ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সম্ভাব্য শেষ ম্যাচে খেলতে নেমে মাঠের সবটুকু আলো কাড়লেন লিওনেল মেসি। নিজেকে উজাড় করে দিয়ে করলেন জোড়া গোল। মেসি ম্যাজিকের সঙ্গে জালের দেখা পেলেন সতীর্থ লাউতারো মার্টিনেজও। তাতেই ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে বড় জয় পেয়েছে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) ভোরে ঘরের মাঠ বুয়েন্স এইরেসের এস্তাদিও মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে ভেনেজুয়েলাকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। জাতীয় দল জার্সিতে দেশের মাটিতে মেসির প্রথম ম্যাচ ছিল ২০ বছর আগে এ স্টেডিয়ামেই। ৯ অক্টোবর, ২০০৫ সালে। সেটিও ছিল বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ঘরের মাঠে আর্জেন্টিনার শেষ ম্যাচ।
মেসির সম্ভাব্য শেষ ম্যাচ ঘিরে মনুমেন্টাল স্টেডিয়ামে হাজির ছিলেন ৮০ হাজারের মতো দর্শক। ম্যাচজুড়েও আধিপত্য ছিল স্বাগতিক আকাশি-সাদা জার্সিধারীদের। পুরো ম্যাচে ৭৭ শতাংশ বল দখলের পাশাপাশি মেসি-আলভারেজ-আলমাদারা গোলের জন্য ১৭টি শট নেয়। যার ৯টি ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে ভেনেজুয়েলা ৫ শটের একটিও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি।
ম্যাচের মাত্র চতুর্থ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত আর্জেন্টিনা। ফ্রাঙ্কো মাস্তান্তুয়োনোর ক্রস পেয়ে হেডে বল জালে জড়ান ক্রিস্টিয়ান রোমেরো। তবে কাটা পড়লেন অফসাইডের দাগে। গতিময় ১৫ মিনিটের পর খেলায় কিছুটা ধীরস্থির হয় আর্জেন্টিনা। ২১ মিনিটে নিকোলাস তালিয়াফিকোর নেওয়া শট ঠেকিয়ে দেন ভেনেজুয়েলা গোলরক্ষক রোমো। ২৫ মিনিটে প্রথম শট নেন কিংবদন্তি মেসি। বক্সের বাইরে থেকে নেয়া শট ভেনেজুয়েলা গোলরক্ষক রোমো ঠেকান দারুণভাবে।
এরপর একটা ফ্রি-কিক নেন মেসি। একটু দূর থেকে ছিল। তার শট লাগে মানবদেয়ালে। এরপর ৩৯ মিনিটে জুলিয়ান আলভারেজ আক্রমণে উঠে ডিফেন্ডার তো বটেই, গোলরক্ষককেও নিজের কাছে টেনে নিলেন, এরপর আলতো করে বল ঠেলে দিলেন মেসিকে। দারুণ এক চিপ শটে মেসি বল পাঠান ভেনেজুয়েলা জালে। ১-০তে লিড নেয় আর্জেন্টিনা। ফলে লিড নিয়েই বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।
দ্বিতীয়ার্ধে নেমে ৬০ মিনিটের মাথায় রদ্রিগো ডি পলের সঙ্গে ওয়ান-টু পাসের পর শট নিয়েছিলেন মেসি। তাকে হতাশ করেন ভেনেজুয়েলা গোলরক্ষক। বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা এরপর প্রতিপক্ষকে আরও চেপে ধরে। তাদের দ্বিতীয় গোলটি আসে দুই বদলি খেলোয়াড় নিকো গঞ্জালেস ও লাউতারো মার্টিনেজের কল্যাণে। ৭৬ মিনিটে দ্রুত ফ্রি-কিক থেকে শুরু হওয়া আক্রমণে নিকো গঞ্জালেসের ক্রসে মার্টিনেজ হেডে গোল করেন।
৮০ মিনিটে থিয়াগো আলমাদার সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়ায় মেসি সহজ ট্যাপ-ইনে করেন পরের গোলটি। চলতি বাছাইপর্বে এটি তার অষ্টম গোল, যা তাকে লাতিনে শীর্ষ গোলদাতা বানিয়েছে। এছাড়া আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা মেসি পেয়ে গেলেন নিজের ১১৪তম গোল। রেফারির শেষ বাঁশি বাজার মিনিট দুয়েক আগে হ্যাটট্রিকও পেয়ে গিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু অফসাইড রীতি এবার তাকে দমিয়ে রাখল।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষলগ্নে ঘোরাফেরা করছেন মেসি। আলোচনা আছে ২০২৬ বিশ্বকাপ খেলে আর্জেন্টিনা জার্সিকে বিদায় বলে দেবেন ৩৮ বর্ষী মহাতারকা। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শেষ ম্যাচটি তাই কিংবদন্তির জন্য ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এদিন মাঠে উপস্থিত ছিলেন পরিবারের সদস্যরাও।
বিশ্বকাপে উড়াল দেয়ার আগে ঘরের দর্শকদের বিদায় বলতে ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল কিংবদন্তির জন্য। আলোচনা আছে, আর্জেন্টিনা একটি প্রীতি ম্যাচও আয়োজন করতে পারে মেসির বিদায় ঘিরে। কিংবা বিশ্বকাপের আগেও প্রীতি ম্যাচ খেলতে পারে, সেটা এখনও ঠিক হয়নি। আপাতত ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে ম্যাচটি আর্জেন্টিনা জার্সিতে হয়ে থাকতে পারে ঘরের মাঠে মেসির শেষ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক প্রদর্শনী।
লাতিন আমেরিকা অঞ্চল থেকে সবার আগে ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ইকুয়েডরের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচ দিয়ে শেষ হবে লিওনেল স্কালোনির আর্জেন্টিনার বাছাই অভিযান।
কেকে/ এমএস