কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় আউশ ধানের আবাদ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ বছর উপজেলায় ৩৬ হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়েছে। গত বছর এ ধানের আবাদ হয়েছিল ২৪ হেক্টর জমিতে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে আবাদ বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। আউশ ধানের স্বল্প জীবনকাল, তুলনামূলক বেশি ফলন ও লাভজনক দিকগুলো কৃষকদের এ চাষের দিকে আকৃষ্ট করছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।
তারা বলছেন, সাধারণত বোনা আমন ধান পরিপক্ব হতে গড়ে প্রায় ১৫০-১৭০ দিন সময় লাগে। কিন্তু আউশ ধান ঘরে তুলতে সময় লাগে মাত্র ১১০ দিন। ফলে কৃষকের সময় বাঁচে প্রায় ৪০-৬০ দিন। ওই সময় কাজে লাগিয়ে একই জমিতে কৃষকেরা অন্য ফসল আবাদ করতে পারছেন। এতে অতিরিক্ত আয় সম্ভব হচ্ছে, যা কৃষকদের আরও উৎসাহিত করছে।
এ বছর উপজেলায় আবাদ হওয়া আউশ জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রি ধান৯৮, ব্রি ধান৪৮, বিনা ধান-১৯ ও বিনা ধান-২১। এর মধ্যে রাধানগর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুর রহিম, মেহের আলী ও আলেক মিয়া ব্রি ধান৯৮, জয়পুর গ্রামের হারুনুর রশিদ বিনা ধান-১৯ জাত আবাদ করেছেন।
মাঠ পর্যায়ের তথ্যে জানা যায়, গড়ে প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে প্রায় ১৩ মণ। তবে সঠিক পরিচর্যা করলে এই ফলন ১৫ মণ পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও, বিনা ধান-১৯ কৃষকদের মধ্যে বিশেষ সাড়া ফেলেছে। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত এ জাতটি খরা-সহনশীল। কম পানি ও সার দিয়েই এটি ভালো হয় এবং সহজে হেলে পড়ে না। গড়ে প্রতি হেক্টরে এর ফলন ৩ দশমিক ৮৪ টন হলেও অনুকূল পরিবেশে ৫ টন পর্যন্ত ফলন হতে পারে।
কৃষকেরাও এ ধান চাষে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। রাধানগর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, ‘আগে শুধু আমন চাষ করতাম। এখন আউশ চাষ করে দেখি সময়ও বাঁচছে, ফলনও ভালো হচ্ছে। ধান উঠিয়ে আবার শাকসবজি লাগাতে পারছি। এতে আয়ও বাড়ছে।’
জয়পুর গ্রামের হারুনুর রশিদ বলেন, ‘বিনা ধান-১৯ চাষে কম সার লাগে, কম পানি লাগে। তারপরও ফলন ভালো হয়। কৃষক হিসেবে এটা আমাদের জন্য অনেক সুবিধাজনক।”
মেঘনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহে আলম খোলা কাগজকে বলেন, ‘আমাদের কৃষকেরাই মেঘনার গর্ব। তারা নতুন জাতের ধান চাষে সাহস দেখাচ্ছেন এবং ইতোমধ্যেই সাফল্য পাচ্ছেন। আউশ ধান স্বল্প সময়ে ভালো ফলন দেয়। কৃষকেরা এ ধান ঘরে তুলতে পারছেন দ্রুত। ফলে একই জমিতে অন্য ফসল আবাদ করে বাড়তি আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। আমরা নিয়মিত মাঠে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করছি, আগামী বছর আরও বেশি জমিতে আউশ আবাদ হবে। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন, আর দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বড় ভূমিকা রাখবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আউশ চাষের এ ধারা অব্যাহত থাকলে কৃষকের আয়ের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। একই সঙ্গে এই এলাকায় খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন এনে কৃষক ও কৃষিকে আরও শক্তিশালী করবে।’
কেকে/এমএ