# এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনে ছোট-মাঝারি কারখানা বন্ধের শঙ্কা
# বিনিয়োগ চাঙ্গা করতে প্রয়োজন ভালো নির্বাচন
# বিনিয়োগ চাঙ্গা করতে প্রয়োজন স্থিতিশীল সরকার
বিনিয়োগ চাঙ্গা করতে হলে দেশে একটি স্থিতিশীল সরকার অত্যাবশ্যক। বিনিয়োগকারীরা সব সময় একটি স্থিতিশীল সরকারের নিশ্চয়তা চান। তাই সরকার ঘোষিত সময়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে, যা বিনিয়োগের পরিবেশকে শক্তিশালী করবে।
শনিবার (৩০ আগস্ট) এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা শীর্ষক ছায়া সংসদে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান এসব কথা বলেন। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন শুধু সরকারের অর্জন বললে ভুল হবে, এটি বেসরকারি খাত ও জনগণের জাতীয় অর্জন। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পেছানোর আবেদন করলেও আমাদের প্রস্তুতি অব্যাহত রাখতে হবে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হলে পোশাক খাতে বড় কারখানাগুলোর তেমন অসুবিধা না হলেও ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি বলেন, ওষুধ শিল্পে প্যাটেন্ট সুবিধা থাকবে না বিধায় ওষুধের দাম দশ থেকে ত্রিশ গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ওষুধ শিল্পে মূল্য বৃদ্ধির ঝুঁকি মোকাবিলায় ঢাকার মুন্সীগঞ্জে এপিআই পার্কের কার্যক্রম ২০১২ সালে শুরু হলেও ২০২৫ সাল পর্যন্ত শুধু মাটি ফেলা হয়েছে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের জন্য আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।
আর্থিক খাতের সংকটের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিগত সরকারের তথ্য বিভ্রাটে ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা দেখানো হলেও প্রকৃত খেলাপি ঋণ ৫ লাখ কোটি টাকা। তাই এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, সিঙ্গেল উইন্ডো, পোর্টে কম সময় ও লিড টাইম কমিয়ে আনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে উল্লেখ করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেছেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ পেছানো বা না-পেছানো—এ দুই সংকটের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। তিনি সতর্ক করে বলেন, এলডিসি উত্তরণ থেকে ফিরে আসার প্রস্তাব দিলে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশকে নিয়ে উপহাস হতে পারে। এমনকি আফগানিস্তানের মতো অযোগ্য দেশ হিসেবেও বিবেচিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কিরণ উদাহরণ টেনে বলেন, জিম্বাবুয়ের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার পরও জাতিসংঘ দেশটিকে এলডিসি হিসেবে রাখার প্রস্তাব দিলে তারা প্রত্যাখ্যান করে জানায়, ‘এই লজ্জার মালা গলায় পরবো না।’ অথচ আমাদের দেশের কিছু ব্যবসায়ী এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পেছানোর দাবি তুলছেন।
তিনি আরো বলেন, এলডিসি উত্তরণকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য না করেন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। অসম্পূর্ণ বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দেশের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সময়সীমা বাড়ানোর দাবিতে সরকারকে জিম্মি না করে বরং সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পথ খুঁজে বের করা জরুরি। শুধু প্রণোদনার আশায় এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পেছানোর দাবি কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়।
তিনি আরও বলেন, কোন খাতের জন্য প্রণোদনা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে না। কিছু খাত প্রণোদনা পাবে আর কিছু খাত পাবে না—এটি এক ধরনের বৈষম্য। তাই দুর্বল খাতগুলো চিহ্নিত করে ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্টভিত্তিক লক্ষ্যভিত্তিক প্রণোদনা দেওয়া উচিত। বর্তমানে যে খাতগুলো প্রণোদনা পাচ্ছে, তার বাইরেও আরো অনেক খাত রয়েছে যেগুলোতে প্রণোদনা দেওয়া প্রয়োজন।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা এখনো এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত নয়। গ্র্যাজুয়েশনের পর শুল্কমুক্ত সুবিধা হারানোয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের সঙ্গে সঙ্গেই পোশাক ও শিল্প খাত শুল্কমুক্ত সুবিধা ছাড়াও নানা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা হারাবে। এতে বিদেশি প্রতিযোগীদের সঙ্গে দেশীয় শিল্প ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। অন্যদিকে, ওষুধ শিল্প পেটেন্ট আইনের আওতায় আসায় ওষুধের দাম বেড়ে যাবে, ফলে সাধারণ মানুষকে কষ্ট ভোগ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর বাংলাদেশকে আর স্বল্পসুদে ঋণ দেওয়া হবে না। বরং বাণিজ্যিক হারে ঋণ নিতে হবে, যা পরিশোধ করা এবং কঠোর শর্ত পূরণ করা অনেক কঠিন হবে।
তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ফেব্রুয়ারিতে যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং নতুন নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে, তবে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরবে। নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে, শিল্পকারখানা স্থাপনের সুযোগ তৈরি হবে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বাড়বে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও উন্নতি ঘটবে।
তিনি মনে করেন, নতুন সরকার দায়িত্ব নিলে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের মাধ্যমে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার হবে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা রয়েছে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে এর প্রাইম ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, প্রফেশনাল অ্যাকাউন্টেন্ট আবুল বশির খান, অধ্যাপক আল-আমিন ও সাংবাদিক তৌহিদুল ইসলাম। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
কেকে/এজে