বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫,
২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: আন্দোলনরত শিক্ষকরা কাজে না ফিরলে আইনি ব্যবস্থা      রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইসিকে তফসিল দেওয়ার আহ্বান নাহিদের      খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে প্রধান উপদেষ্টা      অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধে জিরো টলারেন্স নিশ্চিত করতে হবে : উপদেষ্টা ফরিদা      প্রবাসীরা ৬০ দিনের বেশি দেশে থাকলে ফোন রেজিস্ট্রেশন করতে হবে      এভারকেয়ারের পাশে সেনা-বিমান বাহিনীর মহড়ায় বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ      শীত নিয়ে দুঃসংবাদ দিলো আবহাওয়া অধিদপ্তর      
খোলাকাগজ স্পেশাল
লাগামহীন বক্তব্যে নীরব জামায়াত
শিপার মাহমুদ
প্রকাশ: শনিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৫, ৮:৫৭ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

দেশের অন্যতম ধর্মভিত্তিক রাজনীতিক দল জামায়াতে ইসলামী। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজনীতিতে নতুন করে সক্রিয় হয় দলটির কার্যক্রম। এরপর থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনায় আসেন দলটির নেতারা। তবে সাম্প্রতিক দলটির নেতাদের বিতর্কিত- লাগামহীন ও উসকানিমূলক বক্তব্য যেন বেড়েই চলছে। 

কখনো প্রশাসনকে ‘আন্ডারে’ নেওয়ার ঘোষণা, কখনো নিজেকে ‘গার্ডিয়ান অব চিটাগাং’ বলে দাবি, আবার কখনো থানার ওসিকে শিবির-জামায়াতের লোক দিয়ে ‘সহায়ক পুলিশ’ সরবরাহের প্রস্তাব দিয়ে সমালোচনায় জড়াচ্ছেন দলটির নেতারা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, ‘নবীজি সাংবাদিক ছিলেন’ ধরনের বক্তব্য এবং ‘রোজা-পূজা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ’ মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক। এর মধ্যেই গতকাল ঢাকার একটি সমাবেশে লাল-সবুজ রঙের কার্পেট-সজ্জা নিয়ে উঠেছে স্বাধীনতার প্রতীক অবমাননার অভিযোগ। পরপর এসব ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠলেও দলীয় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যাচ্ছে কেবল সতর্কতা ও শোকজ। ফলে প্রশ্ন উঠেছে- দলীয় নেতৃত্বের উদাসীনতার কারণেই কি দলটির নেতারা এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। 

বিশেষ করে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ও দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীর ‘বিতর্কিত’ বক্তব্য থামছেই না। সভা-সমাবশে ও গণমাধ্যমে দিচ্ছেন একের পর এক লাগামহীন ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য। যা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ নিয়ে জনমনে তৈরি হচ্ছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া, বাড়ছে আলোচনা-সমালোচনা। 

সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরের জিইসি কনভেনশন সেন্টারে জামায়াতের চট্টগ্রামের নির্বাচনি দায়িত্বশীলদের সমাবেশে এক বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন শাহজাহান চৌধুরী। বক্তব্যে দিতে গিয়ে তিনি বলেন- ‘প্রশাসন আমাদের কথায় উঠবে-বসবে এবং গ্রেপ্তার করবে’, এরপর মুহূর্তেই এই বক্তব্যটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। যা শেষ পর্যন্ত আলোচনায় ‘টক অব দ্য কান্ট্রিতে’ পরিণত। এরপর বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে তার গ্রেফতারের দাবি জানান দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি। একই সঙ্গে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়- বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। এ ছাড়া আমার বাংলাদেশ পার্টিসহ (এবি পার্টি) কয়েকটি রাজনৈতিক দল তার এই বক্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এরপর জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে জানানো হয়- এই বক্তব্যটি শাহজাহান চৌধুরীর একান্তই ব্যক্তিগত, এর সঙ্গে দলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এরপর বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা বাড়তে থাকলে শেষ পর্যন্ত তাকে শোকজ করা হয়। 

এদিকে ‘প্রশাসন আমাদের কথায় উঠবে-বসবে এবং গ্রেপ্তার করবে’- এমন মন্তব্যের সমালোচনার রেশ কাটতে না কাটতে জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরীর আরেকটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই বক্তব্যে তাকে বলতে শোনা যায়- এক বছর কাজ করার জন্য শাহজাহান চৌধুরীকে ড. ইউনূস ‘গার্ডিয়ান অব চিটাগাং’ ঘোষণা করেছেন। যা নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের বইছে সমালোচনার ঝড়। 

