হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে অবাধে লুট করা হচ্ছে মুল্যবান সিলিকা বালু।
ড্রেজার মেশিন এবং শ্রমিক দিয়ে পাহাড়ি ছড়া, চা বাগান ও সংরক্ষিত বনের পাদদেশ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে চা বাগানের ছড়া, শ্রমিকদের বস্তি ও সংরক্ষিত বনের কয়েকটি টিলা। পরিবেশ ধ্বংসের পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে জনচলাচলের গুরুত্বপূর্ণ সড়কও।
ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। কিন্তু বালুখেকো চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় প্রকাশ্যে মুখ খুলতে ভয় পাচ্ছেন তারা।
জানা যায়, চুনারুঘাট উপজেলার গাঁধাছড়া, গিলানি ছড়া এবং সুতাং নদীর বদরগাজি অংশ থেকে ড্রেজার মেশিন ও শ্রমিক দিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে লাখ লাখ ঘন ফুট সিলিকা বালু। এসব বালু কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রাতে পাচার করা হচ্ছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পাচার করে অল্প দিনে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠেছে বালু মাফিয়া চক্রটি। বিপরীতে পাহাড় ও চা বাগানের টিলা, পরিবেশ ও প্রতিবেশ ধ্বংসের পাশাপাশি দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাইকপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রমজান মিয়ার নেতৃত্বে গিলানী ছড়ার হলহলিয়া ও আব্দুল্লাহপুর এলাকায় চলে বালু উত্তোলন। এসব বালু ট্রাক ও ট্রাক্টর যোগে পাচার করেন তার ভাই শাহজাহান মিয়া, একই এলাকার ফরহাদ মিয়া, চুনারুঘাট উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মারুফ মিয়া এবং শ্রীকুটা এলাকার শাকিল মিয়াসহ একটি চক্র।
এছাড়াও পানছড়ি এলাকার গাধাছড়া থেকে স্থানীয় ইউপি সদস্য ফরিদ মিয়ার ছেলে ফয়েজ মিয়া ও মাহফুজ মিয়ার নেতৃত্বে কয়েকটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে সিলিকা বালু।
কালীনগর এলাকার আব্দুল হাই'র ছেলে বিল্লাল মিয়ার নেতৃত্বে এসব বালু শানখলা এলাকার একটি পরিত্যক্ত ইটভাটায় স্তুপ করে রাখা হয়। পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
বালু পাচারের বিষয়ে চুনারুঘাট উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মারুফ মিয়া বলেন, আমি এসবের সঙ্গে জড়িত নই। আমার প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
বদরগাজি এলাকার বাসিন্দা খয়ের মিয়া বলেন, সারারাত ট্রাক্টর দিয়ে বালু পাচার করা হয়। এর ফলে রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। প্রশাসন মাঝে মধ্যে অভিযান করলেও বালু লুট কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চুনারুঘাট উপজেলার হলহলিয়া এলাকার গিলানিছড়া, সুতাং নদী ও শানখলা ইউনিয়নের পানছড়ি এলাকার গাঁধাছড়া থেকে বালু উত্তোলন করে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। উত্তোলন করা এসব বালু রাতের আঁধারে পাচার করা হচ্ছে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার নিজামপুর, চুনারুঘাট উপজেলার শানখলা ও শ্রীকুটা এলাকার কয়েকটি ডিপোতে। সেখান থেকে পাচার করা হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। বালু পাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে ট্রাক্টর ও ড্রাম ট্রাক। বালু পাচারের রুট হিসাবে শাকির মোহাম্মদ সড়ক, লাদিয়া সড়ক ও দেউন্দি সড়ক ব্যবহার করা হয়।
বালু উত্তোলন ও পাচারের বিষয়ে চুনারঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযোগ পরিচালনা করছি। স্থায়ীভাবে বালু উত্তোলন ও পাচার বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
কেকে/বি