বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫,
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: নির্বাচনী জোটের আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে : রাশেদ খান      গণতন্ত্র ফেরাতে নির্বাচনের বিকল্প নেই : আমান      সিসিইউতে খালেদা জিয়া      নিজের গড়া ট্রাইব্যুনালে হাসিনার বিচার হচ্ছে : রিজভী      প্লট দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফের ১৮ বছর কারাদণ্ড      প্লট দুর্নীতি : জয়-পুতুলের পাঁচ বছর কারাদণ্ড      শেখ হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড      
খোলাকাগজ স্পেশাল
সরকার-ব্যবসায়ী দ্বন্দ্বে মোবাইল মার্কেট বন্ধ
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫, ১০:২৯ এএম
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

রাজধানীর মিরপুর-১ এলাকা থেকে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ (এমবিসিবি)-এর সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ পিয়াসকে ১৮ নভেম্বর রাত ৩টার দিকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরিবারের সদস্যদের দাবি, পরিচয় দেওয়া ডিবি কর্মকর্তারা হঠাৎ বাসায় ঢুকে তাকে নিয়ে যান এবং এ সময় পিয়াসের মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়। এর আগে রাত ১২টার দিকে ডিবি প্রধান কথা বলবেন এই অজুহাতে ৫-৬ জন ডিবি সদস্য জোর করে সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। ডিবি হেফাজতে প্রায় ১০ ঘণ্টা রাখার পর সকালে তাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। তবে এখনো ডিবি হেফাজতে রয়েছেন আবু সাঈদ পিয়াস। যারা মিজানুর রহমানকে তুলে এনেছিলেন কিংবা ডিবির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও আটক-বিষয়ক কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।

এ ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে, সরকারের একজন উপদেষ্টার নির্দেশে রাতের আঁধারে তাদেরকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া মাত্র ৯ জন মোবাইল ব্যবসায়ীকে বিশেষ সুবিধা বা মনোপলি ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের টার্গেট করা হয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। 

অন্যদিকে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, অবৈধ আমদানিকারক চক্র ভিত্তিহীন অভিযোগ ছড়িয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা করছে। তিনি আরো দাবি করেন, সরকারের কেউ কারো ব্যবসায়িক স্বার্থে কাজ করছে- এমন অভিযোগ সত্য নয়। পরিস্থিতি নিয়ে তদন্ত চলছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাই করছে।

এ ঘটনায় মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী মহলে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই দ্রুত পিয়াসের অবস্থান নিশ্চিতকরণ ও মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। গতকাল বুধবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘এনইআইআর বাস্তবায়ন : মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করেন এমবিসিবি। সংবাদ সম্মেলন থেকে দেশের সব মোবাইল ফোন বিক্রির দোকান বুধবার থেকে বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি। 

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি পিয়াসকে আজকের (বুধবার) মধ্যে মুক্তি না দিলে সারা দেশে কঠোর আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়ে ‘দেশ অচল করে দেওয়ার’ হুমকিও দিয়েছেন।

এমবিসিবি কর্মসূচি ঘোষণার পরই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হঠাৎ করে মোবাইল মার্কেটগুলো বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই দোকান বন্ধ থাকায় মোবাইল মেরামত, রিচার্জ, আনুষঙ্গিক পণ্য ক্রয় এবং নতুন সেট কেনার প্রয়োজন নিয়ে আসা অনেকেই বিপাকে পড়েন। 

রাজধানীর বড়-ছোট অধিকাংশ মোবাইল মার্কেট বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্রেতারা। বিশেষ করে বসুন্ধরা সিটি মোবাইল মার্কেটসহ শহরের অন্যান্য বৃহৎ বাজারগুলোতে দুপুরের পর থেকেই ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেলেও ফটকের কাছে এসে জানতে হয় মার্কেট বন্ধ থাকার কথা। এতে নতুন মোবাইল কেনা, সার্ভিসিং বা জরুরি সমস্যার সমাধানে আসা বহু ক্রেতাই হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন।

একই পরিস্থিতি দেখা গেছে রাজধানীর মোতালেব প্লাজা ও ইস্টার্ন প্লাজাসহ মোবাইল ব্যবসার অন্যান্য কেন্দ্রেও। এসব বাজারে হঠাৎ করে দোকান বন্ধ থাকায় ক্রেতাদের পাশাপাশি অনলাইনভিত্তিক বিক্রেতা ও সার্ভিসিং-নির্ভর ব্যবসায়ীরাও সমস্যায় পড়েছেন। হঠাৎ করেই পুরো খাতজুড়ে এই অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী ক্রেতা ও সংশ্লিষ্টরা।

ডিবি থেকে মুক্তি পেয়ে সাংবাদিক মিজানুর রহমান সোহেল ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন- ‘আলহামদুলিল্লাহ। বিনা অপরাধে প্রায় সাড়ে ১০ ঘণ্টা ডিবি হেফাজতে থাকার পর তারা আমাকে স্বসম্মানে মাত্র বাসায় পৌঁছে দিয়েছে। গত রাত ১২টার দিকে ডিবি প্রধান আমার সঙ্গে কথা বলবেন, এই অজুহাতে ৫-৬ জন ডিবি সদস্য জোর করে আমাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। ডিবিতে নিয়ে আসামির খাতায় আমার নাম লেখা হয়। জুতা-বেল্ট খুলে রেখে গারদে আসামিদের সঙ্গে আমাকে রাখা হয়। কিন্তু কেন আমাকে আটক করা হলো? তা আমি যেমন জানতাম না, তেমনি যারা আমাকে তুলে এনেছিলেন বা ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও কিছু বলতে পারেননি। দীর্ঘ সময় পর বুঝতে পারলাম, সরকারের একজন উপদেষ্টার ইশারায় মাত্র ৯ জন মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীকে মনোপলি ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়ার জন্যই আমাকে আটক করা হয়েছিল। আমার সঙ্গে সংগঠনের সেক্রেটারি আবু সাঈদ পিয়াসকেও আটক করা হয়। তিনি এখনো ডিবি কার্যালয়ে আছেন।

