সংস্কার, জুলাই সনদ, জুলাই গণহত্যার বিচার ও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা গড়ে উঠলে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে হতে পারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যদিও এখনও কিছু দলের “শর্তসাপেক্ষ” অবস্থান বজায় আছে, তবে ইতিমধ্যে কয়েকটি দল জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল প্রার্থী ঘোষণা ও বাছাই শুরু করেছে।
বিএনপির প্রার্থী নির্বাচনী কার্যক্রম এখনো দৃশ্যমানভাবে শুরু না হলেও, শীর্ষ নেতৃত্ব ভেতরেই হোমওয়ার্ক শেষ করে নিচ্ছেন। জানা গেছে, অক্টোবর মাসে প্রার্থী ঘোষণা দৃশ্যমান হবে। এ ঘটনায় প্রার্থী নির্বাচনে জেন-জির মনোভাব, ক্যারিশমাটিক ব্যক্তিত্ব, তরুণ উদ্যম, জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক দক্ষতা, দলীয় আনুগত্য ইত্যাদি বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দলটি বিভিন্ন আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হলেও, চট্টগ্রাম–২ (ফটিকছড়ি) আসনে এখনো প্রার্থী চুড়ান্ত হয়নি। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছেন এবং ভোটারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে মাঠে অবিরত কাজ করছেন।
এদিকে, বিএনপি দেশের বিভিন্ন আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করে তাঁদের কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছে হাইকমান্ড। ফলে চট্টগ্রাম -২(ফটিকছড়ি) আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। ভোটের আগে দলের মধ্যেই প্রার্থী হওয়ার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে হচ্ছে তাঁদের। পাশাপাশি রয়েছে দলীয় কোন্দল। কোন্দল মিটিয়ে দ্রুত প্রার্থী চূড়ান্ত করতে না পারলে নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে , চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে বিএনপির তিন নেতা মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাঁরা হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব সরওয়ার আলমগীর ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহার।
এছাড়া কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়জী; উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ছালাউদ্দিন; বিএমএ নেতা ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরীর নামও সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছে।
কাদের গণি চৌধুরী বলেন, আগামী সংসদ হবে শিক্ষিত ও জ্ঞানীদের। যারা আইন প্রণয়ন করতে পারবেন তাদের। ‘ইয়েস’ আর ‘নো’ বলার সংসদ হবে না। ফটিকছড়ি থেকে আমি আগেও বিএনপির নমিনেশন চেয়েছিলাম। এবারও দলের নমিনেশন চাইব। আমি মনে করি দল শিক্ষিত, মার্জিত ও ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দেবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে রাজনীতির করছি এবং ত্যাগী কর্মীরা আমার সাথে আছেন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে কর্নেল (অব.) আজিম উল্লাহ বাহার এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। সেই নির্বাচনে তিনি বিতর্কিত ফলাফলে পরাজিত হন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় দক্ষিণ ফটিকছড়ির তকিরহাটে তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। তবে তিনি দলের আদর্শকে ধরে রেখে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।
কর্ণেল বাহার বলেন, আমি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে এলাকার মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। জনগণের সাথে আমার গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। দলের দুঃসময়ে মাঠে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। তৃণমূলের কর্মীরা আমার পাশে আছে। যদি দল আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে ফটিকছড়িকে উন্নয়ন ও পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি মডেল আসন হিসেবে গড়ে তুলব। বিএনপির বিজয় নিশ্চিত করতে আমি সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে চাই।
সরওয়ার আলমগীর জানান, আমি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। দলের কঠিন সময়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের পাশে থেকে কাজ করেছি। ফটিকছড়ির মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে ছিলাম, এখনো আছি। আসন্ন নির্বাচনে আমার একমাত্র লক্ষ্য হবে ফটিকছড়িবাসীর অধিকার আদায় করা এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে অবদান রাখা। আশা করি দল ত্যাগী, নিবেদিতপ্রাণ ও জনপ্রিয় নেতাদেরই মূল্যায়ন করবে।
কেকে/ আরআই