একদিন এক ছোট্ট পিঁপড়ে ছালগাছের মাথায় উঠল। গাছের ডালে শুকনো পাতার ওপর বসে বলল, আহা! একটু বিশ্রাম নিই। তারপর নেমে যাব।
পিঁপড়েদের নিয়মনীতি খুবই কড়া। সূর্য ডুবে গেলে সবাইকে বাসায় ফিরে যেতে হয়। কেউ দেরি করলে তাকে রাতটা বাইরে কাটাতে হয়। পিঁপড়েটা ভাবল, সময় অনেক বাকি আছে। নামতে আর এত সময় লাগবে না। আরেকটু বসি। হাওয়া খাই।
ঠিক তখনই একটা ঝোড়ো হাওয়া শুকনো পাতাটাকে ডাল থেকে ছিঁড়ে নিয়ে গেল। পিঁপড়ে শক্ত করে ধরে রইল। বাতাস তাকে নিয়ে গিয়ে মাঠের ওপর ফেলল। পড়তেই তার পায়ে খুব ব্যথা পেল।
পিঁপড়ে দুঃখ করে বলল, এবার আমি বাড়ি যেতে পারব না। যদি পায়ে ব্যথা না পেতাম, তাহলে এক দৌড়ে চলে যেতাম!
ঠিক তখন সে দেখল, একটা কেঁচোপোকা হাঁটছে। পিঁপড়ে বলল, ভাই, আমায় বাড়ি নিয়ে যাবে? আমি পায়ে ব্যথা পেয়েছি। হাঁটতে পারছি না। কেঁচোপোকা বলল, আচ্ছা, চড়ে বসো।
পিঁপড়ে তার পিঠে উঠল। কেঁচোপোকা দুলে দুলে অদ্ভুত ভঙ্গিতে হাঁটতে লাগল। একবার মাথা নিচে, আরেকবার পা ওপরে। পিঁপড়ে বারবার উল্টে যাচ্ছিল। শেষে বিরক্ত হয়ে চিৎকার করে বলল, থাম, না হলে আমি কামড় দেব! কেঁচোপোকা থেমে গেল। পিঁপড়ে লাফ দিয়ে নেমে পড়ল।
মাঠে তাকিয়ে সে দেখল একটা মাকড়সা হেঁটে যাচ্ছে। পিঁপড়ে বলল, স্পাইডার ভাই, আমাকে একটু নিয়ে যাবে? আমার পায়ে বড্ড ব্যথা। স্পাইডার বলল, আচ্ছা, ওঠো।
পিঁপড়ে তার পিঠে চড়ল। কিন্তু তার লম্বা পাগুলো এদিক-ওদিক নড়ছিল শুধু। আগাতে পারছিল না তেমন। পিঁপড়ে খুবই বিরক্ত হলো। একটু পর স্পাইডার থেমে বলল, ওই দেখো, একটা গুবরেপোকা আসছে। ও আমার চেয়ে দ্রুত দৌড়ায়।
পিঁপড়ে গুবরেপোকার পিঠে উঠল। গুবরেপোকা ছুটতে লাগল। যেন সে উড়ছে। কিন্তু আলুখেতের কাছে এসে সে থেমে গেল। বলল, এত উঁচু-নিচু পথে আমি যেতে পারব না। তুমি অন্য কাউকে খুঁজে নাও।
হঠাৎ একটি ছোট্ট পোকা এসে বলল, এসো, তোমাকে আমি নিয়ে যাব। পিঁপড়ে অবাক হয়ে বলল, তুমি এত ছোট, আমাকে নিয়ে কীভাবে যাবে? ছোট্ট পোকাটা বলল, তুমি বস, আমি দেখাই।
সে চমৎকার লাফ দিয়ে দিয়ে একের পর এক আলুর সারি পেরিয়ে গেল। কিন্তু বেড়া টপকাতে পারল না। তখন তারা ঘাসফড়িংকে ডাকল।
ঘাসফড়িং বলল, চড়ে বস। সে লাফ দিয়ে উঁচু বেড়া পার হয়ে গেল। তারপর বলল, এবার নেমে যাও, আমি এর বেশি যাব না।
পিঁপড়ে দেখল সামনে একটা নদী। সে কাঁদতে কাঁদতে বলল, এ নদী আমি কীভাবে পার হব? ঘাসফড়িং বলল, অপেক্ষা কর, জলতেলাপোকা আসবে।
শিগগিরই একটা জলতেলাপোকা ভেসে এলো। পিঁপড়ে তার পিঠে উঠল। সে বরফের মতো মসৃণ ভঙ্গিতে পানির ওপর দিয়ে ছুটল। সে তার শক্ত পা দিয়ে দ্রুত নদীপাড়ে চলে এলো। নদী পার হতেই বলল, এবার নাম। আমি কেবল পানিতে হাঁটতে পারি।
সূর্য তখন প্রায় ডুবে যাচ্ছিল। পিঁপড়ে ভয় পেল। হায় হায়, আমার তো অনেক দেরি হয়ে গেল।
এমন সময় একটা বড় মে-পোকা এলো। পিঁপড়ে তার মাথায় উঠে বসল। মে-পোকা তার শক্ত পিঠ খুলল। নরম ও স্বচ্ছ ডানা বের করে উড়তে লাগল। ভোঁ ভোঁ শব্দ করে সে আকাশে উঠে গেল। পিঁপড়ে দেখল, সূর্য তখন মাটি স্পর্শ করছে।
মে-পোকা গাছের কাছে এসে নেমে গেল। পিঁপড়ে ভয় পেল। আমি কীভাবে নামব? আমার পা ব্যথা। গলাও ভেঙে যেতে পারে!
মে-পোকা বলল, আমি তোমাকে নামাব না। তোমরা পিঁপড়েরা খুব কামড় দাও। নিজে নাম।
পিঁপড়ে দেখল কাছে শুঁয়োপোকা পাতায় সুতা কাটছে।
পিঁপড়ে বলল, দয়া করে আমাকে নামিয়ে দাও। না হলে রাতটা বাইরে কাটাতে হবে।
শুঁয়োপোকা বলল, আমি ব্যস্ত, বিরক্ত কর না।
পিঁপড়ে রেগে তাকে কামড় দিল। শুঁয়োপোকা অবাক হয়ে নিজেকে বলল, আহা! সে কুঁচকে লাফ দিয়ে পড়ল। কিন্তু পিঁপড়ে সুতায় আঁকড়ে ধরে রইল। সে সুতা টেনে টেনে ধীরে ধীরে মাটিতে নেমে গেল।
এদিকে সব পিঁপড়ে নিজেদের ঘরে ঢুকে গেল। আর সূর্য ডুবে গেল। ছোট্ট পিঁপড়েটাও নিরাপদে নিজের ঘরে ঢুকল।
সে বেঁচে গেল!
ভিতালি ভ্যালেন্তিনোভিচ বিয়ানকি ( জন্ম ১১ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৪, সেন্ট পিটার্সবার্গ- মৃত্যু ১০ জুন ১৯৫৯, লেনিনগ্রাদ) ছিলেন জনপ্রিয় রাশিয়ান শিশুসাহিত্যিক।
কেকে/ এমএস