বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫,
৬ ভাদ্র ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: মহানবী (সা.) এর সিরাতই তরুণদের চরিত্র গঠনের রোল মডেল: ধর্ম উপদেষ্টা       নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি টেকসই উন্নয়ন অর্জনের জন্য জরুরি      ডেঙ্গুতে একদিনে ৫ জনের মৃত্যু      ‘আমি সিক্স পার্সেন্টে কাজ করেছি’, উপদেষ্টা আসিফের প্রেস সেক্রেটারির অডিও ফাঁস      আবারো সংঘর্ষে ঢাকা-সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা      রাজসাক্ষী হতে চান পুলিশের উপপরিদর্শক শেখ আফজালুল      গাজা সিটি দখলে অভিযান শুরু ইসরায়েলের, নিহত ৮১      
বেগম রোকেয়া
অজ্ঞাত কারণে চাপা পড়ে আছে ফাইল
আবেদনের ১৪ বছরেও কলকাতা থেকে আনা হয়নি রোকেয়ার দেহাবশেষ
মুখ থুবড়ে পড়ে আছে রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র
হাসান আল সাকিব
প্রকাশ: সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯:৪৪ এএম আপডেট: ০৯.১২.২০২৪ ৯:৫৪ এএম
ছবি: প্রতিনিধি

ছবি: প্রতিনিধি

বাঙালির আধুনিক যুগের ইতিহাসে যে নারীর নাম গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয় সেই নাম হচ্ছে রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন ( বেগম রোকেয়া)।উনবিংশ শতকে নারীরা যখন অবরোধবাসিনী, সেই সময় নারীর পরাধীনতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন এই বেগম রোকেয়া।


এই উপমহাদেশে মুসলিম নারীর যে অগ্রগতি তা অর্জনে রোকেয়ার দর্শন ও কর্মময় জীবন অন্তহীন প্রেরণার উৎস হিসাবে কাজ করেছে।তার দেখানো পথে হেঁটে নারীরা আজ দেশের শীর্ষ পদ দখল করলেও পথপ্রদর্শকের জন্মস্থান রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ হলেও তাঁর মরদেহ পরে আছে ভারতের কলকাতার সোদপুর নামে অখ্যাত এক গ্রামে।  গেল প্রায় দেড় যুগে পরিবার দাবী  তুলেছিল সেখান থেকে তার মরদেহ ফিরিয়ে আনার।  কিন্তু সেই দাবী, চিঠি চালাচালিতে চাপা পড়ে আছে।


মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দে আছে স্বজন, বাবার পৈত্রিক জমিদারি সম্পত্তি, আতুর ঘর,বাবা-চাচার কবর ও স্মৃতিঘর। বছর ঘুরে এখানে সরকারি ভাবে পালন করা হচ্ছে জন্ম-মৃত্যু দিবস।  যাকে ঘিরে এত আয়োজন অথচ তিনি নেই এখানে।


জানা যায়, পায়রাবন্দ  গ্রামে ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বরে জন্ম নেন বেগম রোকেয়া। তবে ১৯৩২ সালের একই দিনে তিনি কোলকাতায় মারা যান। সেখান থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে পানিহাটির এক অখ্যাত গ্রাম সোদপুরে তাকে দাফন করা হয়। 


রোকেয়া অনুরাগীরা জানান, বেগম রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেনের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে জন্মভূমিতেই, এখানেই তাকে ধারণ ও চর্চা করা হয় । কিন্তু তাকে ফিরিয়ে আনার কার্যত কোন উদ্যোগ নেই।  


পরিবারের পক্ষ থেকে ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে পায়রাবন্দের  রোকেয়া মেলায় তার দেহাবশেষ এনে নিজ গ্রামে বাবার কবরের পাশে সমাহিত করার দাবি তুলেছিল পরিবার। তৎকালীন জেলা প্রশাসক বি এম এনামুল হক সেই দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে ২০১০ সালে তার পরিবার ও স্থানীয়দের বিভিন্ন দাবি সংবলিত একটি লিখিত আবেদন সরকারের সংস্কৃতি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়সহ বিভিন্ন  দপ্তরে পাঠান। এরপর দীর্ঘ সময়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। 


