নীল আকাশ। শান্ত একটি সকাল। চারপাশে রোদের মিষ্টি আলো। ছোট্ট রিয়ান উঠোনে বসে তুলোর মতো সাদা মেঘগুলো দেখছিল। মেঘগুলো কখনো ঘোড়ার মতো, কখনো হাতির মতো, কখনো আবার বড় ভেলার মতো ভেসে যাচ্ছে।
রিয়ান মুগ্ধ হয়ে বলল, আহা! যদি ওদের পিঠে চড়ে ঘুরতে পারতাম!
রিয়ান খেয়াল করল তার কথা যেন কেউ শুনে ফেলল। হঠাৎ দমকা হাওয়া বইল, আর সেই সঙ্গে নেমে এলো এক ছোট্ট নরম তুলোর মতো মেঘ।
মেঘটি হেসে বলল, ভয় পেও না। আমি এই নীল আকাশের মেঘ। তুমি আমাকে ডেকেছিলে তাই চলে এলাম। তুমি আমাকে মেঘভেলা বলে ডাকতে পার। আমি সারা দিন আকাশে ভেসে বেড়াই।
জান আকাশ থেকে আমি কত্ত কী যে দেখি! ছোট রিয়ান বলল, তাই বুঝি! আমিও তোমার মতো আকাশে ভেসে বেড়াতে চাই।
মেঘভেলা বলল, তাহলে আর দেরি কিসের? উঠে বস আমার পিঠে আর চল আমরা ভ্রমণ করি নাম না জানা নানা দেশে। ছোট্ট রিয়ান প্রথমে ভয় পেল।
মেঘভেলা কোমল কণ্ঠে বলল, ভয় পেও না মনে সাহস রেখ। তারপর মেঘভেলা ধীরে ধীরে আকাশে উড়তে শুরু করল। রিয়ান দেখতে পেল নিচে নদী, মাঠ, গ্রাম সব কিছু যেন রঙিন ছবির মতো ভাসছে। প্রথমে তারা পৌঁছাল পাহাড়ের দেশে। পাহাড়ের ঢালে রিয়ান দেখল, গাছগুলো কেমন ম্লান হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। পাখিরা তৃষ্ণায় ক্লান্ত হাহাকার করছে।
রিয়ান মেঘভেলাকে বলল, তুমি তো বৃষ্টি নামাতে পারো- একটু বৃষ্টি দাও ওদের। মেঘভেলা মৃদু হাসল। তারপর তার দেহ থেকে ঠান্ডা ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়তে লাগল। মুহূর্তেই গাছগুলো সবুজে সতেজ হয়ে উঠল। পাখিরা জল পান করে আবার দেহে প্রাণ ফিরে পেল। তারপর তারা একসঙ্গে আবার গান গাইতে লাগল। রিয়ান খুশি হয়ে মেঘভেলাকে ধন্যবাদ জানাল।
রিয়ান বলল, মেঘভেলা তুমি সত্যি অনেক ভালো। তোমার মতো পরম বন্ধু থাকলে পৃথিবী সবুজে ছেয়ে যাবে। তখন পৃথিবী আরো প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। তারপর তারা উড়ে গেল সমুদ্রের দিকে। বিশাল নীল জলের ওপর সূর্যের আলো ঝলমল করছে। হঠাৎ রিয়ান দেখতে পেল, ছোট্ট একটি পাখি সমুদ্রের ঢেউয়ে যেন তলিয়ে যাচ্ছে! রিয়ান উদ্বিগ্ন হয়ে বলল, ওদের সাহায্য করা দরকার। না হলে পাখিটি প্রাণ হারাবে। তারপর মেঘভেলা ধীরে ধীরে নিচে নেমে এল। তুলোর মতো দেহে পাখিটাকে তুলে নিল। তারপর নিরাপদে পাহাড়ের একটি মস্তবড় বৃক্ষের শাখায় পৌঁছে দিল।
পাখিরা কিচিরমিচির কণ্ঠে মেঘভেলা ও রিয়ানকে ধন্যবাদ জানাল। এরপর তারা গেল মরুভূমির দিকে। সেখানে গরমে হাঁপিয়ে উঠেছে এক কাফেলার উট। রিয়ান আবার বলল, ওদেরও একটু জল দাও মেঘভেলা। মেঘভেলা রিয়ানের কথায় বৃষ্টি নামাল। আকাশ থেকে ঝরে পড়ল ঠান্ডা বৃষ্টি ফোঁটা। উট আর মানুষগুলো সবাই আনন্দে নেচে উঠল। দিন শেষে সূর্য ঢলে পড়ল পশ্চিমে। আকাশ লালচে সোনালি রঙে রাঙিয়ে দিল।
রিয়ান বলল, আজ বুঝলাম ভালো কাজ করলে মনে কত্ত শান্তি পাওয়া যায়। তুমি শুধু মেঘভেলা নও। তুমি এক মহান বন্ধু। মেঘভেলা বলল, তুমিও এক হৃদয়বান শিশু। তোমার মতো শিশুরাই পৃথিবীকে সুন্দর করে তোলে। তারপর ধীরে ধীরে মেঘভেলা রিয়ানের বাড়ির আকাশে ফিরে এলো। রিয়ান আস্তে করে তার বাড়ির আঙিনায় নামল।
এখন আকাশে তারাভরা রাত। সে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দেখল, দূরে সাদা মেঘভেলা ভেসে যাচ্ছে। চাঁদের রূপালী আলোতে মেঘভেলাকে ভীষণ সুন্দর আর ঝলমলে দেখাচ্ছে। রিয়ান হাত নেড়ে মেঘভেলাকে বিদায় জানাল এবং মনে মনে বলল, আবার আমাদের দেখা হবে প্রিয় মিত্র! তুমি সত্যি আমার এবং পৃথিবীর পরম মিত্র!
কেকে/ এমএস