মা-ঠাম্মির সহ্য হয় না ইঁদুরের যন্ত্রণা।
রাতে নারিতা, নোরার পড়ার ঘরে বই কাটে কুচিকুচি করে।
শুধু তাই নয়, রান্নাঘরে মাছ, মাংস, সবজি সারা ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে। নোরা কাঁদে কাটা বই দেখে।
এভাবে অনেকদিন যায়। রাতে পূরবী ঘুমোতে পারে না। গভীর রাতে হাত-পায়ের আঙুলে কামড় দেয়।
পড়তে বসে নোরা দিদিভাইকে বলে, দিদিভাই ইঁদুরের জ্বালায় কি করা যায়। দিদিভাই নারিতা, নোরার কথায় অবাক। পিচ্চি মেয়ে, ইঁদুরের কথা ভাবছে। আমি তো ভাবি না। এ বছর বাবা প্লেতে ভর্তি করালো। কি বুদ্ধি নোরার। কথাটি ঠিক বলেছে।
নোরা না থেমে বলে, দিদিভাই ইঁদুরকে ধরা যায় না।
– কীভাবে ধরবি। নারিতাও প্রশ্ন করে।
– ঠাম্মি বলছিল ইঁদুর ধরার কল আছে।
– ঠিকইতো। বাবাকে বলব ইঁদুর ধরার কল আনতে।
অফিস শেষে বাবা ফিরেছে তখন।
নোরা ছুটে যায় বাবার কাছে। এটা নতুন নিয়ম নয়। প্রতিদিন বাবা ফিরলে নারিতা, নোরা দুজনেই বাবার কাছে যাবে। নোরা বাবার কোলে বসে বলে, বাবা একটা ইঁদুরের কল আনবে।
– হঠাৎ ইঁদুরের কল কেন মা।
– তুমি জানো না, প্রতিদিন রাতে আমাদের বই কাটছে, সবজি নষ্ট করছে।
– ঠিক বলেছিস তো। কাল নিয়ে আসবো। এখন যা, বাবার কাপড় ছাড়ি।
পরেরদিন নারিতা, নোরা ইশকুল ফিরে বাবার অপেক্ষায় থাকে। বারবার ছুটে যায় দরজায়। পাঁচটার পরপর ডোরবেল বাজে। দুজনেই দরজায় ছুটে যায়। দেখে বাবার হাতে ইঁদুর ধরার কল। কি খুশি। দরজা খুলতেই বাবার হাত থেকে কলটা ছিনিয়ে নয় নোরা। মোটা তার দিয়ে তৈরি কল।
রাত হয়। পড়া শেষে ভাত খেয়ে রান্না ঘরে ছুটে। পূরবীকে বলে, মিষ্টি মাসি, ইঁদুরের কল বসাবে না।
– এই বসাব।
– কীভাবে, নোরার প্রশ্ন।
– এই দেখো। পূরবী কলের মুখটা খোলে নোনা ইলিশের টুকরো দেয়। কলের মুখটা খুলে রান্না ঘরের কোণে বসায়। তারপর বাতি বন্ধ করে বলে, তোমরা এখন ঘুমুতে যাও। সকালে ইঁদুর ধরা পরবে।
রাতে নোরার চোখে ঘুম আসে না। মায়ের বুকে শুয়ে এপাশ ওপাশ করে। মা বলে, কিরে, ঘুম আসছে না। নোরা চুপ।
সকালের আগে নোরা রান্না দৌড়ে। বাতি জ্বালাতেই দেখে কলের ভেতর বড়ো ইঁদুর। কলের ভেতরে ছুটোছুটি করছে। নোরাকে দেখে চিকচিক ডাকে। নোরা খুশি। ছুটে যায় দিদি ভাইকে ডাকতে। দিদি ভাই ঘুম চোখে আসে। দেখে দারুণ খুশি। নোরা বলে, ইঁদুর বাবু কেমন লাগছে, বই কাটবে আর। সবজি খাবে। ইঁদুর মাথা নেড়ে না বলে। দিদি ভাইকে বলে, ওমা, দিদিভাই ইঁদুর মানুষের কথা বোঝে!