বুধবার ন্যাশনাল ইক্যুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্টার (এনইআইআর) নিয়ে ডিআরইউতে মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ (এমবিসিবি)-এর প্রেস কনফারেন্স করার কথা ছিল। আমি সেখানে ছিলাম মিডিয়া পরামর্শক। সেই প্রেস কনফারেন্স বন্ধ করাই তাদের প্রধান টার্গেট ছিল। কিন্তু তাদের জন্য আফসোস, যে উদ্দেশ্যে তারা প্রেস কনফারেন্স বন্ধ করতে চাইল সেটা দেশের সবাই জেনে গেল। 

দেশের মুক্ত বাণিজ্য নীতির সঙ্গে এনইআইআর স্পষ্টতই সাংঘর্ষিক। প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে দেশে প্রতিযোগিতা কমিশনও রয়েছে। অথচ মাত্র ৯ জন ব্যবসায়ীকে সুবিধা দিতে সারাদেশে ২৫ হাজার মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীকে পথে বসানোর গভীর চক্রান্ত চলছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গ্রামের সাধারণ মানুষ, প্রবাসীসহ অনেকেই বিপদে পড়বেন। একটা চেইন ভেঙ্গে পড়বে। অনেক ব্যবসায়ী পথে বসে যাবে। জেনে রাখা ভালো, এই ৯ জনের একজন ওই উপদেষ্টার স্কুল-বন্ধু।

একটা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বললে সরকার কেন ভয় পায়? শুধুমাত্র প্রেস কনফারেন্স বন্ধ করতেই কি আমাকে গভীর রাতে জোর করে তুলে নিতে হলো? যারা মুখে ‘বাকস্বাধীনতা’র বুলি আওড়ান, তারাই কি আমাকে বাকরুদ্ধ করতে এই আয়োজন করলেন? মগের মুল্লুকে এই কি তবে বাকস্বাধীনতার বাস্তব চিত্র?

অন্যদিকে বুধবার প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব নিজের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে লিখেন- অবৈধ আমদানিকারকদের চক্র ভিত্তিহীন অভিযোগ ছড়িয়ে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করছে। তিনি সবাইকে এসব বিভ্রান্তিতে কান না দিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। দেশে কারো ব্যবহৃত কোনো মোবাইল সেট বন্ধ হবে না বলেও স্পষ্ট করেন তিনি। এমনকি দেশের বাইরে থেকে আনা মোবাইল সেটও সচল থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি আরো লিখেছেন, ‘একজন সাংবাদিককে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনায় আমাকে জড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে অপপ্রচার চলছে আজ সকাল থেকে। সবার আগে আমি স্পষ্টভাবে এবং জোরালো ভাষায় বলছি- ওই সাংবাদিককে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনায় আমার কোনো ধরনের ভূমিকা নেই। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

কেন এমন প্রচারণা চালানো হচ্ছে সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী লিখেছেন, ‘এখন কেন হঠাৎ করে এমন প্রচারণা চালানো হচ্ছে- সেই প্রেক্ষাপটটি পরিষ্কার করা প্রয়োজন।

বিটিআরসি সম্প্রতি অবৈধ মোবাইল ফোন আমদানি, চোরাচালান, চুরি, জালিয়াতি এবং শুল্ক ফাঁকিরোধে এনইআইআর চালুর ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশে বৈধভাবে ফোন উৎপাদনকারী বিনিয়োগকারীরা বহুদিন ধরেই এ উদ্যোগ চেয়ে আসছিলেন। আজ দেশে অ্যাপল ছাড়া প্রায় সব বড় বৈশ্বিক ব্র্যান্ডেরই কারখানা রয়েছে।’

এনইআইআর ঘোষণার পরপরই অবৈধ আমদানিকারক ও স্মাগলার সিন্ডিকেট বিভিন্ন মার্কেটে বহিরাগত দিয়ে বিক্ষোভ, দেশীয় ব্র্যান্ডের শোরুমে হামলা, কর্মচারীদের হুমকিÑ এসব তৎপরতা শুরু করে। তারা  এনইআইআর নিয়ে অনেক অপপ্রচারও করছে।

কেকে/ আরআই
আরও সংবাদ   বিষয়:  সরকার   ব্যবসায়ী   দ্বন্দ্ব  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ইটনায় জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, নিহত ১
নির্বাচনী জোটের আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে : রাশেদ খান
ফরিদপুরে পাটবীজ বিক্রয় তরান্বিতকরণ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
তিন ভাইয়ের মিশ্র বাগা‌নে কমলার বাম্পার ফলন
গণতন্ত্র ফেরাতে নির্বাচনের বিকল্প নেই : আমান

সর্বাধিক পঠিত

খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বান্দরবানে কুরআন খতম ও মাহফিল
কক্সবাজারে ৭ উপজেলায় ইউএনও রদবদল
কাপাসিয়ায় অবৈধ কয়লা চুল্লি পুনরায় চালু, পরিবেশ বিপর্যস্ত
শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের মামলার রায় আজ, আদালতে বিজিবি মোতায়েন
শেখ হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close