দিনে তিন বেলার জায়গায় একবেলা খাইয়াও দিন কাটাইছি। আটজনের সংসারে সবার পাতে খাওন দিয়া থাকলে খাইছি। সেইসব দিনের কথা ভাবলেও কষ্ট লাগে- ফরিদা বেগমের সেইসব কষ্টের দিনও এখন ফিকে হয়ে এসেছে। অভাবী সেই মানুষটি আজ সফল খামারি।
শূন্য থেকে শুরু করে হয়েছেন লাখপতি। কঠোর পরিশ্রম ও নিরন্তর চেষ্টায় গড়ে তুলেছেন ছোট্ট একটি গৃহপালিত পশুপাখির খামার। যে খামার ঘুরিয়েছে তার ভাগ্যের চাকা। খামার থেকে প্রতি মাসে মুনাফা করছেন এক থেকে দেড় লাখ টাকা।
জেলার সদর উপজেলার ফতুল্লা থানাধীন দেলপাড়ার বাসিন্দা আজিজ মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৩৭)। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বিয়ে করে স্বামী আজিজ মিয়ার সঙ্গে যশোর থেকে নারায়ণগঞ্জে পাড়ি জমান। এরপর একে একে চার সন্তানের মা হয়েছেন। স্বামীর চায়ের দোকানের আয়ে শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের ভরণপোষণ ছিল কষ্টসাধ্য। আয়ের চেষ্টা করেও সফলতার ছোঁয়া পাননি। তবুও দমে যাননি। অবশেষে গৃহপালিত পশু-পাখি পালন করে হয়ে উঠেছেন একজন আত্মনির্ভরশীল নারী।
নিজস্ব জমি নেই ফরিদা বেগমের। ফতুল্লার দেলপাড়ায় একটি ভাড়া বাড়ির এক অংশে তিনি পরিবার নিয়ে বাস করেন। অন্য অংশে গড়ে তুলেছেন গৃহপালিত পশু-পাখির খামার।
ফরিদা বেগম বলেন, ‘ঘরে দুই টাকা বাড়তি আনার জন্য অনেক কাজ করছি। কিন্তু কোনো লাভ হয় নাই। পরে একদিন সিরাজগঞ্জের এক ভাই আমারে কইলো, আপনে গরু পালেন, পালতে পারলে লাভ আছে। ওনারে আমি চিনতামও না। অপরিচিত একটা মানুষরে কেমনে টাকা দেই! আমার জামাই মত দিতাছিল না। আমার বড় মাইয়া কয়, আম্মু দেও টাকা, মনে করো এটা আমাগো ভাগ্যের খেলা। হয় হারমু, নয় জিতমু। পরে ৪০ হাজার টাকা কিস্তিতে ঋণ নিয়া সিরাজগঞ্জের খোকন ভাইরে দেই। গরু নিয়া সেই দিন রাতেই আওনের কথা আছিল। দুইদিন পাড় হলেও সে আয়ে না।
চায়ের দোকানের টাকায় সংসার চলে না। কিস্তি দিমু কেমনে? টেনশনে টেনশনে খালি কানছি। তিন দিন পর রাইতে দুইটা বাছুর নিয়ে আইসে। বাছুর পাইয়া কি যে খুশি হইছিলাম! এক মাস বারো দিন পর বাছুরগুলা বিক্রি করে ৩২ হাজার টাকা লাভ হইছিল। এটা দেইখা মাইয়ার বাপেও কয়, ‘গরুতে লাভ ভালোই হয়। সারা বছর কামাইয়াও তো এত টাকা একসঙ্গে জমাইতে পারি না আমরা।
কেকে/ এমএস