গত ৬ অক্টোবর (সোমবার) জাতীয় দৈনিক খোলা কাগজে “জীবনযুদ্ধে বিজয়ী দু’হাতবিহীন নিহাল” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি মাদারগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাদির শাহ ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম খালেক মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে প্রতিবন্ধী নিহালের পাশে দাঁড়ান।
বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ চত্বরে নিহালের ব্যবসার পরিধি বাড়াতে ১৫ হাজার টাকার পণ্যসামগ্রী প্রদান করেন ইউএনও নাদির শাহ।
জানা যায়, মাদারগঞ্জ উপজেলার গুনারিতলা ইউনিয়নের মোসলেমাবাদ গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয় নিহাল। ২০০২ সালে সুলতান আহম্মেদ ও খাদিজাতুন কুবরা দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন মো. মেহেরাব হোসাইন নিহাল। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান নিহাল শৈশবে হারান বাবাকে। এরপর মায়ের আশ্রয়েই বড় হন তিনি। ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করতে হয় নিহালকে। তবে ২০২২ সালে এক মর্মান্তিক বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় তিনি হারান তাঁর দুটি হাত। তখন তিনি এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। উপজেলার নাদাগাড়ি এলাকায় ঘরের ওয়ারিংয়ের কাজ করার সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
স্বামীর মৃত্যুর পর মা খাদিজাতুন কুবরা আর নতুন করে সংসার শুরু না করে সন্তানকে নিয়ে ফিরে আসেন বাবার বাড়ি মোসলেমাবাদ গ্রামে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতায় একমাত্র সন্তানও হারান দুটি হাত। তবুও দমে যাননি নিহাল। দুর্ঘটনার এক বছর পর প্রতিবন্ধী শরীর নিয়েই শুরু করেন চায়ের দোকান। পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসে গড়ে তুলেছেন জীবনের নতুন অধ্যায়। বর্তমানে তিনিই সংসারের প্রধান উপার্জনকারী।
নিহাল বর্তমানে প্রতিবন্ধী ভাতার সুবিধা পেলেও তার মা খাদিজাতুন কুবরা এখনও কোনো সরকারি সহায়তা পাননি।
জীবনের নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে নিহাল আজ প্রমাণ করেছেন— শারীরিক অক্ষমতা নয়, মানসিক দৃঢ়তাই মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তার অনুপ্রেরণামূলক গল্প সকলের জন্য হয়ে উঠেছে সাহস ও আশার প্রতীক।
কেকে/ আরআই