শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫,
১৮ শ্রাবণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সম্ভাবনার হাতছানি      শেখ হাসিনার ফেরার পরিকল্পনা বানচাল      ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক      বাংলাদেশকে আলাদা কোনো শর্ত দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র : প্রেস সচিব      ‘হেফাজতের সাথে বিএনপির কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নাই’      মার্কিন শুল্ক সন্তোষজনক, তবে পুরো বিষয়টা খোলাসা করা উচিত : খসরু      ২০ শতাংশ শুল্কে অন্তর্বতী সরকারের অন্যতম সফলতা: আইন উপদেষ্টা      
ইচ্ছেডানা
ভূতের ছায়া
মো. রাজিব হুমায়ুন
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০২৫, ৮:৪৯ পিএম

শান্তনগর গ্রামটা এমনিতেই খুব শান্ত। এখানে ভোর থেকেই পাখিরা ডাকে, মুরগিরা ডিম পাড়ে ঠিক দুপুরে, আর সন্ধ্যা হলেই সব পশু-পাখি আপন বাসায় ফিরে যায়। কিন্তু এই গোছানো গ্রামে একদিন রটে গেল এক গুজব! স্কুলের পেছনের পুরনো আমগাছে নাকি ভূতের ছায়া ঘোরাফেরা করছে!

প্রথমে সবাই ভেবেছিল এটা মজার ছলেই বলা। কিন্তু কয়েকজন বলল, তারা নিজের চোখে দেখেছে ছায়াটা গাছের ডালে বসে আছে, চোখ লাল! 

কেউ কেউ বলল, সেই ছায়া রাত হলে খাতা ছিঁড়ে ফেলে, আর কখনো কখনো খাতা কালি দিয়ে পুরোটাই মেখে রাখে। শুধু তা-ই নয়, সকালে খাতায় লেখা পাওয়া যায় ‘খই খই খিচুড়ি’।

বাচ্চারা ভয়ে বিকেলের পরে আর স্কুলের পাশে ঘেঁষে না। হেডস্যারও ভাবনায় পড়ে গেলেন। তিনি বললেন, ‘এই ঘটনার তদন্ত করতে হবে।’

এই গ্রামের তিনজন সাহসী ছেলে টুটুল, মিতুল আর বাদল। তিনজনই পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। এরা নিজেরা নিজেদের বলে ‘শান্তনগরের তিন গোয়েন্দা’। ভূতের ছায়ার রহস্য উদঘাটন করাই তাদের নতুন মিশন।

তারা সিদ্ধান্ত নিলো, পরদিন সন্ধ্যায় স্কুলে যাবে, সেই আমগাছের পেছনে লুকিয়ে থাকবে আর দেখে আসবে, আসলে কী হচ্ছে। পরিকল্পনা মতো বিকেল ৫টায় তিনজন স্কুলের পেছনের দালানের নিচে এসে হাজির। সঙ্গে আছে একটা টর্চলাইট, একটা পুরনো ক্যামেরা, আর বাদলের মায়ের বানানো মুড়ি-চানাচুর।

সূর্য ডোবার পর তারা হঠাৎ দেখলো, গাছের ওপর সত্যিই একটা ছায়া নড়ছে। ছায়াটা লম্বা, যেন মানুষের মতো, আর গাছের ডালে বসে দুলছে। পাতার ফাঁক দিয়ে শূন্যে দেখা যাচ্ছে, সেই ছায়া ফিসফিস করে বলছে, ‘খই খই খিচুড়ি’।

মিতুল তখনই বলল, ‘ওই যে! ভূত!’

বাদলের হাত থেকে টর্চলাইট মাটিতে পড়ে গেল। টুটুল সাহস করে টর্চলাইট জ্বালালো। আলো গাছের নিচে পড়তেই সবাই থমকে গেল।

ওমা! ছায়াটা ভূত না, তাদেরই ক্লাসমেট চয়ন!

