রামু নাইক্ষ্যংছড়ি হয়ে গর্জনিয়া সিমান্ত সড়কের ৩টি বেইলি সেতু ও সড়কের অবস্থা ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ৪টি সেতুর মধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি ক্যাম্প এর পাশেরটি কাজ শেষ হলেও অন্য সেতুর কোন খবর নেই। গর্জনিয়া বাজারের আগে যে বেইলি সেতুটি আছে সেটির পাঠাতন উঠে গেছে।
বেশ কয়েকবার যানবাহন পাটাতনে আটকে গেছে এবং বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছে এমনটা জানিয়েছে। এমনটা থাকলে যেকোন মুহুর্তে ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। যদিওবা বেইলি সেতু গুলি যেমন ঝুকিঁপূর্ণ ঠিক তেমনি সড়ক ছোট হওয়ার কারণে চলাচলেও সাধারণ মানুষের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। যার কারণ ভারী যানবাহন চলতে না পারায় সবজিসহ নিত্যপণ্যেও দাম দিন দিন বেড়েই চলছে। যদিওবা আগামী বছর কাজ শুরু হওয়ার কথা বলেছেন সড়গক ও জনপথ বিভাগ বান্দরবান। কারণ এখন যে অবস্থায় আছে যেকোন মুহুর্তে ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। এই নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন বড় ধরনের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না এমনটা মনে করছেন এলাকাবাসী। বাজেট বরাদ্দ হলেও কাজ শুরু হতে সময় নেওয়ার কারণে এলাকবাসী আতঙ্কে আছেন।
রামু নাইক্ষ্যংছড়ি হয়ে একমাত্র সিমান্ত সড়ক হলেও গুরুত্ব সহকারে সড়কের তদারকি নেই বলে মনে করছেন এলকাবাসি। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি-গর্জনিয়া-বাইশারী-দোছড়ি সড়কে একটি বেইলি সেতু ধসে পড়েছিল।
২০২০সালের ২২ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ভোরে অতিরিক্ত মালবোঝাই একটি ট্রাক পার হওয়ার সময় ১১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তর সংলগ্ন এলাকার ওই সেতু ধসে পড়েছিল। বেইলি সেতুটি ১৯৮৭ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি ২০১৪ সালের ২৪ জুলাই একবার ধসে পড়ে গিয়েছিল বলে জানা যায়। তখনো বেশ কয়েক দিন ধরে যোগাযোগ বন্ধ ছিল। সেতুর ওপর দিয়ে পাঁচ টনের অধিক ভারী যানবাহন চলাচল না করার নির্দেশ থাকলেও তা মানা হয়নি।
সেতুর ওপর দিয়ে ১৫-২০ টনের গাছ, পাথর ও অন্যান্য মালবাহী যানবাহন চলাচল করে। গতকাল ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত একটি ট্রাক যাওয়ার সময় সেতুটিতে ধসে পড়ে যায়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রামু থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কটির দায়িত্বে রয়েছে বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এই সড়কে ৩টি বেইলি সড়কের প্রথমটি হলো বন বিভাগের বাকঁখালী রেঞ্জের পাশের সেতুটি। এটি অনেকাংশে নীচু হয়ে গেছে ও পাঠাতন নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। একই সড়কের কয়েক কিলোমিটার গেলে মইশকুম বেইলি সেতু। সেটিও নড়বড় অবস্থায় রয়েছে। এই সেতু থেকে আধা কিলোমিটার গেলেই জারুলিয়াছড়ি ছোট্র বেইলি সেতু। যেটি কয়েকদিন আগে নিচের স্টিল গুলো সরে গেলে ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে বেশ কয়েক দিন।
পরে সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমেন শর্মা সেতুটি শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের যাতায়াতের জন্য ঠিক করে দেন। এই সড়ক থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি থানা ও বিজিবি ক্যাম্প পার হলেই আরেকটি বেইলি সেতু। সেটিও বেশ কয়েকবার ভেঙ্গে গিয়ে সাধারণ মানুষ দুর্ঘটনায় পড়ে। সর্বশেষ গর্জনিয়া বাজারের পাশের বেইলি সড়কটির পাটাতন সরে যাচ্ছে। যার কারণে যেকোন মুহুর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
