ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার মাইজকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের চারটি স্থানে দীর্ঘদিন ধরে সাপ্তাহিক হাট বসায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে পথচারী ও যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। হাটের দিনগুলোতে পুরো এলাকা কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে।
জানা গেছে, উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের কাদিরদী বাজার, সাতৈর বাজার এবং শেখর ইউনিয়নের বড়গাঁ বাজারে সপ্তাহে দুই দিন—সোমবার ও বৃহস্পতিবার—সাপ্তাহিক হাট বসে। কাদিরদী থেকে সাতৈর বাজারের দূরত্ব সাত কিলোমিটার এবং সাতৈর থেকে বড়গাঁ ১৪ কিলোমিটার। এই স্বল্প দূরত্বে একই দিনে তিনটি হাট বসার কারণে ফরিদপুর থেকে আলফাডাঙ্গা ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীগামী যাত্রীরা যানজটে পড়ছেন। শেখর ইউনিয়নের বড়গাঁ থেকে তিন কিলোমিটার দূরে সহস্রাইল বাজারে হাট বসে মঙ্গলবার ও শুক্রবার। এই বাজারটিও মহাসড়কের উপর হওয়ায় ওই দুই দিনও যানজটে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের বড়গাঁ বাজারে সাপ্তাহিক হাটের দিন মাইজকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর এলোমেলো করে পাটভর্তি ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন পথচারী, এলাকাবাসী এবং বিভিন্ন যানে চলাচলকারী যাত্রীরা। সহস্রাইল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে, কোথাও মহাসড়কটির উপরেই কাঁচাবাজারের অস্থায়ী দোকান বসেছে। দোকানিরা বিভিন্ন প্রকার সবজি, মসলা, দেশি ফলের পসরা মিলিয়ে বসেছেন। এতে সড়কে যেমন ক্রেতাদের ভীড়ে পথচারীদের চলাচল কষ্টকর; তেমনি যানবাহনের দীর্ঘ লাইনে অসহনীয় যানজটে হাঁসফাঁস অবস্থা যাত্রীদের। এছাড়া একই উপজেলার সাতৈর ইউনিয়নের কাদিরদী ও সাতৈর বাজারের সাপ্তাহিক হাটও মাইজকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর বসে। সড়কের ওপর হাট বসায় ভীড়ের কারণে যানবাহন ক্রসিং করতে পারে না। যার ফলে তৈরি হয় যানজট।
স্থানীয়রা জানান, বড়গাঁ বাজারে হাট বসে সোমবার ও বৃহস্পতিবার। পাটের মৌসুমে বড়গাঁ বাজারের উপর দিয়ে যাতায়াতে সপ্তাহের ওই দুই দিন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ অঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষকে।
সহস্রাইল বাজারের স্থানীয় বাসিন্দা ও স্কুল শিক্ষক মওলানা জাকারিয়া হোসেন বলেন, সহস্রাইলে হাটের দুইদিন এ আঞ্চলিক মহাসড়কটির উভয় পাশের একাংশের উপর কাঁচাবাজার বসার কারণে পথচারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সকাল থেকেই সহস্রাইল বাজারে যানজট লেগে থাকে।
পার্শ্ববর্তী বনমালীপুর জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বোয়ালমারী পৌর এলাকার বাসিন্দা শাপলা খানম বলেন, প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার বড়গাঁয় সাপ্তাহিক হাট বসে। সকাল আটটা থেকেই ভিড় শুরু হয়। এজন্য অন্যান্য দিনের থেকে ওই দুই দিন বাড়ি থেকে আধাঘন্টা আগে বাসযোগে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। তারপরও জ্যামে পড়ে যাই।
বড়গাঁর স্থায়ী বাসিন্দা অনিক মিয়া বলেন, সাপ্তাহিক হাটের দিনগুলোতে নিদারুণ কষ্টে থাকেন পথচারীরা। সড়ক থেকে কিছুটা দূরে নির্ধারিত কোন প্রশস্ত জায়গায় হাট বসাতে বণিক সমিতি ও স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বোয়ালমারী পৌরসভার বাসিন্দা শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী দীপঙ্কর পোদ্দার অপু বলেন, আমার প্রায়শই ফরিদপুর ও আলফাডাঙ্গা যেতে হয়। মাইজকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের উপরের ৪টি স্থানে হাট বসায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর হাটের কারণে সৃষ্ট যানজটের বিষয়ে জানতে চাইলে বড়গাঁ বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান মঞ্জু বলেন, আমি দুই-এক দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে বাজার বণিক সমিতির একটা মিটিং ডাকবো। সেখানে যে সিদ্ধান্ত হয় জানাবো।
এ বিষয়ে সহস্রাইল বাজার বণিক সমিতির সভাপতি চুন্নু বিশ্বাস বলেন, কাঁচাবাজারের জন্য এর আগে নির্দিষ্ট একটা জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম। সেখানে আমরা বণিক সমিতির পক্ষ থেকে কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীদের বসিয়েছিলাম। মাস দুয়েক-তিনেক পরে দোকানদাররা মব-বিশৃঙ্খলা করে সড়কের উপর আবার তারা তাদের পণ্য নিয়ে বসেন।
মাইজকান্দি-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের উপরের চারটি স্থানে সাপ্তাহিক হাট বসায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের কোন পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ আছে কি-না জানতে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদারের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সফিকুর রহমানের মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি। এরপর উল্লিখিত বিষয়ে মন্তব্য চেয়ে উভয়কে ইমেইল করলেও কোন সাড়া মেলেনি।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, এ বিষয়টি আমি অবগত আছি। আমি ইতোমধ্যে স্থানীয় চেয়ারম্যানদের সাথে কথা বলেছি। যেন সড়কে যানজট না হয়। এ কাজে গ্রাম পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়োজিত করার ব্যাপারে চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরপরেও যদি কাজ না হয় তাহলে রোডস এন্ড হাইওয়ের কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, হাইওয়ের ওপর বেশ কয়েকটি বাজার থাকলেও সহস্রাইল বাজারে বেশি সমস্যা। সহস্রাইল বাজার সরিয়ে যে অন্য জায়গায় দেব আশেপাশে সেরকম কোন সরকারি জায়গাও নেই।
কেকে/ আরআই