রোকেয়ার স্বজনদের অভিযোগ, ২০১০ সালে ডিসির আবেদনের পর প্রতি বছর আলোচনা হলেও দেহাবশেষ ফিরিয়ে আনতে কাগজে-কলমে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে ক্ষুব্ধ হয়েছেন তাঁর পরিবার স্বজন এবং রোকেয়া অনুরাগী। 


বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন,১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বরে কলকাতায় মৃত্যু হলে বেগম রোকেয়াকে কলকাতা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে গঙ্গা নদীর তীরবর্তী পানিহাটি গ্রামে দাফন করা হয়। তখন তাকে কলকাতায় দাফনে বাঁধা দিয়েছিল সেখানকার রক্ষণশীল মুসলিম সমাজ। 


শেষ পর্যন্ত বেগম রোকেয়াকে স্বামী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের বন্ধু ব্যারিস্টার আব্দুর রহমানের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।


তিনি বলেন,  সোদপুরের পানিহাটিতে তার কবরটি বহু বছর ছিল সবার অজানা। অনেকটা অবহেলিত অবস্থায়ই ছিল কবরটি।


মুখ থুবড়ে পড়ে আছে রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র 


রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দে নির্মিত স্মৃতিকেন্দ্রটি অযত্ন আর অবহেলায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে । তাই দিনে দিনে ক্ষোভ বাড়ছে রোকেয়া প্রেমী ও স্থানীয়দের মাঝে।


রোববার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে  মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দে গিয়ে দেখা যায় অন্ধকারে পড়ে আছে বেগম রোকেয়া স্মৃতি-কেন্দ্রটি।আর স্মৃতি কেন্দ্রে ঘুরতে এসে শিক্ষণীয় বা রোকেয়া সম্পর্কিত তেমন কিছু দেখতে না পেয়ে হতাশ রোকেয়া প্রেমীরা।


অন্যদিকে  সংরক্ষণের অভাবে রোকেয়ার জন্মস্থানের ধ্বংসাবশেষ ক্রমেই মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে। একটি জানালা ও কয়েকটি পিলার এখন পর্যন্ত মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।তবে স্মৃতিকেন্দ্রে ঝোপ-ঝাড় পরিস্কারসহ রাস্তাগুলো ঝেড়ে পরিস্কার করা হয়েছে।তিন একর ১৫ শতক জমির ওপর নির্মিত স্মৃতি কেন্দ্রটি ঘুরে দেখা যায় অনেক রুমের জানালার কাচ ভাঙ্গা। অনেক রুমের দেয়ালে পড়ে আছে শেওলা। সেই সঙ্গে ধুলোয় মোরানো ছিল রুমের ভিতরের জিনিসপত্র এবং আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন উপকরণ নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। 


স্মৃতিকেন্দ্রে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী সাউমুন জোবায়ের ছাকিন খোলা কাগজকে বলেন, রোকেয়ার বাড়িকে ঘিরে যে স্মৃতি কেন্দ্রটি করা হয়েছে এখানে ভবন আছে, অনেক রুম আছে, সবুজ গাছপালা আছে, পুকুর আছে লাইব্রেরী আছে।শুধু এসবেই সীমাবদ্ধ।  কিন্তু রোকেয়াকে জানার যে জায়গা, শেখার যে জায়গা সেরকম কিছু নেই।সৃজনশীল কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় নি এ স্মৃতি কেন্দ্রে।


