কি রে আবির, খেতে যাবি না?
স্কুল থেকে দুই বন্ধু বাড়ি ফিরছিল। মারুফের প্রশ্নে আবির প্রথমে দাঁড়িয়ে যায়। আবির প্রথমটায় বুঝতে পারে না মারুফ কোন দাওয়াতের কথা বলছে! ও তাই অবাক হয়ে জিজ্ঞ্যেস করে, কিসের দাওয়াত রে?
তুই জানিস না? তোকে দাওয়াত দেয়নি?
না তো! কিসের দাওয়াত?
কেন আজ যে অমিতের জন্মদিন! বিশাল পার্টি দিয়েছে বাড়িতে। বিশাল কেক কাটবে, বেলুন ফোলানো হবে, অনেক রকম মিষ্টি আর ভালো ভালো খাবারের আয়োজন আছে! আমাদের প্রায় সব বন্ধুদেরই তো বলেছে। তোকে বলেনি?
অমিতের জন্মদিনের কথা শুনে ওর মনটা খারাপ হয়ে যায়। আসলেই তো সবাইকে বলেছে, শুধু তাকেই বলেনি! কি আশ্চর্য! অবশ্য দাওয়াত দিলেই বা কি হতো? উপহার যে কিনবে সে ক্ষমতাই তো নেই। নুন আনতে পানতা ফুরায় তার পরিবারের। তার আবার জন্মদিনে দাওয়াত খেতে যাওয়া! মনে মনে বলে একদিক থেকে না বলে ভালোই করেছে অমিত। কি উপহার কিনতো বন্ধুর জন্য!
এসব কথা মনে আসলেও জন্মদিনে দাওয়াত না পাওয়ায় মনের ভিতরটা ঠিকই খচখচ করতে লাগলো। নিজের ওপর, বাবার ওপর রাগ হতে লগলো! কেন যে ওদের টাকা নেই! ওর সব বন্ধুদের বাবারাই তো বড়লোক। কেন এমন হবে? এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ি আসে। বিকেলে মাঠে খেলতে না গিয়ে আবির চলে গেলো মাঠের উল্টো দিকে জঙ্গলে। বেশ ঘন জঙ্গল। মেহগুনি, আকাশমনি আরও নানা জাতের মাথা উঁচু করা গাছগুলো দূর থেকে দেখলে ভয় হয়। এর ভিতরে কেউ সচরাচর যায় না। সাপ-খোপেরও ভয় আছে। কিন্তু আজ আবির চলে গেলো বনের অনেকটা ভিতরে। একটু ফাঁকা জায়গা দেখে একটা মোটা মেহগুনি গাছের নিচে বসে রইলো। ওর কান্না পাচ্ছে কিন্তু কাঁদতে পারছে না। কান্নার মতো কোনো কারণই তো নেই! দাওয়াত না দেওয়ার জন্য গলা ছেড়ে কাঁন্না করা যায় না। মাথা হাঁটুতে নামিয়ে বসে রইলো।
প্রায় ঘুমিয়েই গিয়েছিল হঠাৎ মনে হলো কেউ একজন ওর মাথায় হাত রেখে ডাকছে। এখানে ওকে কে ডাকবে? ওর বাবা কি খুঁজতে খুঁজতে এখানে চলে এসেছে! তা হয় কি করে? কাউকে তো বলেই আসেনি! তাহলে? হাঁটু থেকে মাথা তুলে তাকালো লোকটির দিকে। একটা আজব ধরনের পোশাক পরা মানুষ দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে। পোশকটা অনেকটা টিভিতে দেখা জোকারদের মতো লাগছে। লোকটার মুখ হাসি হাসি।
কাঁদতে কাঁদতে আবির কি ঘুমিয়ে গিয়েছিলে?
আমি কাঁদছিলাম আপনাকে কে বলেছে? আমি কেন কাঁদবো? আর আপনি কে? এখানে কেন এসেছেন?
এত প্রশ্ন? আমি জানি তুমি কেন কাঁদছো? জানেন?
অবশ্যই জানি। তুমি কাঁদছো কারণ তোমার ঘনিষ্ট বন্ধু তোমাকে তার জন্মদিনের দাওয়াত দেয়নি। ঠিক বলেছি?
হু, আপনি তো ঠিক বলেছেন! তবে আপনি কিভাবে জানলেন?
আমি সব জানি। বাদ দাও। তোমার তো জন্মদিনের কেক খেতে ইচ্ছে করছে? আরও ভালো ভালো যা থাকে সেসবও খেতে চাও, তাইতো?
আবির হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। লোকটা বুঝলো কেমন করে? কি হচ্ছে এসব? এই লোকটাকে ঠিক বুঝতে পারছে না। আচ্ছা বন্ধুর জন্মদিনেই কেন যেতে হবে? অন্য কারও তো জন্মদিন থাকতে পারে! কি বলো?
আর কার জন্মদিন?
এই ধরো আমার জন্মদিন। আজ আমার জন্মদিন। আমি আর তুমি মিলে কেক কাটবো। আর যা খেতে চাও খাওয়াবো। শুধু তুমি আর আমি, খুশি তো?
আবির কোনো কথা বলে না। এই লোকটার কথাই তো বুঝতে পারছে না। লোকটা কি একটা ইশারা করতেই বিশাল সাইজের একটা কেক আবিরের সামনে এসে হাজির হলো। এসব সত্যি না, নিশ্চয়ই লোকটা জাদু জানে। এরপর মোমবাতি, ভালো ভালো খাবার সামনে এলো। তারপর আবিরকে বললো, চলো কেকটা কেটে ফেলি। এরপর সেই জোকারের মতো দেখতে লোকটার সাথে আবির কেক কাটে। পেট ভরে কেক আর সব খাবারগুলো খায় আবির। মারুফের জন্মদিনে না যেতে পারার দুঃখটা নিমেষেই ভুলে যায় সে। তারপর লোকটা বলে, আচ্ছা ঠিক আছে আবির, এবার আমাকে যেতে হবে যে। সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমার যে আজ জন্মদিন। কিন্তু আপনি কে সেটা তো বললেন না? আজ থাক অন্যদিন বলবো। বলেই লোকটা হাঁটতে থাকে জঙ্গলের আরও ভিতরের দিকে। কিছুক্ষণ পর আর লোকটাকে দেখা যায় না।
কেকে/এমএ