কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো সোমবার ভোর থেকেই জনসমুদ্রে রূপ নেয়। রোহিঙ্গারা গণহত্যা দিবসের অষ্টম বর্ষপূর্তিতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা সমবেত হয়ে মিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশের মাধ্যমে জানায় তাদের আকুতি- ‘শরণ্যজীবন আর নয়, আমরা নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিয়ে নিজ দেশে ফিরতে চাই।’
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের আরাকানে সেনা নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞ ও অগ্নিসংযোগের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। সেই দিনটিকে স্মরণ করে প্রতি বছরই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা।
এবার সোমবার সকাল ৮টা থেকেই উখিয়ার ৪নং ক্যাম্প ও মধুরছড়ার মাঠসহ অন্তত ১৫টি ক্যাম্পে দলে দলে সমবেত হন সাধারণ রোহিঙ্গারা। সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় সমাবেশ। প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান ওঠে, ‘No more refugee life’ ‘Repatriation the ultimate solution’ এই সমাবেশে বক্তব্য দেন রোহিঙ্গা নেতারা। তারা বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার চাই, আমরা নাগরিকত্ব চাই। মর্যাদা ও নিরাপত্তা ছাড়া দেশে ফিরতে পারব না। কিন্তু আমাদের গন্তব্য কেবলই আরাকান।’
সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের অনেকে ২০১৭ সালের ভয়াল স্মৃতি মনে করে কান্নায় সমাবেশে ভেঙে পড়েন। কেউ কেউ আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, ‘মিয়ানমার আমাদেরকে এখন নিয়ে গেলে এখনই চলে যাবো, আমাদের অপেক্ষার অবসান চাই।’
অন্য দিকে, গত রোববার থেকে উখিয়ার ইনানীতে বেওয়াস নামের এক হোটেলে শুরু হয়েছে রোহিঙ্গা বিষয়ে ৩ দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন এই সম্মেলনে ৪০টি দেশ অংশ নিয়েছে। এতে সোমবার দ্বিতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টাও অংশ নেন। এ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ একা এই বোঝা বহন করতে পারবে না, একটি টেকসই বৈশ্বিক রোডম্যাপ জরুরি।’ এছাড়া আন্তর্জাতিক সম্মেলন শেষে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত প্রতিনিধি দল।
গণহত্যা দিবসের অষ্টম বর্ষে রোহিঙ্গারা আবারো বিশ্বকে মনে করিয়ে দিল- তাদের জীবন শরণ্যশিবিরে আটকে নেই, বরং দমিত এক জাতির নিরাপদ প্রত্যাবাসনের দাবি। এখন প্রশ্ন, আন্তর্জাতিক মহল কি তাদের এই কান্না–আকুতিকে কার্যকর সমাধানে রূপ দেবে?
কেকে/ এমএস