নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবায় নানা সংকট দেখা দিয়েছে। প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র ভরসা এই হাসপাতালটি। কিন্তু চিকিৎসক সংকট, যন্ত্রপাতির ত্রুটি অ্যাম্বুলেন্সসেবার অচলাবস্থা ও অব্যবস্থাপনার কারণে রোগীরা প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ২৮ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ২১ জন। এর মধ্যে তিনজন রয়েছেন ডেপুটেশনে। ফলে কার্যত ১৮ জন চিকিৎসক দিয়েই পুরো উপজেলা হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা চলছে। অথচ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নেই কোনো সার্জন, অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ কিংবা চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ। এনেস্থেশিয়া ডাক্তারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে সার্জারি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া হাসপাতালের একমাত্র এক্সরে মেশিন বহুদিন ধরে অকেজো। তেলের সংকটে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সও গত পাঁচ মাস ধরে চালু নেই। সীমিত আকারে ইসিজি পরীক্ষাসহ কিছু সেবা থাকলেও অধিকাংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রোগীদের বাইরে যেতে হচ্ছে।
নার্সিং বিভাগের ৩৯টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন ৩৮ জন। কিন্তু পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ না থাকায় রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। অন্যদিকে উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিক ও টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে গাড়ি থাকলেও তেলের বরাদ্দ না থাকায় মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
হাসপাতালের ভেতরের পরিবেশ নিয়েও অসন্তুষ্ট রোগী ও স্বজনরা। ২০২৫ সালের জুনে আউটসোসিংয়ের জনবলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কারণেও ব্যাপক জনবল সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকর্মী পর্যাপ্ত না থাকাতে নোংরা টয়লেট, দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে তারা দুর্ভোগে পড়ছেন। বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারে ডুবে থাকে হাসপাতাল। জেনারেটর না থাকায় রোগীদের ভোগান্তি আরো বেড়ে যায়।
চিকিৎসা নিতে আসা আসমা বেগম, রুপালি খাতুন, রোজিনা বেগম, সুরুজ মিয়া ও নজরুল অভিযোগ করে বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকায় অন্ধকারে কিছু দেখা যায় না। প্রচণ্ড গরমে রোগীরা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক পরীক্ষার রিপোর্ট বাইরে থেকে করাতে হয়।’
আব্দুল জলিল বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ছেলেকে নিয়ে এসেছিলাম গুরুদাসপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। কিন্তু এখানে এক্সরে মেশিন নেই, নেই অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই রাজশাহী নিয়ে যেতে হয়েছে ছেলেকে।’
এ বিষয়ে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমাস জানান, ‘আমরা সীমিত জনবল ও সুযোগ-সুবিধা নিয়েই সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে শূন্য পদ পূরণ ও বিকল যন্ত্রপাতি সচল করার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’
কেকে/এএস