ঐতিহ্যবাহী বড় জামে মসজিদ প্রায় ২০০ বছরের পুরন। মোনাজাত না নেওয়াকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ বড় জামে মসজিদের ইমামকে বহিষ্কার করেছে মসজিদ কমিটি। এ ঘটনাকে ঘিরে স্থানীয় মুসল্লীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে মসজিদের খতিব স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে যাচাই-বাছাই শেষে মাওলানা আব্দুল মতিনকে নতুন খতিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি জানান, প্রতি ওয়াক্তের নামাজ শেষে সম্মিলিত মোনাজাত করা বিদ‘আত, তাই জুমার নামাজ শেষে সম্মিলিত মোনাজাত বন্ধ করে দেন। বিষয়টি মসজিদ কমিটির কিছু সদস্য মেনে নিতে পারেননি।
পরে তৎকালীন সংসদ সদস্য মাহমুদ হাসান সুমনের ব্যক্তিগত অনুরোধে নিয়মকানুন উপেক্ষা করে এবং লিখিত কাগজপত্র ছাড়াই মৌখিক সিদ্ধান্তে মাওলানা মাহমুদুল হাসানকে খতিব হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বর্তমান ইমামকে জোরপূর্বক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়।
সম্প্রতি ইমাম কিছুদিন নামাজে বিলম্বে উপস্থিত হওয়া এবং ফজরের সুন্নত না পড়ে ফরজে দাঁড়ানোর অভিযোগে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তিনি উচ্চ রক্তচাপজনিত শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও কমিটির কয়েকজন সদস্য তার জবাব গ্রহণযোগ্য মনে করেননি এবং মুসল্লীদের মতামত না নিয়েই বহিষ্কারের ঘোষণা দেন।
গত শুক্রবার (১৫ আগস্ট) জুমার নামাজ শেষে মুসল্লীরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির কয়েকজন সদস্য স্পষ্ট জবাব না দিয়ে উল্টো মুসল্লীদের ধমক দেন। এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
সাধারণ মুসল্লী সামির পারভেজ তাসাদ্দাক বলেন, আমি আল্লাহ রহমতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করি ঈশ্বরগঞ্জ বড় জামে মসজিদে, বর্তমান ইমাম হুজুর অনেক জ্ঞান সম্পন্ন ও ভালো মানুষ, ষড়যন্ত্র করে উনাকে এখান থেকে সরানোতে আমরা মেনে নিতে পারলাম না।
এমন অবস্থায় মসজিদ কমিটির সদস্য রাজু মুর্শেদী কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, বর্তমান কমিটির কোনো বৈধতাই নেই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি ১৫ সদস্যের হওয়ার কথা থাকলেও করা হয়েছে ২২ সদস্যের। এছাড়া তিনি আগে থেকেই কয়েকজনকে সদস্য না করার অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু তা মানা হয়নি। তার অভিযোগ, ঐসব সদস্যরাই এখন মসজিদে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে এবং দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে।
কমিটির সভাপতি কাজি মনি বলেন, এর আগেও দুইবার ইমামকে শোকজ করা হয়। কমিটির সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইমাম হুজুরকে বহিষ্কার করা হয়। তাছাড়া আমি সবসময় ঢাকা বসবাস করি, কমিটির সেক্রেটারিকে জিজ্ঞেস করলে সবকিছু বলতে পারবে।
এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মুসল্লীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা দ্রুত এ সমস্যার সমাধান দাবি করেছেন।
কেকে/এআর