সিলেটে বালুমহাল থেকে জব্দ করা বালু নিলামে বিক্রি নিয়ে গুরুতর অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। একই নিলামের পেপারস ব্যবহার করে আবারো বালু লুটপাটের সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবে বাজারদরের সঙ্গে বেশ অসামঞ্জস্য রেখে নিলাম ডাক সম্পন্ন করা হয়েছে। বালুর বাজারদর যেখানে ৫০ থেকে ৭৫ টাকা ঘনফুট। সেই বালু মাত্র দুই টাকা ফুট দরে বিক্রি করা হয়েছে। কয়েস আহমদ নামের এক ব্যক্তি এই বালু কিনেছেন। তিনি সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক। তার ভয়ে প্রশাসনের কেউ মুখ খুলছেন না। নিরুপায় হয়ে নিলামে অংশ নিতে না পারা এক ব্যবসায়ী দুদকের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন।
অভিযোগ, নিলামে যুক্ত কর্মকর্তাদের সঙ্গে সিন্ডিকেট এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পানির দামে বালু কিনেছেন এই নেতা। এতে সরকারের অন্তত ১৩ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। আজ রোববার বালুর ক্রেতাকে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে এই দুর্নীতি বন্ধ করতে গতকাল শনিবার দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নিলামে অংশ নিতে না পারা মো. এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া।
সরকারি নিলামের অনলাইন বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট ও জকিগঞ্জ, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বালুমহালবহির্ভূত এলাকা থেকে জব্দ করা বালুসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রকাশ্য নিলাম ডাক সম্পন্ন হয় ১৯ নভেম্বর। এর মধ্যে ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯৬ ঘনফুট ও ১১ লাখ ৭৮ হাজার ৯৯৯ ঘনফুট বালুর নিলাম ডাক হয়। বালুর বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী প্রায় ১৩ কোটি টাকার বালুর নিলাম ডাকে অংশ নেওয়ার কথা ছিল ৯ জন ব্যবসায়ীর। কিন্তু নিলাম ডাকের সময় অনুপস্থিত থাকেন আটজন। অংশ নেন কেবল কয়েস আহমদ।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, নিলাম ডাকের প্রথম বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বালুর দর প্রতি ফুট সাড়ে ৯ টাকা ডাক উঠেছিল। বাজারদরের সঙ্গে অসামঞ্জস্য থাকায় তখন দাম বাড়াতে দ্বিতীয় দফা নিলাম ডাক আহ্বান করা হয়।
গত ২২ অক্টোবর সেই নিলাম ডাকের নথি থেকে জানা গেছে, ৯ জন ব্যবসায়ী এতে অংশ নেন। সর্বোচ্চ দর ছিল সাড়ে ৯ টাকা। বাকিরা কোনো দর হাঁকাননি। দ্বিতীয় দফায় এসে দর নামে ৭ টাকা ৬০ পয়সা। সর্বশেষ দুই টাকা ৬৮ পয়সা। নিলাম ডাকসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বালু ৩৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে নিলাম ডাকের মধ্যে সরকারের প্রায় ১৩ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
সূত্র জানায়, কয়েস আহমদের সাথে যোগসাজশ ঘটিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করেছেন নিলাম কমিটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা (নাজির) ফাইজুল ইসলাম। তবে তিনি গতকাল খোলা কাগজকে বলেন, ‘প্রকাশ্য নিলাম ডাক হয়েছে। এখানে রাখঢাকের কিছু নেই। শনিবার (গতকাল) অফিস বন্ধ। এ সংক্রান্ত তথ্য নথিপত্র দেখে বলতে হবে। অফিস বন্ধ থাকায় ফোনে কোনো তথ্য দেওয়া যাচ্ছে না।’
এ বিষয়ে বালুর ক্রেতা সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক কয়েস আহমদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তার হোয়টসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
জানা গেছে, নিলাম ডাকে দর ঢাকতে দ্রুত সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দিয়ে ওয়ার্ক অর্ডার গ্রহণপূর্বক নিলামের বালু অপসারণ তথা ক্রেতার হেফাজতে নিতে ছয় মাস সময় চেয়ে আবেদন করেছে।
প্রথম দফার নিলামে অংশ নেওয়া বালু ব্যবসায়ীরা বলছেন, ছয় মাসের আবেদন মঞ্জুর হলে নিলামের বালু অপসারণের নামে বালু আহরণপূর্বক পুরো নিলাম ডাকের সমপরিমাণ বালু আহরণে সক্রিয় রয়েছে সিন্ডিকেটটি। এতে করে ১৩ কোটি টাকার বালুর সঙ্গে আরো প্রায় দ্বিগুণ বালু মিলিয়ে সরকারের প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার বালু লুটের তৎপরতা চলছে।
কেকে/এআর