আরেক দর্শনার্থী সুমাইয়া আফ্রিন বলেন, নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়ার স্মৃতি কেন্দ্রে রোকেয়ার একটি ভাস্কর্য ছাড়া দেখার কিছুই নেই।এখানকার লাইব্রেরীতে রোকেয়া সম্পর্কিত পর্যাপ্ত বইও নেই।


রংপুর পায়রাবন্দে বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলাল খোলা কাগজকে বলেন, ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দে জমিদার জহীরুদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার এবং রাহেতুন্নেসা সাবেরা চৌধুরাণীর কোল আলোকিত করে জন্ম নেন এই মহীয়সী নারী। রোকেয়ার সবকিছুই আছে পায়রাবন্দে। বেদখল হলেও আছে তার বাবার জমিদারি সম্পদ। বাবা-চাচার কবরও। 


তিনি বলেন, রোকেয়ার আতুরঘর এই গ্রাম। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। এখানে তাঁর নামে এখন একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানে তার জন্ম ও মৃত্যু দিনে অনেক কর্মসূচি পালন হয়। অথচ তার মরদেহ পড়ে আছে সীমান্তের ওপারে সোদপুরের পানিহাটি নামে এক অখ্যাত গ্রামে।


তিনি আরও বলেন, পায়রাবন্দে রোকেয়াকে জানার যে আগ্রহ,প্রত্যাশা নিয়ে মানুষ ছুটে আসে সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্রটি আরও সৃজনশীল ভাবে গড়ে তুলতে হবে।সেই সঙ্গে জন্মভিটার ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণ করতে হবে।


রোকেয়ার ভাতিজি রনজিনা সাবের বলেন,  রোকেয়ার সব কিছুই আছে পায়রাবন্দে। আমি নিজেই সেই সময় ডিসি এনামুল স্যারকে অনুরোধ করে বললাম রোকেয়ার দেহাবশেষ কলকাতা থেকে পায়রাবন্দে আনার জন্য। তিনি আগ্রহ দেখিয়েছেন। তিনি ঢাকায় আবেদন পাঠিয়েছেন বলে আমরা শুনেছি।


তিনি বলেন, তিনি যে আবেদন করেছিলেন তার কিছুদিন পর তার বদলি হয়। বিষয়টি নিয়ে অনেক খোঁজ নিয়েছি, অনেকবার বলেছি, অনেকবার। খোঁজ নিলেই বলে, প্রক্রিয়াধীন আছে। পরে কী হইল, তাও জানি না। বছর বছর ডিসেম্বর আসে, আর আলোচনা হয়, কিন্তু কাজ হয় না।


রংপুর জেলা প্রশাসক  রবিউল ফয়সাল বলেন, বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ পূর্ণ। আমরা এই বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে জানাবো।


কেকে/এইচএস

আরও সংবাদ   বিষয়:  দেহাবশেষ   বেগম রোকেয়া   কলকাতা   
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকা চেম্বারের সভাপতির সৌজন্য সাক্ষাৎ
চীনের এক্সিম ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শ্রম উপদেষ্টার বৈঠক
তিস্তা নদীর বুকে ভেসে আসা নবজাতকের লাশ উদ্ধার
খাদ্য উপদেষ্টার সাথে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রীর সাক্ষাৎ
মহানবী (সা.) এর সিরাতই তরুণদের চরিত্র গঠনের রোল মডেল: ধর্ম উপদেষ্টা

সর্বাধিক পঠিত

‘আমি সিক্স পার্সেন্টে কাজ করেছি’, উপদেষ্টা আসিফের প্রেস সেক্রেটারির অডিও ফাঁস
জয়পুরহাটে বজ্রপাতে আলু ব্যবসায়ীর মৃত্যু
নবীগঞ্জে সিএনজি পাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, ১২ গাড়ি পুড়ে ছাই
জামালপুরে পূবালী ব্যাংকের সহযোগিতায় আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন
কেশবপুরে ৪৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জলাবদ্ধ, ব্যাহত শিক্ষা কার্যক্রম

বেগম রোকেয়া- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close