ভারত সীমান্ত ঘেঁষা শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় দীর্ঘ দিন পরে গত তিন ধরে আবারো লোকালয়ে খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে বন্য হাতির একটি দল। অপরদিকে বন্য হাতি দেখতে প্রতিদিন সীমান্ত ঘেঁষা এলাকা গুলোতে ভিড় জমাচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার উৎসুক জনতা।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) বিকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্য হাতির দলটি সন্ধ্যাকুড়া এলাকার গোলাপ, আকাশমনি কাঠের বাগান ও বিভিন্ন সবজি খেতে অবস্থান করতে দেখা যায়। পাশাপাশি এলাকাবাসী ও উৎসুক মানুষ ভিড় করেছেন। হাতি সরাতে মানুষ হইহুল্লোড় করছেন। এসময় বন্য হাতির দল ধান ও বিভিন্ন সবজির খেত হাতির পা দিয়ে মাড়িয়ে তছনছ করে।
বন বিভাগ ও স্থানীয়রা সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার দিবাগত রাত থেকে বন্য হাতির একটি দল ঝিনাইগাতী উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের সন্ধ্যাকুড়া, হলদিগ্রাম, গুমড়া, রাংটিয়া এবং কাংশা ইউনিয়নের ছোট গজনী, বড় গজনী, তাওয়াকুচা এলাকার গারো পাহাড়ে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৫৫টি হাতির একটি দল অবস্থান করছে। হাতির দলটি দিনের বেলা খাদ্যের সন্ধানে পাহাড়ের বিভিন্ন টিলায় ঘোরাঘুরি করলেও শেষ বিকালে হাতির পালটি লোকালয়ে নেমে আসে। ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় গ্রামবাসী মশাল জ্বালিয়ে হইহুল্লোড় করে হাতির পালটিকে জঙ্গলে ফেরানোর চেষ্টা করেন।
সন্ধ্যাকুড়া গ্রামের কৃষক দেলোয়ার বলেন, বুধবার দিবাগত রাতে বন্য হাতির দল আমার ২৫ শতাংশ ধানের জমি পা দিয়ে পিষে নষ্ট করেছে। আমি একজন অসহায় মানুষ, খুব কষ্টে করে সংসার চালাই। হাতির অত্যাচারে অতিষ্ট আমরা।
গুমড়া গ্রামের সাব্বির বলেন, হাতি আমার বরবটি ও বেগুন চাষের খেত নষ্ট করেছে। আমি নিজে ছোট-বড় হাতি দেখেছি। সবারই ক্ষয়ক্ষতি করছে এ হাতির পাল। হাতির অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এ কৃষক।
নলকুড়া ইউনিয়ন যুব দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পাহাড়গুলোতে বন্য হাতির খাদ্য ও বাসস্থানের অভাবের কারণেই তারা লোকালয়ে প্রবেশ করতে বাধ্য হচ্ছে। প্রতিদিন খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। মানুষের ঘরবাড়িসহ নানা ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। কয়েক দিন ধরে মানুষ হাতির আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন। হাতি তার স্বাভাবিক বিচরণক্ষেত্র হারিয়ে ফেললে মানুষের বসতিতেই খাবার খোঁজে। এ প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতার জন্য দায়ী মূলত আমরা নিজেরাই। তবে গারো পাহাড়ে হাতির এ অত্যাচার দীর্ঘ দিনের; তাই এ সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।
ময়মনসিংহ বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম বলেন, হাতির খাবারের জন্য সুফল বাগান তৈরি হয়েছে। সেখানে লতা-পাতা রয়েছে। হাতি সেসব খাচ্ছে। পাশাপাশি চলতি মাসে গারো পাহাড়ের প্রতিটি বিটে দুই হাজার করে কলাগাছ রোপণের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। কলাগাছ বড় হলে খাবারের সংকট অনেকটাই কমবে। বনবিভাগ ও ইআরটি হাতিকে পাহাড়ের জঙ্গলে পাঠানোর সার্বক্ষণিক চেষ্টা করছেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, মূলত খাদ্যের সন্ধানে বন্য হাতির পালটি লোকালয়ে চলে এসেছে। সীমান্তে বন্য হাতির খাদ্যের ব্যবস্থা করা গেলে হয়তো হাতি লোকালয়ে আসবে না। তবে উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের পক্ষ থেকে মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করতে বলা হচ্ছে।
কেকে/ এমএস