বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫,
২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: আন্দোলনরত শিক্ষকরা কাজে না ফিরলে আইনি ব্যবস্থা      রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইসিকে তফসিল দেওয়ার আহ্বান নাহিদের      খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে প্রধান উপদেষ্টা      অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধে জিরো টলারেন্স নিশ্চিত করতে হবে : উপদেষ্টা ফরিদা      প্রবাসীরা ৬০ দিনের বেশি দেশে থাকলে ফোন রেজিস্ট্রেশন করতে হবে      এভারকেয়ারের পাশে সেনা-বিমান বাহিনীর মহড়ায় বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ      শীত নিয়ে দুঃসংবাদ দিলো আবহাওয়া অধিদপ্তর      
বেগম রোকেয়া
শত নারীর অনুপ্রেরণা সোহানী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১১:১৮ এএম
সোহানী হোসেন

সোহানী হোসেন

ক্যানসারে যেদিন স্বামীর মৃত্যু হলো, সেদিন ছিল বড় মেয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষা। ড্রয়িংরুমে কফিনে তখন স্বামীর নিথর দেহ। শোক আর দায়িত্বের মাঝখানে দাঁড়িয়ে মেয়েকে সোহানী হোসেন বলেছিলেন, ‘জীবন ও সময় কারো জন্য থেমে থাকে না।’ এ কথা শুনে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল মেয়ে। ফিরে এসে কফিন ছুঁয়ে শেষবারের মতো বাবার মুখ দেখেছে মেয়ে।

নিজের জীবনের গল্প বলতে বলতে এভাবেই অনেক বছর আগের এক শোকের সকালে ফিরে গেলেন সোহানী হোসেন। তখন সোহানীর পাঁচ মেয়ের সবচেয়ে ছোট মেয়ের বয়স ছিল মাত্র দুই বছর দুই মাস।

সোহানী বলেন, মেয়ে তখন আমি বেরোলেই কাঁদত। বাইরে যাওয়ার জন্য রাখা কাপড় দেখলেই কান্নাকাটি শুরু করত। শৈশবটা দেখতে পারিনি ওর। একসময় দেখলাম, ওর কান্না বন্ধ হয়ে গেছে, ও কাঁদতে ভুলে গেছে। অথচ এখনো স্বপ্নে দেখি, আমার এই মেয়ে খুশিতে দৌড়াচ্ছে, খেলছে।’

সোহানীর স্বামী মোবারক হোসেন রত্ন- পাবনার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শুটার। তার মৃত্যুর পর সংসার ও ব্যবসার সব দায়িত্ব এসে পড়ে সোহানীর কাঁধে। স্বজনদের সঙ্গে পারিবারিক সম্পত্তির মামলা, পাঁচ মেয়েকে একা বড় করাসহ ব্যবসার জটিলতা-সবই সামলাতে হয়েছে একা হাতে। ২০১২ সালে নিজের শরীরে ধরা পড়ে স্তন ক্যানসার। এরপর শুরু হয় সোহানীর আরেক যুদ্ধ। চিকিৎসা চলেছে, জীবনও চলেছে। চলেছে ব্যবসায়ের লড়াইও। সোহানীর বিশাল পরিসরের এই রিসোর্টের চারপাশে সবুজ আর শৌখিনতার ছোঁয়া। পাবনাবাসীর বিনোদনের জায়গায় পরিণত হয়েছে রিসোর্টটি। বিকালে টিকিট কেটে অনেকেই এখানে আসেন সময় কাটানোর জন্য। রূপকথা ইকো রিসোর্ট ছাড়াও স্বামীর নামে নামকরণ করা জালালপুরের রত্নদ্বীপ রিসোর্টেরও মালিক সোহানী। ঢাকাসহ অন্যান্য জায়গা থেকে অতিথিরা পাবনা গেলে বেশির ভাগই এ দুটি রিসোর্টে থাকেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

মেয়েরা বড় হয়েছে নিজেদের যোগ্যতায় : 

স্বামীর মৃত্যু আর নিজে ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করার পাশাপাশি সবকিছুই সামলাচ্ছেন সোহানী। মেয়েরা কে কী করছেন, এই প্রশ্নে তার মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে।

সোহানী বলেন, পাঁচ মেয়ের মধ্যে তিনজন বর্তমানে দেশের বাইরে থাকেন। মেয়েরা নিজের যোগ্যতায় বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করেছে এবং করছে।

