দীর্ঘদিন যাবত অব্যবস্থাপনা নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবির) নিজস্ব ওয়েবসাইট। ফলে এটি থেকে পাওয়া জরুরী সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ সেবা গ্রহীতাদের। তারা বলছেন কিছুদিন পরপর ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যাওয়াসহ সেবা পেতে নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হয়।বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইট
www.sust.edu । যেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি, ভর্তি পরীক্ষার আবেদন, ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট উত্তোলন, নিয়মিত বিজ্ঞপ্তি, একাডেমিক বিবরণী, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের যাবতীয় তথ্যাবলীসহ বিভিন্ন ধরণের সেবা নিয়ে থাকেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ (জাবি) দেশের প্রথম সারির অন্তত ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট উন্নয়নের দায়িত্ব পালন করছে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বা কম্পিউটার সেন্টারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে শাবিপ্রবিতে আইসিটি সেল ও কম্পিউটার ইনফরমেশন সেন্টার নামে দুইটি প্রতিষ্ঠান থাকলেও ওয়েবসাইট উন্নয়নের দায়িত্ব পালন করছে বাইরের একটি প্রতিষ্ঠান। এ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ জনবল না থাকায় উন্নয়নের কাজ করতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান।
জানা যায়, শাবির ওয়েবসাইটের উন্নয়নের দায়িত্বে রয়েছে ‘স্বপ্নলোক’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটগুলো ডেভেলপমেন্টের কাজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রতিষ্ঠান করে থাকলেও দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর এই বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটের ডেভেলপমেন্টের কাজ করছে বাইরের এই প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যেও অসন্তুষ্টি দেখা গেছে।
শাবিপ্রবির ওয়েবসাইট
www.sust.edu ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, কয়েকদিন পর পরই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারেন না। এছাড়া এটিতে প্রবেশ করতে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে এক পেজ থেকে অন্য পেজে প্রবেশে বিলম্ব, পেজ সঠিকভাবে কাজ না করা, সার্ভারে ত্রুটি, হিউমান ভেরিফিকেশন চাওয়া ইত্যাদি লেখা ভেসে উঠা। যা আগে লক্ষ্য করা যেত না।
ওয়েবসাইট নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনকারীরাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আবেদনকারী শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, গত ৫জানুয়ারি শুরু হয় শাবিপ্রবির ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন। তবে নির্ধারিত তারিখ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সংক্রান্ত ওয়েবসাইট
admission.sust.edu.bd তে ৭২ ঘন্টার বেশি সময় ধরে আবেদন করতে পারেননি তিনি।
এদিকে গত ২৫ জানুয়ারি ভর্তি আবেদন শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে অনেক শিক্ষার্থী আবেদন করতে না পারার ফলে আবেদনের সময়সীমাকে ৬ দিন বৃদ্ধি করে ৩১ জানুয়ারি করার সিদ্ধান্ত নেয় ভর্তি কমিটি।
ওয়েবসাইট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা যায়, ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের সময় আবেদনকারীদের অনেকে ভর্তি সংক্রান্ত ওয়েবসাইটের পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে থাকেন। অনেক শিক্ষার্থী একসাথে প্রবেশের চেষ্টার ফলে ওয়েবসাইটে ট্রাফিক জ্যামের সৃষ্টি হয়। যার ফলে ওয়েবসাইটে ধীরগতি ও প্রবেশ করতে না পারার মতো সমস্যাগুলো দেখা দেয়। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে হ্যাকাররা ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের চেষ্টা করার ফলে এ ধরণের সমস্যাগুলো সৃষ্টি হয় বলে জানান এ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
রসায়ন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জীবন সরকার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ব্যবহারে বরাবরই শিক্ষার্থীরা নানাবিদ সমস্যায় পড়ে থাকেন। কিছুদিন আগেও ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিচ্ছুরা আবেদন শুরু হওয়ার তিনদিন পর্যন্ত আবেদন করতে পারেননি। প্রতি সেমিস্টারে আমরা ক্রেডিট ও সেমিস্টার ফি দিতে সমস্যায় পড়ে থাকি। এছাড়া জরুরী মূহুর্তে ওয়েবসাইটে প্রবেশ না করার মতো সমস্যাগুলো দেখা দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আশিক কুমার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানতে অনেকে ওয়েবসাইট ব্যবহার করে থাকেন। তবে কিছুদিন পরপর এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে তাৎক্ষণিক সেবা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে সবাই যাতে সঠিক সময়ে সেবা নিতে পারেন এজন্য কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি।
এ বিষয়ে আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. সাহিদুর রহমান বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই স্বপ্নোলোককে ওয়েবসাইটটের কাজ দেওয়া ছিল। ‘কম্পিউটার ইনফরমেশন সেন্টার’ নেটওয়ার্ক ও ‘আইসিটি সেল’ সফটওয়্যার এবং সাপোর্ট সার্ভিস নিয়ে কাজ করে থাকে তবে ডেভেলপমেন্টের কাজ করে স্বপ্নোলোক। ওয়েবসাইট নিয়ে অনেক সমস্যার অভিযোগ আসছে- এ জন্য আমাদেরকে ওয়েবসাইট নতুন করে করতে হবে, যার ফান্ড প্রয়োজন। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা ১০ লক্ষ টাকার মতো ফান্ড চেয়েছি।
তিনি বলেন, আইসিটি সেলে আমাদের লোকবল খুবই কম কম্পিউটার প্রোগ্রামার আছে মাত্র ২ জন, যার ফলে ওয়েবসাইটের ডেভেলপমেন্টের মতো কাজ করা কঠিন। এখানে (সেলে) যে বেতন দেওয়া হয় তাতে কোয়ালিফাইড লোকও ধরে রাখা যায় না। গত কিছুদিন আগে দুইটা ছেলে চাকরি ছেড়ে চলে গেছে কারণ একটায় বেতন খুবই কম। সিস্টেম ডেভেলপ করার মতো ম্যান পাওয়ার আমাদের নেই, এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম খোলা কাগজকে বলেন, অভিযোগগুলো সত্য আমি ওয়েবসাইট আপডেট করার জন্য ‘আইসিটি সেল’কে বলেছি। জনবল বাড়াতে আমরা ইউজিসির কাছে আবেদন করেছি, আর্থিক অনুমোদন পেলে জনবল নিয়োগের ব্যবস্থা হবে। দক্ষ জনবল নিয়োগের পর ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টের কাজ যাতে নিজেরাই করতে পারি সেজন্য কাজ করে যাচ্ছি।
কেকে/এজে