আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি দলের অভ্যন্তরে মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যায়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। যাদের নাম একাধিক আসনে আসছে, তাদের একটি আসনে নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট করতে বলা হচ্ছে। দলের বার্তা নিয়ে ভোটারদের কাছে যাওয়ার জন্য দেওয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা।
এতে প্রধান্য পাচ্ছে তিন যোগ্যতা প্রথমত দলের প্রতি আনুগত্য, দ্বিতীয়ত জনপ্রিয়তা, তৃতীয় এবং শেষ হচ্ছে দলে সাংগঠনিক অবদান। প্রথম ধাপে দলের ২০০ জনকে সবুজ সংকেত দেওয়া হতে পারে। তফসিলের পর চূড়ান্ত ধাপে কতজনকে দলীয় মনোয়ন দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করবেন দলের হাইকমান্ড।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় প্রার্থীর দলীয় আনুগত্য, জনপ্রিয়তা এবং দলে সাংগঠনিক অবদান এ তিন বিষয়কে প্রাধান্য দিচ্ছে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। যারা দীর্ঘদিন দলের দুঃসময়, কঠিন সময়ে পাশে ছিলেন, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার নির্দেশনা এসেছে কেন্দ্র থেকে। প্রতিটি বিভাগ ও জেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের কাছ থেকে প্রার্থীদের বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট নেওয়া হয়েছে। সে প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করেই তৈরি হবে প্রার্থীর প্রাথমিক তালিকা।
নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা না করলেও দল ‘একক প্রার্থী কৌশল’ গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে বিএনপির একাধিক সূত্র। এতে প্রতিটি আসনে একজন করে প্রার্থীকে কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষণা দেওয়া হবে। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ইতোমধ্যে নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগ, মতবিনিময় সভা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছেন। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা কার্যালয়গুলোতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আনাগোনা বাড়ছে।
দলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘বিগত দিনে দলের দুঃসময়ে যারা কাজ করেছেন। স্বৈরাচার ও মাফিয়া সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথ আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন এবং তৃণমূলে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে চূড়ান্ত করা হবে।
তিনি বলেন, যিনি শুধু পরিচিত মুখ নন, বরং মাঠে কাজের মানুষ। যিনি তৃণমূলের সঙ্গে সংযুক্ত এবং দলের প্রতি নিবেদিত। তিনি অগ্রাধিকার পাবেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়ন যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে অথবা নভেম্বরের শুরুতে প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করতে পারে বিএনপি। তবে এখন ডেটলাইন চূড়ান্ত করা হয়নি। দেশের পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে দলটি মননোনয়প্রত্যার্শীদের নাম প্রকাশ করা হবে।
জানা গেছে, আজ (সোমবার) দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠক আছে। বৈঠকে মনোনয়ন নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হতে পারে। এ ছাড়া দলের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা চলছে, একটি আসনে শুধু একজনকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে কোনো বিকল্প বা দ্বৈত প্রার্থী রাখা হবে না। এর লক্ষ্য হলো ভেতরে ভেতরে বিভাজন রোধ করা এবং ঐক্যবদ্ধ প্রচারণা নিশ্চিত করা।
এদিকে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ইতোমধ্যে নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগ, তৃণমূল মতবিনিময় সভা ও সাংগঠনিক কর্মসূচি জোরদার করেছেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহী অঞ্চলে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্র হয়ে উঠেছে। অনেকে ইতোমধ্যেই স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বসে ভোট কেন্দ্রভিত্তিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করছেন। কেউ কেউ আবার নিজের মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে তদরিব লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
তবে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, কোনো তদবির এবং লবিং এ কাজ হবে না। বিএনপি এবারের মনোনয়ন দেবে শুধু তাদেরই, যাদের বিরুদ্ধে গুরুতর সাংগঠনিক অভিযোগ নেই এবং যারা দলীয় নীতির প্রতি আনুগত্যশীল।
দলীয় একজন সিনিয়র নেতা বলেন, ‘আগামী নির্বাচন আমাদের জন্য টার্নিং পয়েন্ট। তাই যিনি ভোটের মাঠে লড়তে পারবেন এবং জনগণের আস্থা অর্জন করবেন তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক সংসদ-সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই ভোটারদের কাছে যাচ্ছে। দলের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি। নির্বাচনি আমেজ শুরু হয়ে গেছে। দলীয়ভাবে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়নি। দলের দুই শীর্ষ নেতা ইতোমধ্যে বলেছেন খুব শিগগিরই যারা দলের মনোনয়ন পাবেন তাদের সবুজ সংকেত দেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্রহণযোগ্য এবং দলের প্রতি আনুগত্যদেরই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে। দল থেকে এবং হাইকমান্ডের নিজ সোর্সের মাধ্যমে ইতোমধ্যে জরিপের কাজ শেষ হয়েছে। খুব শিগগিরিই ২০০ জনকে দল থেকে সবুজ সংকেত দেওয়া হবে। আসলে নিজ নিজ যোগ্যতা বলে অনেকই জানানে কারা দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন তারা তো আগে থেকে নির্বাচনি গণসংযোগ করছেন।
সংসদ নির্বাচনে শিগগিরই আসনভিত্তিক একক প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দেবে বিএনপি। সম্প্রতি বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এমনটাই জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তফসিল ঘোষণার পরে আমরা আইনানুগভাবে পার্লামেন্টারি বোর্ডের মাধ্যমে মনোনয়ন দেবো। তখন সেটা চূড়ান্ত এবং অফিসিয়াল হবে।
কেকে/ এমএস