– হয়তো বোঝে। নাহলে মাথা নেড়ে না বলল যে।
– ইঁদুরবাবু আমাদের বন্ধু হবে?
ইঁদুর এবার উঁচু থেকে নিচুতে মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানায়। মানে বন্ধু হতে রাজী। ইঁদুরের কল নিয়ে লাফালাফি দু’জনের। বাঃ ইঁদুর আমাদের বন্ধু বলে হইচই। ওদের হইচই-এ মা রান্না ঘরে আসে। কলে ইঁদুর দেখে ভীষণ খুশি। বলে, দেখি অন্য ইঁদুর আর বই কাটে, কি সবজি নষ্ট করে। বাইরের বারিন্দায় কলটা রেখে মুখ ধুয়ে আয়। ইশকুলে যাবি।
ইশকুলে মন বসে না। কখন ছুটির ঘন্টা বাজবে, সেই অপেক্ষায় থাকে। ছুটি শেষে বাসায় ফিরে বারিন্দায় ছুটে যায়।
ওদের দেখে ইঁদুর কলের ভেতর লাফায়। নোরা বলে, দিদিভাই, ওর মা-বাবা আছে নাহ্। ওর জন্য কাঁদছে নিশ্চয়ই। আজকে ওকে ছাড়াতে আসতে পারে।
– অবশ্যই আসবে। ওদের সন্তানতো। ঠাম্মি এসে হাজির। নোরাকে বলে, দিদিভাই আজ রাতে আর বই কাটবে না দেখো।
– কিন্তু ঠাম্মি, ওরতো মা-বাবা আছে। কাঁদছে না।
ঠাম্মি অবাক। ভাবে পিচ্চি নাতনিটি বলে কি! যেন দয়ার সাগর। এত মায়ায় ভরা মন। তবে কি জানো! যেমন কর্ম তেমন ফল।
– সেটা কি ঠাম্মি।
– যে যেরকম কাজ করে, সেরকম ফল পায়। ইঁদুর বই কাটছে, সবজি নষ্ট করছে। ধরা পরে শাস্তি পাচ্ছে। তবে দিদিভাই কি বিচ্ছিরি গন্ধ। ঠাম্মি মনে মনে বলে, ইঁদুরের গায়ে এত দুর্গন্ধ, ছিঃছিঃ! ওকে তো রাখা যাবে না।
নাসিমা আসে বিকেলে। নাসিমাকে ঠাম্মি বলে, এই ইঁদুরটার গায়ে কি বিচ্ছিরি গন্ধ, রাখাতো যাবে না।
– না রেখে উপায় কি, বই, সবজি নষ্ট করছে।
নারিতা, নোরার মা বলে, মা, সম্ভব নয় রাখা। দুর্গন্ধ সহ্যের নয়। নাসিমা ইঁদুরটাকে নিচে গিয়ে কল থেকে ছেড়ে দেতো।
নোরা কাঁদে। মাকে বলে, ওতো আমাদের বন্ধু। ওকে ছেড়ে দিতে বলছ কেন?
– ওর কাজ শেষ। আর কোনো ইঁদুর বই কাটতে আসবে না। ভয় পেয়েছে সব ইঁদুর। তাছাড়া দুর্গন্ধ পাচ্ছো না। এই গন্ধ অসুখ হতে পারে। তাই ছেড়ে দেওয়ায় ভালো মা।
নাসিমা ইঁদুরের কল হাতে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামে। নোরা বড় গলায় বলে, বন্ধু রাগ করোনা। রাতে আবার এসো। দেখা হবে, কথা হবে।
ইঁদুর নোরার কথায় চিকচিক ডাকে।