সোহানীর বড় মেয়ে ফাইকা লাজ বন্তী (সেমন্তী) ফার্মাসিস্ট। তিনি ক্যানসার বিষয়ে এমএসসি ও পিএইচডি করেছেন। অনিন্দিতা লাজ বন্তী (রুপন্তী) স্থপতি। ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রভাষক; বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিসৌরি কলম্বিয়াতে পিএইচডি করছেন। মহিতন হোসেন অন্বেষা লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএলবি) করেছেন। তিনি বর্তমানে আইন পেশার পাশাপাশি মায়ের সঙ্গে ব্যবসাও দেখাশোনা করেন। খাদিজা হোসেন অড়লা যুক্তরাজ্যের ইউডব্লিউই ব্রিস্টলে আইন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ইউডব্লিউই ব্রিস্টল ছাত্র ইউনিয়নে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টানা দুইবার ভিপি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। আর ছোট মেয়ে মেফতা-উল-জান্নাহ আনহা এবার এইচএসসি পাস করেছেন। স্বপ্ন দেখছেন পাইলট হওয়ার।

সোহানী হোসেন বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর শ্বশুরবাড়ির মানুষদের বিরুদ্ধে আদালতে যেতে হয়েছে, কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। তবে তিনি থেমে যাননি। বিভিন্ন মামলা এখনো চলমান। তিনি শুধু মেয়েদের বলতেন, ‘মানুষ হতে হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। মেয়েদের বড় করার পাশাপাশি নিজের স্বপ্নের বিস্তার ঘটিয়েছেন সোহানী। শুধু রিসোর্ট নয়, শহরের পুরোনো ‘রূপকথা’ সিনেমা হলেরও মালিক তিনি। এর পাশেই গড়ে তুলেছেন কফি পারলার ‘রূপকথা কাব্য’, যেখানে কফির টেবিলের পাশে আছে বই পড়ার জায়গা। রত্নদ্বীপ রিসোর্টের সামনে তৈরি করেছেন ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’। 

কল্লোল লাহিড়ীর উপন্যাস ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ অবলম্বনে ভারতের একটি ওয়েব সিরিজ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ২০২৩ সাল থেকে সোহানী হোসেনের এই ভাতের হোটেলও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই হোটেলে কুমড়া ফুলের বড়া, বিউলির ডাল, ছ্যাঁচড়া, আম-তেল, মালপোয়া, চিংড়ির হলুদ গালা ঝোল, চন্দ্রপুলি, কচুবাটাসহ বিভিন্ন খাবার রান্না হচ্ছে ভোজনরসিকদের জন্য।

মন খারাপে শুরু :

বিয়ের আগে সোহানী রাজনীতি, সংগঠন, থিয়েটার, খেলা, লেখালেখি- অনেক কিছুর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিয়ের পর একদিন স্বামী তাকে নিয়ে ঘুরতে গেলেন। তিনি ভেবেছিলেন, হয়তো কোনো সুন্দর জায়গায় নিয়ে যাবেন, যেখানে গেলে মন ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু স্বামী তাকে নিয়ে গেলেন পাবনা মানসিক হাসপাতালে। সেদিন ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল তার। সেদিনের সেই অভিজ্ঞতা সোহানীর ভেতরে নতুন বোধের সৃষ্টি করে। তখনই ভাবেন, পাবনায় এমন কিছু করবেন, যেখানে গেলে মানুষের মন ভালো হয়ে যাবে। রূপকথা ইকো রিসোর্ট সেই ভাবনারই প্রতিফলন। 

তিল তিল করে ব্যবসায়ের পরিসর বাড়িয়েছেন উল্লেখ করে সোহানী বলেন, মনোবল, সাহস আর ভেঙে না পড়া-এই তিন মূলমন্ত্রকে সঙ্গে নিয়ে পথ পাড়ি দিচ্ছেন তিনি। 

সোহানী আরও বলেন, রূপকথা সিনেমা হল লাগোয়া এখন যে জায়গায় রূপকথা কাব্য কফি পারলার, সেই জায়গা পরিত্যক্ত ছিল। পাবনার মেয়ে অভিনেত্রী মহানায়িকা সুচিত্রা সেন রূপকথা সিনেমা হলে চলচ্চিত্র দেখেছেন। প্রবীণেরা এখনো সে স্মৃতিচারণা করেন। ভেবেছিলেন, তাদের বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য একটা জায়গা হলে মন্দ হয় না। আবার এখানে বসে বইও পড়তে পারবেন। সেই ভাবনায় তৈরি হয়েছে কফি পারলার।

কেকে/এমএ

আরও সংবাদ   বিষয়:  নারীর অনুপ্রেরণা   সোহানী হোসেন  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

হামজা-শমিতদের ম্যাচ থেকে ৪ কোটির বেশি আয় বাফুফের
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে যোগ দিলেন ভারতের বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার
চিরিরবন্দরে বাস–ভ্যান সংঘর্ষে নিহত ২
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ৩
দশমিনায় মৎস্য মেরিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

সর্বাধিক পঠিত

বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বান্দরবানে প্রার্থনা সভা
সাভারে টিভি সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরসি'র আত্মপ্রকাশ
ফটিকছড়িতে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান
চিরিরবন্দরে বাস–ভ্যান সংঘর্ষে নিহত ২
বিএনপি নেতার পুকুরে বিষপ্রয়োগ
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close