হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে খুলনায় পূজা মণ্ডপগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পী ও পূজা আয়োজকরা।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলায় মোট ৯৭৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। গত বছরের তুলনায় এবছর খুলনায় পূজা মন্ডপ বেড়েছে ১০৫টি। যা খুলনার ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ আয়োজন হিসেবে ধরা হচ্ছে।
দেবী দুর্গা, লক্ষী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ ও মহিষাসুরের প্রতিমা গড়তে শিল্পীরা দিনরাত কাজ করছেন। পাশাপাশি চলছে স্টেজ নির্মাণ, রঙের কাজ ও আলোকসজ্জা। দর্শনার্থীরা প্রতিমার কাজ দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন মণ্ডপে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে উৎসবের উচ্ছ্বাস চোখে পড়ার মতো।
২৭ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীর আগমনবার্তা শুরু হবে। আর ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে পাঁচ দিনের দুর্গোৎসবের। খুলনার শীতলাবাড়ী, শিববাড়ী, আর্য্য ধর্মসভা, দোলখোলা ও দৌলতপুরসহ নগরীর বিভিন্ন মন্দিরে ব্যস্ততা চোখে পড়ছে।
খুলনা জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের তালিকা অনুযায়ী মহানগরে ১২০টি মণ্ডপ জেলায় ৮৫৭টি মণ্ডপ সব মিলিয়ে খুলনায় মোট ৯৭৭টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। সদর থানায় ২৪টি, সোনাডাঙ্গায় ১১টি,খালিশপুরে ৭টি, দৌলতপুরে ২৪টি, খানজাহান আলীতে ৮টি, হরিনটানায় ৫টি, লবনচোরায় ৯টি,আড়ংঘাটায় সর্বাধিক ৩২টি মণ্ডপ। জেলার মধ্যে ডুমুরিয়ায় ২১৪টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে পূজা। পাইকগাছায় ১৪১টি, বটিয়াঘাটায় ১০৫টি, তেরখাদায় ৯৮টি, রূপসায় ৭৫টি, দাকোপে ৭৪টি, দিঘলিয়ায় ৬১টি, কয়রায় ৫৫টি এবং ফুলতলায় ৩৪টি।
দুর্গোৎসবকে ঘিরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। খুলনা জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে জানানো হয়েছে, প্রতিমা গড়ার সময় থেকে বিসর্জন পর্যন্ত সার্বিক নিরাপত্তা থাকবে। প্রতিটি মণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ টহল থাকবে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের ত্রাণ বিভাগ থেকে প্রতিটি মণ্ডপে ৫০০ কেজি চাল অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জেলার বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও চলছে মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ, আবার কোথাও শুরু হয়েছে রঙের কাজ। শিল্পীরা আপন মনে ফুটিয়ে তুলছেন দেবী দুর্গার রূপ। আয়োজকরাও নিচ্ছেন শেষ সময়ের প্রস্তুতি।
প্রতিমা শিল্পীরা জানাচ্ছেন, তাদের অন্য বছর থেকে এবছর প্রতিমা তৈরির চাপ বেশি দুর্গোৎসবকে ঘিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও মণ্ডপে আসেন প্রতিমা দর্শনে। এতে তৈরি হয় এক ভিন্নধর্মী সামাজিক সম্প্রীতির পরিবেশ। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো আয়োজন করছে নাটক, গান ও নৃত্যের অনুষ্ঠান। ফলে উৎসবটি হয়ে উঠছে ধর্মীয় আয়োজনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মিলনমেলা।
কেকে/ এমএস