাড়ী বিট কর্মকর্তা কামরুজ্জামান মোল্লা।

বিগত ৫ আগস্ট পরবর্তী ভবানীপুর ও বাউপাড়া বিটে বনে নির্মিত শত শত বাড়িঘর ও পুরাতন কলকারখানাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। এই সিন্ডিকেটকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হাত থেকে রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন ভাওয়াল রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম। বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদের আশীর্বাদে গত ২১ ডিসেম্বর তিনি ভাওয়াল রেঞ্জ কর্মকর্তার দায়িত্ব নিয়েই নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। শহিদুল ইসলামকে বদলি নীতিমালা লঙ্ঘন করে একই সার্কেলে ৬ বছরের বেশি সময় ধরে রাখা হয়েছে।

অনুসন্ধান আরো বলছে, ঢাকা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এক দশকের বেশি সময় ধরে প্রতিষ্ঠাকালীর বিভিন্ন পদের জনবল গাজীপুরে কর্মরত রয়েছে। এতে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে ভাওয়াল বন। পুরাতন জনবলের মধ্যে বন্যপ্রাণী রক্ষক ছগির হোসেন, ফরেস্টগার্ড কামরুজ্জামান মোল্লা, নুর হোসেন, দেলোয়ার হোসেন ও নুরুল ইসলাম, মালী কাম গার্ড খায়রুল ইসলাম, জুনিয়র ওয়াইল্ড লাইফ স্কাউট রবিদাশ, হরিপদ মন্ডল, বাগানমালী কাম গার্ড আবুল কালাম, বাগানমালী হুমায়ুনসহ আরো অনেকেই।

বাউপাড়া বিট কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা ফরেস্টার মো. আবুল কালাম সামসুদ্দিন গত পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে একই কর্মস্থলে। অথচ বদলি নীতিমালা অনুযায়ী একই কর্মস্থলে সর্বোচ্চ তিন বছর চাকরির সুযোগ রয়েছে। ভাওয়াল রেঞ্জের ভবানীপুর বিট কর্মকর্তা নাছির উদ্দিনকে গত কয়েক বছর আগে ওই একই বিট থেকে বিভিন্ন অভিযোগে প্রত্যাহার করা হলেও পুনরায় ওই বিটে তাকে পদায়ন করা হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মো. ছানাউল্যা পাটওয়ারী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যারা গাজীপুরে কর্মরত আছেন তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই বিষয়টি তিনি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়েছেন। দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকলে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হয় বলেও তিনি জানান।

কেকে/এএস

মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

এনসিপি-ছাত্রদলের সমাবেশ আজ
নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কাটেনি
এক দফা ঘোষণা
ভেড়ামারায় বিদ্যুতায়িত হয়ে মা—ছেলের মৃত্যু
‘জনগণই খুনি হাসিনাকে গণভবন থেকে নামিয়ে এনেছে’

সর্বাধিক পঠিত

বাঞ্ছারামপুরের প্রভাবশালী আ.লীগ নেতা পঁচা দেলু গ্রেফতার
উখিয়ায় জামায়াতের পথসভায় জনস্রোত
মৌলভীবাজারে পৃথক দুর্ঘটনায় ২জনের মৃত্যু
‘শিল্পীর দূরদৃষ্টিতে ফেলনা বলতে কিছু নেই’
চাটমোহরে ভাঙা রাস্তা সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close