ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের সলিমগঞ্জ ফাঁড়িতে পুলিশ হেফাজতে আব্দুল্লাহ নামের এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) মো. মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নিহত আব্দুল্লাহ (২৭) বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তেজখালী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের দিনমজুর আবুল মিয়ার ছেলে। সোমবার রাত ১০ টায় বিশনারামপুর-বাহেরচর ঈদগা মাঠে জানাযা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
তার এ আকস্মিক মৃত্যুতে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। অবিবাহিত আবদুল্লাহ স্বজনরা ময়নাতদন্তের পর লাশ বাড়িতে আনলে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়। তাদের দাবী মিথ্যা অপবাদ দিয়ে পুলিশ পিটিয়ে মেরে ফেলছে আব্দুল্লাহকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ১৭ সেপ্টেম্বর ছলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড়াইল গ্রামে নগদ অর্থ চুরির অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার সূত্র ধরে ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে সলিমগঞ্জ বাজার সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে আব্দুল্লাহকে আটক করা হয়। স্থানীয় কয়েকজন তাকে মারধর করে বাড়িতে নিয়ে যায় এবং সেখানে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় আব্দুল্লাহকে সলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়িতে সোপর্দ করা হয়। ফাঁড়িতে নেওয়ার পরও নির্যাতন চলতে থাকে। তার হাতের নখ উপড়ে ফেলা হয়, কপালে প্রচণ্ড আঘাত করা হয়।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নবীনগর থানার ওসি এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে অবগত না করে তাকে চার দিন ফাঁড়িতে আটকে রাখা হয় এবং বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় বাবু (রাব্বি) ও মাসুদ রানা নামে দুজনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হলেও আব্দুল্লাহকে ফাঁড়িতে আটকে রাখা হয়।
এমতাবস্থায় আব্দুল্লাহ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে সলিমগঞ্জ অলিউর রহমান জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিন দিন চিকিৎসা চলার পর অবস্থার অবনতি হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আব্দুল্লাহ মারা যান।
এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই সাকিল মিয়া বাদী হয়ে (২৯ সেপ্টেম্বর) নবীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ছলিমগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মহিউদ্দিন, তবি মিয়া, আলামিন, আয়নাল হকসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে আরো ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা একত্রিত হয়ে আব্দুল্লাহকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন এবং পরিকল্পিতভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেন।
আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পর স্থানীয় জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে সোমবার সকালে সলিমগঞ্জ ফাঁড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে। উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কা থাকায় ঊর্ধ্বতন প্রশাসন ফাঁড়িটি বন্ধ করে দেয় এবং পরে সেনা মোতায়েন করে।
এদিকে, ঘটনার পর পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মহিউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। এরপর সোমবার বিকাল ৩টায় সলিমগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা পুলিশ সুপার মো. এহতেশামুল হক বলেন, এ ঘটনায় এক পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজনকে আসামি করে থানায় মামলা করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছি। পাশাপাশি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
কেকে/ এমএস