প্রকৃতির দান সমুদ্র সৈকত ঘিরে লাখো মানুষের সমাগম হয় কক্সবাজারে। এই সমুদ্র নগরী কক্সবাজার পর্যটন নগরী হিসাবে পরিচিত। পর্যটকরা আসে এখানে একটু স্বস্তি ও প্রশান্তির খুজে। তবে এখন একটু বিরক্তির কারণ হিসাবে দাড়িয়েছে। সম্প্রতি তৃতীয় লিঙ্গ ও পতিতাবৃত্তির কারণে বেশ বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে অনেকের। পরিবার নিয়ে সন্ধ্যার পর সমুদ্র সৈকতে নামলে পরিবারের সদস্যদের সামনে বিভিন্নভাবে অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে পরিবারের সামনে হেয় করছে এমনটা খবর রয়েছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা কক্সবাজার দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। দিনের বেলায় চিত্র একরকম থাকলেও সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই বদলে যায় নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থানের চিত্র। লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী সৈকত পয়েন্ট ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি সক্রিয় নারীচক্র, যারা পতিতাবৃত্তি ও কথিত স্পা সেন্টারের আড়ালে পরিচালনা করছে অসামাজিক কার্যকলাপ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সূর্য অস্ত যাওয়ার পরপরই সৈকতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে জড়ো হতে থাকে মুখে মাস্ক ও কালো বোরকা পরিহিত নারী দল। কেউ আবার ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে সাজেন বাহারী পোশাকে। তারা দলবদ্ধভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে পর্যটকদের আশেপাশে, গোপনে প্রস্তাব দিচ্ছে বিভিন্ন চুক্তির। সম্প্রতি ট্যুরিস্ট পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে হোটেল থেকে বেশ কয়েজন পতিতা আটক করেছিল। তারপরেও তা তোয়াক্কা না করে হোটেল, কটেজসহ বিভিন্ন জায়গায় এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
এসব নারী নিজেদের নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য বলে দাবি করলেও, পুরো প্রক্রিয়াটি পরিচালিত হচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে। শুধু এসব নারী নয় আশেপাশে দেখা মিলেছে অনেক দালালেরও। সন্ধ্যার পরে অনেক রিকশা ও ভাসমান দোকানীরা কৌশলে অফার দেন ঘুরতে আসা পর্যটকদের।
জানা যায়, এখান থেকে একটা বড় অংশের ভাগ পান তারা। পরিচয় গোপন রেখে কয়েকজন রিকশাচালকের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানান, কলেজ পড়ুয়া সুন্দরী মেয়ে আছে তাদের কাছে। ঘণ্টা চুক্তিতে মানভেদে ছোট-বড় অঙ্কের টাকা গুনতে হবে।
সুগন্ধা পয়েন্টে এ প্রতিবেদক ছদ্মবেশে কথা বলেন ‘শিমরান’ নামের একজন নারী সদস্যের সাথে। সমুদ্র তীরে মুখে মাস্ক আর কালো বোরকা পরে দাঁড়িয়ে থাকা নারী জানান, “আমরা সম্পূর্ণ নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাই, কোনো সমস্যা হবে না। সময়ভিত্তিক চুক্তিতে সবকিছু হয়। টাকার অংক নির্ভর করে সময় ও প্যাকেজের ওপর।”
অন্যান্য কয়েকজন নারীর সাথেও কথা বলে জানা যায়, তাদের পেছনে রয়েছে প্রভাবশালী হোতারা। তারা নির্দিষ্ট হোটেল ও গেস্ট হাউজ ভাড়া নিয়ে পরিচালনা করছে এসব কার্যক্রম। হোটেলগুলোর মালিক বা ম্যানেজমেন্টের সহযোগিতায় এসব অপতৎপরতা নির্দ্বিধায় চলছে এসব। শুধু পতিতাবৃত্তিই নয়, শহরে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অভিযোগ রয়েছে পকেটমার, ছিনতাই এবং ব্ল্যাকমেইলের ঘটনাও বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। পর্যটকদের কিছুটা অসতর্কতা ও প্রশাসনের নজরদারির ঘাটতির সুযোগ নিয়ে দিনকে দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে এই চক্রটি। স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এসব চক্র নানাভাবে ফাঁদে ফেলে ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে সবকিছু লুটে নিচ্ছেন।
বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা পর্যটকরাও নানা রকম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানি বলেন, এই সংবদ্ধ নারীগুলো ফাঁদে ফেলে কম বয়সী ছেলেদের নিয়ে যায় হোটেলে। পরে তাদেরকে ব্লাকমেইল করে, ভয়-ভীতি দেখিয়ে সবকিছু ছিনিয়ে নেয়। এদের হাত অনেক বড়, পুলিশ কিছু বলে না, মাঝে মাঝে নামমাত্র অভিযান চালায় আবার আগের মতো হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সুগন্ধা পয়েন্টের এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছি। তবে অনেক সময় চক্রগুলো কৌশলে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু হোটেল ও স্পা সেন্টারের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” তিনি বলেন, প্রশাসনের পাশাপাশি হোটেল মালিক, স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং পর্যটকদেরও সচেতনতা জরুরি।
কেকে/এআর