চয়ন একটু লাজুক আর চুপচাপ ছেলে। কারো সঙ্গে বেশি কথা বলে না, সারাক্ষণ কেবল বই পড়ে। চয়নকে দেখে তিনজন একসঙ্গে বলে উঠল, ‘তুই এখানে কী করছিস?’

চয়ন একটু কাচুমাচু হয়ে বলল, ‘আমি আসলে বিকেল বেলায় এখানে পড়তে আসি। বাসায় খুব শব্দ হয়, ভাইয়া ভিডিও গেম খেলে আর মা টিভি দেখে। এখানে এসে শান্তিতে পড়া যায়।’

টুটুল অবাক হয়ে বলল, ‘তা হলে ছায়াটা তোর?’

চয়ন মাথা ঝাঁকাল, ‘হ্যাঁ। আমি একটা বড় ছাতা নিয়ে বসি, তার ছায়া গাছের ডালে পড়ে যায়। বাতাসে পাতাগুলো দুললে ছায়াটা নড়াচড়া করে। আমি গুনগুন করে গান গাই—‘খই খই খিচুড়ি’—এটা আমার নিজের বানানো গান। আর কখনো কখনো খাতায় লিখে রাখি যেন ভুলে না যাই।’

মিতুল হেসে বলল, ‘তা হলে তুই ভূতের ছায়া?’

তিনজন হাসতে লাগল, চয়নও হেসে ফেললো। ভয় কেটে গেল, রহস্য উদঘাটন হলো। পরদিন সকালের এসেম্বলিতে টুটুল, মিতুল আর বাদল সবাইকে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিলো। চয়নকে ডেকে বলল, ‘এ আমাদের বন্ধু চয়ন। ও ভূত না। বরং সবচেয়ে মনোযোগী ছাত্র।’

প্রধান শিক্ষক মুচকি হেসে বললেন, ‘চয়নের পড়ায় এতো আগ্রহ দেখে ভালো লাগলো। তবে সন্ধ্যায় একা স্কুলে আসা নিরাপদ নয়। আমরা লাইব্রেরীতে তার পড়ার ব্যবস্থা করে দেব। যেখানে রাত ১২টা পর্যন্ত গ্রামের জনসাধারণ পড়ায় ব্যস্ত থাকে।’

চয়ন বলল, ‘তা হলে এখন থেকে আমি ভূতের ছায়া না, বইয়ের ছায়ায় বসে পড়ব!’

সবাই হাততালি দিলো। এরপর থেকে কেউ আর ‘ভূতের ছায়া’ নিয়ে ভয়ে কাঁপে না। বরং সন্ধ্যা হলে শিশুরা হাসতে হাসতে বলে, ‘ভূত নয়, পড়ুয়া চয়ন এসেছে!’

গুজব থেমে গেল, ভয় কেটে গেল, আর সবচেয়ে বড় কথা—একজন নিঃসঙ্গ শিশুর ভালোবাসা ও স্বীকৃতি ফিরে এলো। যে ছেলেটিকে সবাই খেয়াল করত না, সেই চয়ন হয়ে উঠল স্কুলের প্রিয় মুখ।

গল্পের শিক্ষা : গুজবে কান না দিয়ে সত্যের সন্ধান করা উচিত। আর সত্যের সন্ধানে সাহসের প্রয়োজন।
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সম্ভাবনার হাতছানি
শেখ হাসিনার ফেরার পরিকল্পনা বানচাল
‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাক
বড়লেখা ২০ফুট লম্বা অজগরকে পিটিয়ে হত্যা
যোগদানের ২২ দিনের মাথায় শিবচর থানার ওসি প্রত্যাহার

সর্বাধিক পঠিত

‘হেফাজতের সাথে বিএনপির কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নাই’
সুলতানগঞ্জকে যদি বন্দর করা যায় তাহলে করা হবে: ড. এম সাখাওয়াত
নওগাঁয় চক্ষু হাসপাতালের উদ্বোধন
লালপুরে গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার, শাশুড়ি আটক
‘শুধু নির্বাচনের জন্য জুলাই অভ্যুত্থান হয়নি’
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close