এদিকে রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি- ১১কি.মি. সড়কটি স্বাধীনতার ৫১ বছরেও সমপ্রসারণ হয়নি। চরম দুর্ভোগে এলাকার চলাচল করা সাধারণ মানুষ। দেশের পূর্ব-সীমান্তের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক এর মাঝে সাম্প্রতিক সময়ে নাইক্ষ্যংছড়ি জারুলিয়াছড়ি বেইলী ব্রিজটির পাটাতন ভেঙে যাওয়ায় সাধারণ যাত্রীরা চরম বিপাকে পড়েছে।
এ সড়কটি দেখভাল করে বান্দরবান সড়ক বিভাগ, বর্তমানে বেইলী সেতুটি মেরামত কাজ চলছে শুধুমাত্র নামে। এদিকে সড়কটির বর্তমানে চওড়া মাত্র ১০ ফুট কিছু অংশে ১১ ফুট। কাভার্ড ভ্যানের প্রস্থ সাড়ে ৮ ফুট। দূরপাল্লার মালবাহী গাড়ির চওড়াও সাড়ে ৮ ফুট। আর নাইক্ষ্যংছড়ি-বান্দরবান সড়কে চলাচলকারী পূর্বাণী বাস এ সড়কে চলাচল করলে আর কোনো অংশই থাকে না সড়কের পাকা অংশে। সড়কে এভাবে গাড়ি চলাচল করে। এমন কি মানুষও হাঁটতে পারে না। এমতাবস্থায় বিপরীত দিক থেকে ট্রাক, মালামাল ও যাত্রীবাহী গাড়িগুলোর কী অবস্থা হয় বলা মুশকিল বলে মন্তব্য করেন এ সড়কের গাড়ি চালকরা।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আবসার ইমন ও সাবেক প্রধান শিক্ষক মংশৈ প্রুরু মার্মা বলেন, সড়কটি দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার। স্বাধীনতার ৫১ বছর পার হলো এখনও সে সড়কটি বেহাল অবস্থা। চওড়া অতি ছোট হওয়ায় গাড়ি চলাচলে নানা জটিলতা দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে দুর্ঘটনা এ সড়কের নিত্য সঙ্গী। আমাদের দাবি দ্রুত এ সড়কটি যেন সংস্কার করা হয়।
কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু মো. ইসমাঈল নোমান বলেন, সড়কের দু’পাশ ও পূর্বাংশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩ শতাধিক, এতে শিক্ষক শিক্ষার্থী আছে ৩০ হাজারাধিক। বিশেষ করে কক্সবাজার জেলা খাদ্যশস্য ভাণ্ডার খ্যাত কচ্ছপিয়া ও গর্জনিয়া ইউনিয়নসহ সীমান্তের ৬ ইউনিয়নের উৎপাদিত পণ্য বেচাকেনার হাট গর্জনিয়া বাজারের পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে রামু নাইক্ষ্যংছড়ি-গর্জনিয়া বাজার সড়কটির সমপ্রসারণ খুবই দরকার। রামু নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের প্রত্যেকটি বেইলি সেতু ঝুকিপূর্ণ ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। যার কারণে পন্য সামগ্রীর দাম বেশি নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা।
নাইক্ষ্যংছড়ি স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল জানান, আমরা নাইক্ষ্যংছড়ি বাসি দীর্ঘ বছর এই সমস্যায় ভোগছি। সড়ক যেমন ছোট ঠিক তেমনি প্রতিটি ব্রীজ ঝুকিপূর্ণভাবে রয়েছে। সম্প্রতি জারুলিয়াছড়ি এলাকার যে সেতুটি রয়েছে তার পাটাতন সরে গিয়েছিল। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঠিক করে দিলে যান চলাচল শুরু হয়।
বান্দরবান সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলি মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের উন্নয়ন ও নতুন করে ৩টি সেতু নির্মাণের জন্য ২৪২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে সম্প্রতি পাশ হয়েছে। একনেকে পাশ হওয়া ৮৯০ কোটি টাকার মধ্যে বান্দরবান সড়ক ও জনপদ বিভাগের তিনটি সড়কের উন্নয়ন হবে। যার একটি রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক। শীঘ্রই পরামর্শক সরেজমিন কাজ শুরু করবে। এ ক্ষেত্রে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
কেকে/এআর