হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা এখন নতুন এক ভোগান্তির শিকার। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন হাজারো রোগী। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড, করিডর, চিকিৎসক চেম্বার ও অফিসে সামনে প্রায়ই দেখা যায় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের আনাগোনা। তারা চিকিৎসকদের ওষুধের স্যাম্পল, লিফলেট ও উপহার সামগ্রী দিতে ব্যস্ত থাকেন। এতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে এবং রোগীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
এতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। আবার দেখা যাচ্ছে ডা. রুমে থেকে বাহির হলে দেখা যায় নিজেদের কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখে কি না ছবি তুলতে ব্যস্ত রিপ্রেজেন্টেটিভরা।
রোগী অভিযোগ করে বলেন, চিকিৎসকের কাছে ঢোকার আগেই ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা আগে ঢুকে পড়ে। তারা নতুন ওষুধের তথ্য বা নমুনা দিতে গিয়ে ডাক্তারদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেন। এতে রোগীদের লাইন দীর্ঘ হয়, অপেক্ষার সময় বেড়ে যায়। অনেক সময় বয়স্ক ও জরুরি রোগীদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। প্রেসক্রিপশন পাওয়ার জন্য কখনো কখনো আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় গুরুতর রোগীকেও চিকিৎসক দেখেন না যতক্ষণ না মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়।
রোগীর স্বজন বলেন, “ডাক্তারের কক্ষে ঢুকতে পারছি না। আমার বাচ্চা জ্বরে কাঁপছে, কিন্তু ডাক্তার বসার রুমে আগে ঢুকছে ওষুধ কোম্পানির লোকেরা। আমরা বাইরে বসে অপেক্ষা করছি। আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে তারা তো মানুষই মনে করে না।”
এ বিষয়ে হাসপাতালের এক কর্মকর্তার বক্তব্য, “চিকিৎসকদের সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের যোগাযোগ প্রয়োজন হতে পারে, তবে সেটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। রোগীর চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটলে সেটা অনৈতিক।”
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, হাসপাতালের কার্যক্রম সুষ্ঠু রাখতে চিকিৎসা সময়ের বাইরে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকা উচিত। চিকিৎসকদের সাথে যোগাযোগের জন্য কোম্পানিগুলোকে নির্দিষ্ট সময় ও নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে, যাতে রোগীর সেবা ব্যাহত না হয়। এতে রোগীর সেবা নিশ্চিতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
এ বিষয়ে চিকিৎসক কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা প্রতিদিন নতুন ওষুধ পরিচিত করতে আসে। এইটা একজন রোগীর জন্য প্রয়োজনীয়। অনেক সময় তারা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় নেয়, এতে রোগীর ক্ষতি হয়।”
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সেবা পাওয়ার অধিকার সবকিছুর আগে প্রাধান্য পাওয়া উচিত। কিন্তু মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের অনিয়ন্ত্রিত উপস্থিতি সেই সেবাকে ব্যাহত করছে। চিকিৎসা সেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। সেই সেবায় কোনো প্রকার বাণিজ্যিক স্বার্থের হস্তক্ষেপ রোগীদের ভোগান্তি বাড়ায় এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রতি আস্থা কমিয়ে দেয়।
কেকে/এআর