গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী-গফরগাঁও আঞ্চলিক সড়কে মাটিকাটা নদীর ওপর প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে একটি সেতু। তবে সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুটি কোনো কাজে আসছে না, ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন ৬ গ্রামের মানুষ।
অভিযোগ উঠেছে, কোটি টাকার অবকাঠামো বিনিয়োগ হলেও সংশ্লিষ্ট দফতরের অনাগ্রহ ও জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে সাধারণ মানুষ এখনো এই সুবিধা পাচ্ছেন না।
কোটি টাকার সেতু, কিন্তু ব্যবহার নেই
বরমী বাজার সংলগ্ন অংশে নির্মিত ৯৭ দশমিক ৩৪ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০২৩ সালে শেষ হয়। কিন্তু উত্তর পাশের পাইটালবাড়ি অংশে সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুটি এখন অচল অবস্থায় পড়ে আছে।
জমি অধিগ্রহণ জটিলতা
গাজীপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের সূত্র বলছে, ‘সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ১ একর ৩৭ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হলেও সেখানে বসবাসকারী ১৭টি পরিবার এখনো ক্ষতিপূরণ পাননি। ফলে কাজ থেমে আছে প্রায় দুই বছর ধরে।’
সরেজমিনে দেখা গেছে
বরমী বাজার পাশের অংশে সেতুর কাজ সম্পূর্ণ হলেও, পাইটালবাড়ি অংশে শুধু বালুর বস্তা ফেলে অস্থায়ীভাবে চলাচল করা সম্ভব। সেখানে সড়কের জায়গাজুড়ে ঘন বসতি থাকায় সঠিক রাস্তা নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। বৃষ্টির সময় ওই অংশে চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।
পাইটালবাড়ি গ্রামের জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণের টাকা না পাওয়ায় সড়ক হচ্ছে না। রাস্তা হলে আমরা অনেক সুবিধা পাবো। এখন আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থী থেকে বৃদ্ধরা পর্যন্ত চরম কষ্ট করে চলাচল করছেন।’
একই দাবি স্থানীয় আরও বহু বাসিন্দার। তারা জানান, জনপ্রতিনিধিদের বহুবার জানানো হলেও কোনো কাজ হয়নি।
‘এখন আর বলতেও ইচ্ছা করে না। আমরা বুঝে গেছি, কারো মাথাব্যথা নেই।’—বলেন আরেক গ্রামবাসী।
শ্রীপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
স্থানীয়রা বলছেন, ‘একদিকে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজ শেষ, অন্যদিকে সংযোগ সড়ক না থাকায় সরকারের এত বড় প্রকল্প এখন লোকদেখানো অবকাঠামোতে পরিণত হয়েছে। দ্রুত জমির সমস্যা সমাধান করে রাস্তা নির্মাণের দাবি তাদের।’
সেতু নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল সহজ যোগাযোগ ও উন্নয়ন, কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় সেই উদ্দেশ্য পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। জনগণের করের টাকায় নির্মিত এমন অবকাঠামো থেকে যদি তারা সুফল না পান—তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, কার জন্য এসব প্রকল্প?
সওজের গাজীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শরিফুল আলম বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণের সম্পূর্ণ টাকা আমরা ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় জমা দিয়েছি। জমির মালিকদের কাগজপত্রের জটিলতার কারণে তাদের টাকা দেওয়া হয়নি। জটিলতা শেষ হলে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে।’
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে জটিলতা শেষ করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে সংযোগ সড়ক নির্মাণের নির্দেশনা দেওয়া হবে।’
কেকে/ এমএ