নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, পতিত আওয়ামী লীগ ততই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে একের পর এক পরিকল্পনায় লিপ্ত হয়েছে দলটি। ডিসেম্বরে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। আর এ মাস ঘিরেই ভয়ংকর ফন্দি এঁটেছে ফ্যাসিস্ট শক্তিটি।
দেশের ভেতরে থাকা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ব্যবহার করে দেশে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে। এর অর্থায়নে রয়েছে দেশের বাইরে থাকা পলাতক নেতারা। আর পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা।
নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও। গত মঙ্গলবার তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নির্বাচন পর্যন্ত পৌঁছাতে দিতে চায় না, তারা যত রকমভাবে পারবে, বাধা দেবে। বাংলাদেশের সত্তাকে গড়ে তুলতে তারা বাধা দেবে। তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে নির্বাচন বানচাল করার। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে, যাতে নির্বাচন না হয়।’ এগুলোর কিছু কিছু লক্ষণ এখন দেখা যাচ্ছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সামনে আরো আসবে। এ জন্য আমাদের আরো সতর্ক হতে হবে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘নিজের ভূমিতে দেশ পরিচালনার নির্বাচন। এ নির্বাচনে অন্য কোনো দেশের থাবা মারার কোনো সুযোগ যেন না থাকে।’
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন বানচালে তিনটি সুনির্দিষ্ট কৌশলে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারই অংশ হিসেবে সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের রাজধানীতে জড়ো করা হচ্ছে। তারা এরই মধ্যে বিভিন্ন ছদ্মবেশে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মোহাম্মদপুর, উত্তরা, খিলগাঁও ও মিরপুর এলাকা। এসব এলাকায় সিএনজিচালক, অটোচালক, দোকানের কর্মচারীসহ নানা পরিচয়ে অবস্থান করে বিদেশ থেকে আসা নির্দেশের অপেক্ষা করছেন এসব নেতাকর্মীরা। তারা স্থানীয় অপরাধীচক্রের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করছেন।
সূত্র বলছে, রাজধানীতে যে হুটহাট করে ঝটিকা মিছিল করছে ফ্যাসিস্ট শক্তি, তা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং এটা বৃহত্তর পরিকল্পনারই অংশ, এর মধ্য দিয়ে তারা মাঠ পরিস্থিতি যাচাই করে নিচ্ছে।
এ ছাড়া ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিকে দুর্বল করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির করছে আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে তারা কিছুটা সফলও। অভ্যুত্থানের এক বছরের মধ্যে নানা ইস্যুকে বিরোধে জড়িয়েছে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। আর এর সুযোগ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া অভ্যুত্থানের পক্ষশক্তিগুলো ও অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে অনলাইনে ছড়ানো হচ্ছে অপপ্রচার। যাতে সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের ইমেজ নষ্ট হয়। বিশ্বাসযোগ্যতা হারায় রাজনৈতিক দলগুলো।
সূত্র আরো বলছে, ডিসেম্বরও আওয়ামী লীগ মরণকামড় দেবে। তার জন্য দলটি বর্তমানে সহায়ক পরিস্থিতি তৈরি করছে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে সমাজে নানা ধরনের অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। মব সৃষ্টি, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ নানা কর্মকাণ্ডে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে তারা। আর এতে সহযোগিতা করছে একদল আমলা, যারা আওয়ামী লীগের সময়কালে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন বিশেষ বিবেচনায়। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তাদের মাধ্যমে চলে যাচ্ছে দেশে বাইরে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে তাদের বহু দোসরকে প্রশাসনে নিয়োগ দিয়েছে। যারা বর্তমানে নীরব থাকলেও গোপনে আওয়ামী লীগের হয়ে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তারা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বাধা সৃষ্টি করে সরকারি কাজকে ব্যাহত করছেন। পুলিশের ভেতরও লুকিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের দোসররা একইভাবে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন।
গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ লুটপাট করে যে অর্থপাচার করেছে, সেই টাকা থেকেই তারা ব্যয় করছে দেশে নৈরাজ্য তৈরি করতে। তার তাদের নানা ধরনের লজিস্টিকস সাপোর্ট দিচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের নৈরাজ্য ঠেকাতে রাজনৈতিক ঐক্য খুবই জরুরি। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নরজাদির প্রয়োজন। এ ছাড়া শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য সরকারকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। এর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে ভারতের ওপার চাপ সৃষ্টি করতে হবে। কারণ ভারতে বসে শেখ হাসিনা বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। তাই তাকে বিচারের মুখোমুখি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।
কেকে/ এমএস