ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ফান্দাউক গ্রামের মুন্সীপাড়ায় আলোচিত আলম মিয়া (৫৮) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ছিল আলম মিয়ার একমাত্র ছেলে মাহমুদুল হাসান (২১)। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ৩ ফুট লম্বা লোহার পাইপ উদ্ধার করেছে পিবিআই। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে নিজের বাবাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে মাহমুদুল হাসান।
গত ৩ সেপ্টেম্বর সকালে নিজ ঘর থেকে আলম মিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, রাতের কোনো একসময় দুর্বৃত্তরা টিনের চাল কেটে ঘরে ঢুকে তাকে হত্যা করেছে এবং আলমারির আড়াই লক্ষ টাকার স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়েছে। ছেলে মাহমুদুল মামলার এজাহারে অজ্ঞাত ডাকাতদের দায়ী করে এবং সৎমা আমেনা ও তার আগের স্বামীকে সন্দেহভাজন হিসেবে উল্লেখ করে। তবে মামলাটি দায়ের করা হয় ৩ দিন পর, যা তদন্তে পুলিশের কাছে সন্দেহজনক বলে প্রতীয়মান হয়।
পিবিআইয়ের তদন্তে বেরিয়ে আসে সম্পত্তি বিরোধ ও পারিবারিক দ্বন্দ্বই হত্যার মূল কারণ। মৃত্যুর আগের দিন আলম মিয়া তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে জমি, নগদ অর্থ, স্বর্ণ ও ব্যাংক হিসাব দেওয়ার আশ্বাস দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ছেলে মাহমুদুল। বাবার দ্বিতীয় বিয়েতে প্রচুর অর্থ ব্যয় এবং তার প্রতি অবহেলার কারণে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটে যাওয়ার ভান করে সে বাড়ি থেকে বের হয়, কিন্তু খোলা রাখা দরজা দিয়ে ফিরে এসে মাচার ওপর লুকিয়ে থাকে। রাত দেড়টার দিকে ঘুমন্ত বাবার মাথায় লোহার পাইপ দিয়ে আঘাত করে তাকে হত্যা করে এবং পাইপটি পাশের পুকুরে ফেলে দেয়।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) গ্রেফতারে পর আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যার অস্ত্র উদ্ধার করে পিবিআই। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জহিরুল আলমের আদালতে হাজির করা হলে মাহমুদুল ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
পিবিআই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার শচীন চাকমার তত্ত্বাবধানে তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং সম্পত্তির লোভ ও পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরেই ছেলের হাতে খুন হয়েছেন আলম মিয়া।’
কেকে/ এমএ