জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই)-এর সরবরাহ করা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের মূলহোতা আমিনুল ইসলাম ও তার চারজন সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-২। রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ১১ নম্বর সেক্টরের একটি বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকালে বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট, মোবাইল ফোন এবং নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- আব্দুল হাকিম, মো. নূর ইসলাম, আসাদুজ্জামান এবং মো. শাহরিয়ার শেখ মুরাদ।
জানা গেছে, ভিসা এবং পাসপোর্ট জালিয়াতির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাধারণ মানুষ বিশেষ করে বেকার যুবকদের টার্গেট করে বিগত কয়েক বছরে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ করে আবদুল্লাহ-আমিনুল এর মানবপাচার চক্রটি। দীর্ঘদিন ধরে তারা এমন কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছিলো। ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে জন প্রতি ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা নেয় চক্রটি। বাংলাদেশ থেকে আমিনুল এবং লিবিয়া থেকে আবদুল্লাহ মানবপাচারের এই কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করে থাকে। পাসপোর্ট জালিয়াতির মাধ্যমে প্রথমে ভুয়া ভিসা তৈরী করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠায় চক্রটি। ইউরোপে নিয়ে যাওয়ার রুট হিসেবে চক্রটি প্রথমে মিসর এবং পরবর্তীতে লিবিয়া হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ নৌ রুট ব্যবহার করে আসছিল।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামি আমিনুল ইসলাম একজন মানবপাচারকারী। এই মামলার বাদীর ভাই ভুক্তভোগী জাহিদ হোসেনকে প্রধান আসামি ইতালি নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ২০ লক্ষ টাকা দাবি করে। ভুক্তভোগী তার কথামত বিভিন্ন সময় টাকা দেয়। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১৩ জুলাই প্রধান আসামি আমিনুলের নির্দেশে ভুক্তভোগীকে মদিনা হয়ে মিশরে নিয়ে যায়। এরপর অজ্ঞাত আসামিরা তাকে মিশরে জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি করে। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) বিষয়টি নজরদারি করে আসছিল এবং মানবপাচার মামলা দায়েরের পর এনএসআই এর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ৭ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-২ ও হাজারীবাগ থানা পুলিশের যৌথ আভিযানে আমিনুল ও তাদের চারজন সহযোগীকে উত্তরার ১১ নং সেক্টর থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছে ৯টি পাসপোর্ট, ১০ টি স্মার্ট ফোন, ০১টি বাটন ফোন ও মানবপাচারের মাধ্যমে অর্জিত নগদ এক কোটি ছাপ্পান্ন লাখ ছাব্বিশ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই করে তার সহযোগী মানবপাচারকারী চক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে র্যাব-২ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার খান আসিফ তপু।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
কেকে/ আরআই