বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার একটি গ্রাম ভবেরমূড়া। এ গ্রামের পাক দরবার শরীফ নামে মাজারের একটি টিউবওয়েলে চাপ ছাড়া ১৮ বছর ঘরে পানি উঠছে।
সীমান্তবর্তী গ্রাম হওয়ায় পাশের দেশ ভারত থেকেও বহু লােকজন আসেন এ টিউবওয়লের পানি খেতে ও দেখতে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে কৌতূহলের শেষ নেই। তারা মনে করেন, এই পানি পান করলে মনের আশা পূরণ হবে। সে জন্য পানি পান করার পর যাওয়ার সময় পানি নিয়ে যান অনেকে। এছাড়াও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলার মানুষজন আসেন মাজারে।
স্থানীয়দের মুখে প্রচলিত আছে, শতবর্ষী এই মাজারর সুপেয় পানির অভাব ছিলাে। মাজারের ভক্তরা পুকুর থেকে পানি পান করতা। বিশুদ্ধ না হওয়ায় এই পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুকিপূর্ণ ছিলোল। এই এলাকার অন্যরাও বিশুদ্ধ পানির বড় সমস্যায় ছিল। ১৮ বছর আগে বুড়িচং উপজেলা প্রশাসনের সহয়তায় মাজার প্রাঙ্গণে একটি টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়। তারপর আর টিউবওয়েলের হাতল লাগানোর দরকার হয়নি। অনবরত পানি আসছে। সেই থেকে শুরু। এখনো একই রকমভাবে পানি পড়ছে।
ভারতের নজিরপুরা গ্রামের বাসিন্দা মো. শরীফুল হাসান বলেন, ‘এই টিউবওয়েলের পানি দিয়ে ওযু ও গোছলসহ খাবার ও রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া বেশ কিছু জমির ফসলও ফলে এই টিউবওয়েলের পানি দিয়ে।
মাজারটির খাদেম মাওলানা কাজী দিদারুল হক বলেন, ‘এই মাজার যিনি সমাহিত আছন তিনি একজন পীর। তার নাম কাজী আবদুল আলী শাহ। সর্ম্পকে তার দাদা। এই মাজার আরেকজনকেও সমাহিত করা হয়েছে। তিনি পীর আবদুল আলী শাহের বাবা কাজী সাফাল উদ্দিন শাহ। বাংলাদশ ও ভারত মিলিয়ে পীর আবদুল আলী শাহের ভক্ত অনুসারীর সংখ্যা লক্ষাধিক। প্রতি বছর মাঘ মাসের পূর্নিমায় এই মাজারে ওরস হয়। সে সময় বহু ভক্ত আসেন মাজার।
স্থানীয় বাসিন্দা দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘দূরদুরান্ত থেকে অনেকেই আসেন এই মাজারে। তারা কৌতূহল নিয়ে দেখেন কিভাবে একটি টিউবওয়েল দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি পড়ে। তবে চৈত্রমাসে পানি প্রবাহ কিছুটা কম থাকে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নত্বত্ত বিভাগের সরকারি অধ্যাপক মুর্শেদ রায়হান বলেন, ‘পৃথিবীতে যা কিছু ঘটে সেটি ব্যাখ্যাযোগ্য এবং প্রাকৃতিক যেকোনো ঘটনা বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। নলকূপ স্থাপনের জন্য পাইপ স্থাপনের পর অনবরত পানি নির্গমনের ভূতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা আছে। ভূ-গর্ভস্থ লেয়ারে গ্যাস থাকলে গ্যাসের চাপে অনবরত পানি বের হতে পারে। যেহেতু কুমিল্লায় গ্যাস কূপ আছে, সেহেতু পানি নির্গমনের স্থানেও ভূগর্ভে গ্যাস থাকতে পারে। বর্ষাকালে ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার উপরে থাকায় বেশি পানি বের হয়, চৈত্র মাস বা গ্রীস্মকালে পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় কম পানি নির্গত হয়।’
কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার জনস্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী তানভীর হাসান বলেন, ‘মাটির নিচে বিভিন্নস্তরে পানি জমা থাকে। সেখান থেকে পানি নির্গমনের সুযোগ পেলে পানি উপরে উঠবে। ভবেরমূড়ার নলকূপ দিয়ে পানি উঠার বিষয়টি এমন হতে পারে।’
কেকে/ এমএ