ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে সোবহানিয়া ইসলামিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার প্রায় ৩৬০ শতক জমি এবং উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের চর শিবপুর মৌজার হালে বাদিয়ামারা চরের প্রায় ১১ শত বিঘা জমি বর্তমানে ভয়াবহ নদী ভাঙন ও বিলীন হওয়ার চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধ দলের একটি চক্র অবৈধভাবে নদীর চর কেটে ডজন খানেক নৌকায় করে বিভিন্ন ইটভাটায় সরবরাহ করে। ফলে সোবাহানিয়া মাদ্রাসার নিজস্ব ৩৬০ শতাংশ জমি এবং চরের বিস্তীর্ণ এলাকা দ্রুত ভাঙনের মুখে পড়েছে।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) মাটি কেটে নেওয়ার সংবাদে মাদ্রাসার শিক্ষকমণ্ডলী ভাঙন এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে পরিদর্শন করেন।
উপস্থিতি টের পেয়ে শতাধিক শ্রমিক ডজন খানেক মাটি কাটার বোট ও নৌকা নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। মাদ্রাসার জমি ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দেখে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা রুহুল আমীন আব্দুল্লাহ, ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ।
মাওলানা রুহুল আমীন আবদুল্লাহ বলেন, এই জমি শুধু মাদ্রাসার নয়—এটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষা করা আমাদের সকলের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব।
সোবহানিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি মোশাররফ হোসেন রিপন বলেন, মাটিখেকো একটি সন্ত্রাসী চক্র বহু বছর ধরে মাদ্রাসা ও সরকারি জমি লুট করে আসছে। দ্রুত তাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে বাঞ্ছারামপুর প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, ‘এই জমি হারিয়ে গেলে মাদ্রাসার সম্পদ, এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশসহ সবকিছুই চরম ঝুঁকিতে পড়বে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবৈধ মাটি ব্যবসার নেটওয়ার্কটি দীর্ঘদিন ধরে একটি কুচক্র মহলের মদদে সংগঠিতভাবে মাদ্রাসা, অসহায় সাধারণ মানুষ ও সরকারি জমির মাটি কেটে মোটা অঙ্কের টাকায় সেই মাটি বিক্রি করছে বিভিন্ন ইটভাটায়।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুরের মাদ্রাসা এলাকা ও বাদিয়ামারা চরসহ বহু জমি ইতোমধ্যে নদীর গর্ভে হারিয়ে যেতে শুরু করেছে।
এটি শুধুই স্থানীয় সংকট নয়; বরং বাঞ্ছারামপুর উপজেলাধীন সরকারি সম্পদ রক্ষার প্রশ্ন। মাদ্রাসাসহ এলাকার জনসাধারণের সম্পদের নিরাপত্তা, রক্ষা, পরিবেশ ও নদী ভাঙ্গন নিয়ন্ত্রণ এবং রোধ করতে না পারলে জাতীয় সম্পদ হুমকির মধ্যে পড়বে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. জামাল মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের চর ও মাদ্রাসার জমি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদের জমিগুলো মেঘনা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমরা চর শিবপুরের মানুষ এখন মারাত্মক বিপদের মধ্যে আছি।
এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌস আরা বলেন, আমি আজ বিষয়টি শুনেছি। লিখিত অভিযোগ এখনো পাইনি। মুলত ইটভাটার মালিকরা এই চোরাই মাটি কিনে ইট বানায়। আমি বিষয়টি তদন্ত করে কঠোর পদক্ষেপ নিব।
কেকে/ এমএস