দেশে আজ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন রকম বক্তব্য দিচ্ছে। নিজের বক্তব্য দেয়ার অধিকার সকলের এবং সকল দলেরই আছে। কিন্তু বক্তব্য দিতে গিয়ে দেশের পরিস্থিতি যদি অস্বাভাবিক হয়, শ্বৈরাচার ফিরে আসার মত পরিস্থিতি তৈরি হয় তবে সেটি কোন অবস্থাতেই ভালো হবেনা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঠাকুরগাঁও বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের বড় মাঠে দীর্ঘ ৮ বছর পর অনুষ্ঠিত জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠন না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন থেমে থাকবেনা। গণতন্ত্র পূর্ণতা না পাওয়া পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন চলমান থাকবে। আমাদের দ্বিতীয় শপথ ৩১ দফার আলোকে এই বাংলাদেশকে আবারও পুনর্গঠন করতে জীবন বাজি রেখে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশে জবাবদিহিতার সকল ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিলো, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিলো। মানুষকে গুম, খুন ও হত্যা করা হয়েছিলো। ১৯৭১ সালে লক্ষ প্রানের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পাওয়ার পর দেশের মানুষের অনেক প্রত্যাশা ছিলো। তখন থেকেই গণতন্ত্রের টুটি চেপে ধরার ষড়যন্ত্রের জাল তারা বুনেছিলো। তারা গুম, খুন, মিথ্যা মামলার আর লুটপাটের রাজনীতি শুরু করেছিলো, মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি শুরু করেছিলো।
তারেক রহমান বলেন, আজ আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে - জাতীয় নির্বাচন আমরা যত সহজ ভাবছি ততটা সহজ নয়। যেভাবে বিএনপি জনগণকে সাথে নিয়ে গণতন্ত্রের আন্দোলন জোরদার করে তুলেছিল এবং সফল করেছিল। আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক- যতক্ষণ পর্যন্ত এই দেশে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা না হয়, যতক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশ গণতন্ত্রের রেললাইনে উঠে না আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন থেমে থাকবে না। আজকের এই অধিবেশনে এটিই হোক আমাদের প্রথম প্রতিজ্ঞা।
তারেক আরো বলেন, বহু মানুষের আত্মদানের মাধ্যমে আজকের এ স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, মানুষের এখনকার প্রত্যাশা দেশকে নতুন করে গড়ে তোলার। জনগণই বাছাই করে নেবে কে আগামী দিনে দেশকে পরিচালনা করবে। যাদের নীতি আদর্শ জনগণ পছন্দ করবে তারাই দেশ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনের বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছে। আজকে যখন সমগ্র জাতি উন্মুখ হয়ে আছে একটা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমাদের সরকার গঠন করবো, দেশ গণতন্ত্রে ফিরে যাবে। ঠিক তখনি এই ষড়যন্ত্রগুলো শুরু হয়েছে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই ড. ইউনূসকে। তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করছেন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে। তিনি বলেছেন- একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ তাকে এই নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরাতে পারবেনা। সেইজন্য আমি তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। সেই সাথে ধন্যবাদ জানাই সে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে যারা নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র উত্তোরনের পথকে বেছে নিতে চেয়েছেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুল হাবীব দুলু বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার ও তার সহযোগীদের উদ্দেশ্যে বলেন, গলায় গামছা দিয়ে নিয়ে আসবো, ভারতে গিয়ে রক্ষা পাবে? টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছো, সেই টাকাগুলো ফেরত দিতে হবে। এখন আবার শুনছি নির্বাচন করবে, এগুলো চিন্তা বাদ দেন।
তিনি বলেন, গণহত্যা করেছেন, টাকা চুরি করেছেন এখনো ক্ষমা চান নাই। যদি গণপিটুনি একবার শুরু হয়, তাহলে ঘর থেকে বের করে এনে জনতার আদালতে বিচার হবে। এ সরকার বিচার শুধু করেছে আমরা সমর্থন করেছি। কিন্তু বিচার কার্যকর হবে নতুন সরকার এলে।
এ সময় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমিন সহ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, জেলা বিএনপি, উপজেলা বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।
এদিকে, সম্মেলনে সভাপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন মির্জা ফয়সাল আমিন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৩৫১ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন পয়গাম আলী।
কেকে/ আরআই