একটির পর একটি আগুন দেশ যেন এখন আতঙ্ক আর প্রশ্নের দোলাচলে। রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়ির রাসায়নিকের গুদাম, চট্টগ্রাম ইপিজেডের তোয়ালে কারখানা, আর সর্বশেষ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে তিনটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। প্রাণহানি, হাজার কোটি টাকার ক্ষতি, এবং এর চেয়েও ভয়াবহ জনমনে অস্বস্তি ও সন্দেহ।
নিহতদের পরিবার, ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক, আর সাধারণ মানুষ জানতে চায় এই আগুনগুলো কি নিছক দুর্ঘটনা? নাকি দেশের ভেতরে বা বাইরে লুকিয়ে থাকা কোনো শক্তি অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তীব্র আলোচনা। কেউ বলছেন, এটি পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের নাশকতা; কেউ দেখছেন নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভয়াবহ দুর্বলতা।
অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, নিরাপত্তা সংস্থাগুলো ঘটনাগুলো গভীরভাবে তদন্ত করছে। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যদি নাশকতার প্রমাণ মেলে, তবে সরকার তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সও বিমানবন্দর অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে। পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
তবে রাজনৈতিক মহল এ ঘটনাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখতে নারাজ। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে বলেন, ‘দেশকে অস্থিতিশীল করতেই ফ্যাসিস্টদের দোসররা নানা ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ড শুরু করেছে।’ একইভাবে এনসিপির নেতা সারজিস আলমও মনে করেন, ‘এগুলো স্বৈরাচারের দোসরদের দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তের অংশ।’ সাংবাদিক মেহেদী হাসান পলাশের প্রশ্নও প্রাসঙ্গিক এত অল্প সময়ে এত অগ্নিকাণ্ড কি সত্যিই কাকতালীয়?
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কেপিআই এলাকায় আগুন লাগা বা দ্রুত ছড়িয়ে পড়া খুবই অস্বাভাবিক। এসব স্থানে কঠোর নিরাপত্তা ও অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা থাকার কথা। তাহলে সেই ব্যবস্থা কোথায় ব্যর্থ হলো? অবহেলা, দুর্বলতা, নাকি ইচ্ছাকৃত অন্তর্ঘাত এই প্রশ্নের উত্তরই এখন সবচেয়ে জরুরি।
একটি বিষয় পরিষ্কার আগুন শুধু গুদাম বা ভবন পুড়িয়ে দেয় না; জান ও মালের ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে পুড়িয়ে দেয় মানুষের আস্থা, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার বোধ। এমন পরিস্থিতিতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উচিত দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটন করা। তদন্তের ফলাফল জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে, যাতে গুজব, সন্দেহ ও রাজনৈতিক দোষারোপের জায়গা না থাকে।
এই দেশ বহু সংকট পেরিয়েছে। আবারো দাঁড়িয়েছে নতুন এক পরীক্ষার সামনে বিশ্বাসযোগ্যতা ও নিরাপত্তার। আগুন নেভানোই যথেষ্ট নয়; দরকার আগুন লাগার কারণ খুঁজে বের করে তা বন্ধ করা। কেবল ষড়যন্ত্রের দোহাই দিয়ে নয়, বরং প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থাপনার দিকে নজর দেওয়া। ভবনগুলোতে ইমার্জেন্সি এক্সিট আছে কিনা সেটি নিশ্চত করা।
কেকে/ এমএস