এ ছাড়া চট্টগ্রামের মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সঙ্গে চট্টগ্রাম-১ আসনে (মিরসরাই) জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমানের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এতে শোনা যায় জামায়াতের ওই নেতা ওসিকে বলছেন- ‘আপনি যদি লজিস্টিক সাপোর্ট চান, আপনার পুলিশের সঙ্গে সহকারী হিসেবে যদি মনে করেন সহায়ক পুলিশ লাগবে, আমি শিগগির শিবির-জামায়াতের লোক দেব। যদি আপনারা মনে করেন যে, গোয়েন্দার লোক লাগবে, আপনি ইউনিয়ন ভিত্তিতে গোয়েন্দা টিম গঠন করেন, আমি স্পেশালি লোক সাপ্লাই দেব।’ 

গতকাল তার কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিডিওটি ২০ নভেম্বর বিকেলে মিরসরাই থানা থেকে ধারণ করা হয়েছে। মিরসরাইয়ে ডাকাতির ঘটনা বন্ধের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ওসিকে এ কথা বলেন জামায়াতের প্রার্থী। 

এর আগে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে সমালোচনায় আসেন আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ও ধর্মীয় বক্তা আমির হামজা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ‘সম্মানহানিকর, ‘কুরুচিপূর্ণ ও মিথ্যা’ মন্তব্যের অভিযোগ তুলে তাকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছিল- সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান। গত ২৩ সেপ্টেম্বর পাঠানো ওই নোটিসে তাকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ‘জনসমক্ষে প্রকাশ্যে’ ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছিল। এরপর বিষয়টি তিনি ভুল স্বীকার করে গণমাধ্যমে কথা বলেন এবং দল থেকেও থাকে সতর্ক করা হয়েছে বলে জানান। 

ভাইরাল ওই ভিডিতে শোনা যায়- মুফতি আমির হামজা নিজেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে (শিক্ষার্থীদের) ‘মদ’ দিয়ে কুলি করতে দেখেছেন এবং ছাত্ররা শিক্ষকদের লাঠি দিয়ে পেটায়। 

আরেকটি সমাবেশে সাংবাদিকদের উদ্দেশে আমির হামজা বলেন, রাসুল মুহাম্মদকে (সা.) আল্লাহ তায়ালা নবী নাম দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। নবী মানে সংবাদ বাহক। সেই হিসেবে নবীজি সাংবাদিক ছিলেন। সেই বক্তব্যের কারণেও তাকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। এই বক্তব্যের আপত্তি জানান দেশের ইসলামি স্কলারসহ বিশিষ্টজনেরা। 

দলটির আরেক হেভিওয়েট নেতা ও বিশিষ্ট আইনজীবী শিশির মনির। তিনি তার নির্বাচনি এলাকায়- ‘রোজা ও পূজা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ’ মন্তব্য করে সমালোচনার জন্ম দেন। 

এদিকে এসব সমালোচনার পর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি মিয়া গোলাম পরওয়ারের সই করা এক নোটিসে শাহজাহান চৌধুরীকে শোকজের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, গত ২২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শাহজাহান চৌধুরী বলেন- নির্বাচন শুধু জনগণ দিয়ে নয়; বরং যার যার নির্বাচনি এলাকায় প্রশাসনের যারা আছেন, তাদের সবাইকে আমাদের আন্ডারে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, বসবে, গ্রেফতার করবে, মামলা করবে। তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে প্রশাসনের সর্বস্তরে তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। এমনকি কূটনৈতিক মহল থেকেও সরাসরি প্রতিক্রিয়া আসে। জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও পেশাদারত্বের বিরুদ্ধে এ ধরনের মন্তব্য দায়িত্বশীল রাজনৈতিক আচরণের পরিপন্থি। দলীয় গঠনতন্ত্র, নীতি ও আদর্শের বিরোধী বক্তব্য দেওয়ার কারণে সংগঠনের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। 

ইতিপূর্বে শাহজাহান চৌধুরীকে একাধিকবার সতর্ক করা হলেও তার আচরণে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি বলে নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনায় জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের নির্দেশে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস প্রদান করা হয়েছে। নোটিসে আরও বলা হয়, কেন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না; তা লিখিতভাবে জানাতে হবে আগামী ৭ দিনের মধ্যে। নির্ধারিত সময়ে সন্তোষজনক জবাব না পাওয়া গেলে দলীয় গঠনতন্ত্র ও শৃঙ্খলাবিধি অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

কেকে/এআর
আরও সংবাদ   বিষয়:  জামায়াত   বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

হামজা-শমিতদের ম্যাচ থেকে ৪ কোটির বেশি আয় বাফুফের
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে যোগ দিলেন ভারতের বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার
চিরিরবন্দরে বাস–ভ্যান সংঘর্ষে নিহত ২
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ৩
দশমিনায় মৎস্য মেরিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

সর্বাধিক পঠিত

বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বান্দরবানে প্রার্থনা সভা
ফটিকছড়িতে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান
চিরিরবন্দরে বাস–ভ্যান সংঘর্ষে নিহত ২
সাভারে টিভি সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরসি'র আত্মপ্রকাশ
বিএনপি নেতার পুকুরে বিষপ্রয়োগ

খোলাকাগজ স্পেশাল- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close