গাজীপুরের শ্রীপুরের বরমী মধ্যপাড়া (মৃধা বাড়ি) গ্রামে স্ত্রীকে তিন দিন নির্যাতনের পর হত্যার অভিযোগ উঠেছে মাদকাসক্ত স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় পুলিশ গৃহবধূর শাশুড়ি জোবেদা খাতুনকে গ্রেফতার করেছে। স্বামী ও শ্বশুর ঘটনার পর পালিয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৬টায় উত্তেজিত জনতা স্বামী নুরুল ইসলাম মৃধার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এর আগে বুধবার (৬ আগস্ট) রাতে গৃহবধূকে স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি নির্যাতনের পর গোপনাঙ্গে বাঁশ বা ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে।
নিহত গৃহবধূ সুইটি আক্তার নিশি (২২) ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার চাকুয়া গ্রামের আফসারুল ইসলামের মেয়ে। অভিযুক্ত স্বামী নুরুল ইসলাম মৃধা (৩৪) উপজেলার বরমী মধ্যপাড়া (মৃধা বাড়ি) গ্রামের শাহ্জাহান মৃধার ছেলে। নুরুল ইসলামের নামে শ্রীপুর থানায় তিনটি মাদক মামলা রয়েছে।
নিহতের খালাতো বোন আকলিমা আক্তার জানান, প্রায় দেড় বছর আগে সুইটি আক্তার নিশির সঙ্গে নুরুল ইসলাম মৃধার বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে ৪ মাসের এক মেয়ে রয়েছে। বিয়ের পর সুইটি জানতে পারেন তার স্বামী মাদকাসক্ত ও এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। এর প্রতিবাদ করলেই মাদকাসক্ত স্বামী বিয়ের পর থেকে সুইটিকে নির্যাতন করত।
গত ৩-৪ দিন আগে শ্রীপুর থানা পুলিশ নুরুল ইসলাম মৃধাকে গ্রেফতার করতে যায়। তাকে না পেয়ে পুলিশ নুরুল ইসলামের স্ত্রী সুইটিকে জিজ্ঞাসা করে। সুইটি তার স্বামী মাদকাসক্ত এবং মাদক ব্যবসায়ী বলে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেয়। এ বিষয়ে জানতে পেরে স্বামী নুরুল ইসলাম, তার শ্বশুর শাহ্জাহান মৃধা এবং শাশুড়ি জোবেদা খাতুন তাকে নির্যাতন করতে থাকে।
বুধবার (৬ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাদের বিয়ের ঘটক নাজমুল মোবাইল ফোনে সুইটির স্বজনকে তার মৃত্যুর খবর জানায়। ঘটনার পর স্বামী স্বামী নুরুল ইসলাম মৃধা এবং শ্বশুর শাহ্জাহান মৃধা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। স্বজনেরা নুরুল ইসলামের বাড়িতে এসে সুইটির মরদেহ ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে। খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থলে পৌছে মরদেহ উদ্ধার করে এবং শ্বাশুড়ি জোবেদা খাতুনকে আটক করে।
স্ত্রীকে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে স্থানীয় জনতা নুরুল ইসলামের দুই বাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। আগুনে দুইটি বাড়ির ৮টি কক্ষ এবং আসবাবপত্র পুড়ে যায়। গৃহবধূর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
শ্রীপুররের মাওনা ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউস ইন্সপেক্টর হুমায়ুন কবির বলেন, ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে বেলা ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে উত্তেজিত জনতা আগুন দিয়ে আসবাবপত্রসহ মূল্যবান মালামাল আগুনে পুড়িয়ে দেয়।
শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এস আই) জাহাঙ্গীর আলম জানান, সুরতহাল রিপোর্টে সুইটির দুই পা হাঁটুর নিচে থেঁতলানো। পা থেকে মাথা পর্যন্ত সমস্ত শরীরে লোমহর্ষক নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, স্থানীয়দের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে গৃহবধূকে নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগে শাশুড়ি জুবেদা খাতুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে আদালতে পাঠানো হবে।
কেকে/এএস