২৫ বছর আগের পুরনো দুঃস্বপ্ন আবারও ফিরে এল। ঘরের মাঠে টিম ইন্ডিয়া ফের টেস্ট সিরিজ়ে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডুবল। গত বছরই নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩-০ হারে ভেঙেছিল টানা ২৪ বছরের অদম্য রেকর্ড। আর মাত্র এক বছরের মাথায় ফের একই পরিণতি— এ বার প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। সাম্প্রতিক ইতিহাস যেন বারবার একই আঘাত হেনে চলেছে ভারতীয় ক্রিকেটে।
১৯৯৯-২০০০ সালে ভারত ঘরের মাঠে শেষ বার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়ে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল। এর ২৪ বছর পর ২০২৪-এ কিউয়িদের কাছে লজ্জায় মুখ পোড়ায় টিম ইন্ডিয়া। ফের ২০২৫ সালে প্রোটিয়াদের কাছে ২-০ টেস্ট সিরিজ়ে উড়ে গেল তারা। ইডেনে প্রথম টেস্টে টেস্টে ৩০ রানে হারের পর, গুয়াহাটিতে ৪০৮ রানের ভয়াবহ পরাজয়— ভারতীয় ক্রিকেট যেন লজ্জার ইতিহাসে বন্দি হয়ে পড়ল।
গুয়াহাটির যে পিচে প্রোটিয়া ব্যাটাররা ঝড় তুলেছিলেন, ঠিক একই মঞ্চে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা যেন ভয়ে কেঁপে উঠলেন। দুই ইনিংসে মিলিয়ে একজন ব্যাটার নিজের ছন্দ খুঁজে পাননি। কখনও বোলারদের নিখুঁত ডেলিভারিতে দিশেহারা, কখনও অকারণে আগ্রাসী হয়ে ভুল শট বেছে নিয়ে নিজের উইকেট ছুড়ে দিয়েছেন তাঁরা। যার খেসারত, লজ্জাজনক ভাবে সিরিজ়ে হোয়াইটওয়াশ দিতে হলো ভারতকে।
টস জিতে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা করেছিল ৪৮৯ রান। সাতে ব্যাট করতে নেমে তুলনামূলক ভাবে অনভিজ্ঞ সেনুরান মুথুস্বামী (১০৯ রান) হাঁকিয়েছিলেন সেঞ্চুরি, নয়ে নেমে বোলিং অলরাউন্ডার মার্কো জ্যানসেন শতরান না পেলেও, ৯৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছিলেন। আর জবাবে ব্যাট করতে নেমে ভারতের যশস্বী জয়সওয়াল সর্বোচ্চ ৫৮ রান করেছিলেন। এ ছাড়া ৪৮ রান করেছিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর। বাকিরা ২৫ রানও স্পর্শ করতে পারেননি। ভারতকে একা শেষ করে দেন ৬ ফুট ৮ ইঞ্চির জ্যানসেন।
নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে প্রোটিয়ারা ৫ উইকেট হারিয়ে ২৬০ করে বিরাট রানের বোঝা ভারতের মাথায় চাপিয়ে দেয়। ত্রিস্তান স্টাবস ৯৪ রান করে। টনি ডি জর্জি করেন ৪৯ রান। ভারতের জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ৫৪৯ রানের। সেই রান তাড়া করতে নেমে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস আরও একবার তাসের ঘরের মতোই ভেঙে পড়ে। প্রথম ইনিংসে আগুনে মেজাজে বোলিং করেন জ্যানসেন, আর দ্বিতীয় ইনিংসে সাইমন হারমারের বিধ্বংসী স্পেলে ভারত গুটিয়ে যায় মাত্র ১৪০ রানে। ব্যাটিং লাইনআপে প্রথম ছ’জনের মধ্যে একজনেরও রানও ১৫-তেও পৌঁছতে পারেননি। যশস্বী ফেরেন ১৩ করে, ৬ করেন কেএল রাহুল, সাই সুদর্শনের সংগ্রহ ১৪ রান।
সকলকে অবাক করে চার নামানো হয়েছিল কুলদীপ যাদবকে। কেন? এর কোনও ব্যাখ্যা নেই। হয়তো ফাটকা খেলতে চেয়েছিলেন ভারতীয় দলের হেড কোচ গৌতম গম্ভীর। আসলে ভারতের প্রথম ইনিংসে কুলদীপ মাত্র ১৯ রান করলেও, ১৩৪ বল খেলেছিলেন। মোদ্দা কথা, উইকেটে তিনি টিকে ছিলেন এবং টিমের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বল খেলেছিলেন। সেই সব কথায় মাথায় রেখেই মিডল অর্ডারের ধসের মাঝে কুলদীপকে প্রতিরোধ গড়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন গম্ভীর। তবে ভারতীয় কোচের এই পদক্ষেপ ফ্লপ প্রমাণিত হয়। ৩৮ বল খেলে ৫ রান সাজঘরে ফেরেন কুলদীপ। ২ করে ধ্রুব জুরেল। ঋষভ পন্থের সংগ্রহ ১৩ রান।
একমাত্র রবীন্দ্র জাডেজা সাতে নেমে হাল ধরেছিলেন। সে কারণেই ভারতের স্কোর ১০০ পার করে। তিনি একমাত্র প্লেয়ার যিনি হাফসেঞ্চুরি করেন। এই ইনিংসে ব্যর্থ হন ওয়াশিংটন সুন্দর। তিনি ১৬-তে আউট হন। নীতীশ কুমার রেড্ডিও ফ্লপ। তিনি তো শূন্যতে সাজঘরে ফেরেন। টেল এন্ডারে মহম্মদ সিরাজ (০) এবং জশপ্রীত বুমরাও (১ রান) কিছু করে উঠতে পারেননি। যার নিটফল, গুয়াহাটি টেস্টে হেরে ঘরের মাঠে লজ্জায় মুখ পোড়াল ভারত।
কেকে/এআর