বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) তাপসী রাবেয়া বসরী হলে হাউস টিউটরদের নিয়মিত অনুপস্থিতির কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। হলে যেকোনো প্রশাসনিক কার্যক্রম যেমন লেট ফর্ম জমা, কক্ষ পরিবর্তন বা জরুরি সমস্যার সমাধানে টিউটরদের উপস্থিতি না থাকায় শিক্ষার্থীদের বারবার হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক নীতিমালা অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের পর হলে প্রবেশ করতে হলে শিক্ষার্থীদের লেট ফর্ম জমা দিতে হয়, যার জন্য প্রয়োজন হয় সংশ্লিষ্ট হাউস টিউটরের স্বাক্ষর। একইভাবে, কক্ষ পরিবর্তনসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কাজেও টিউটরের স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক। কিন্তু নিয়মিত হলে উপস্থিত না থাকায় শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিভাগে গিয়ে স্বাক্ষর নিতে হয়। এতে যেমন সময় নষ্ট হয়, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করাও সম্ভব হয় না।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলে কোনো জরুরি সমস্যা হলেও তৎক্ষণাৎ কাউকে পাওয়া যায় না। এতে তারা নিজেদের নিরাপত্তাহীন ও অবহেলিত বোধ করেন। অনেকেই মনে করছেন, হলের আবাসিক পরিবেশ বজায় রাখতে হাউস টিউটরদের নির্দিষ্ট সময় ধরে হলে উপস্থিত থাকা অত্যন্ত জরুরি।
এ বিষয়ে একাধিক আবাসিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, দেখা যায় দেরিতে হলে ফিরেছি, লেট ফর্ম জমা দিতে হবে। কিন্তু হাউস টিউটর হলে না থাকায় ডিপার্টমেন্টে গিয়ে সই করিয়ে আনতে হয়। এতে সময় ও ঝামেলা দুইই বাড়ে। তারা আরো বলেন, হাউস টিউটর যদি হলে থাকতেন, তাহলে সরাসরি গিয়ে কাজ শেষ করা যেত। এখন তো একটা সইয়ের জন্য পুরো দিন অপেক্ষা করতে হয়।
এ বিষয়ে হলের ২য় তলার আবাসিক শিক্ষক ড. নাহিদা আক্তার বলেন, একসঙ্গে একাধিক দায়িত্ব পালনের কারণে নিয়মিত হলে সময় দেওয়া সম্ভব হয় না। তাই আমি নিজ বিভাগে শিক্ষার্থীদের ডেকে কাগজপত্রে স্বাক্ষর করি। তিনি আরো বলেন, এই সমস্যা সমাধানে হয় জনবল বাড়াতে হবে, নতুবা পূর্ণাঙ্গ আবাসিক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
৩য় তলার আবাসিক শিক্ষক সুরাইয়া আক্তার জানান, আমি ছুটির দিনে হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সময় দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে একাডেমিক ব্যস্ততা ও প্রশাসনিক চাপের কারণে নিয়মিত উপস্থিত থাকা সম্ভব হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় যদি সময় নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে আমি আরো বেশি সময় দিতে পারব।
৫ম তলার আবাসিক শিক্ষক শারমিন সুলতানা বলেন, মানসিকভাবে সবসময়ই শিক্ষার্থীদের পাশে থাকতে চাই। তবে বাস্তবতার কারণে সব সময় হলে উপস্থিত থাকা সম্ভব হয় না। লোকবল সংকট থেকেই মূলত এ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
এ বিষয়ে তাপসী রাবেয়া বসরী হলের প্রভোস্ট ড. শারমিন আক্তার বলেন, আবাসিক ও সহকারী আবাসিক শিক্ষকরা দায়িত্ব পালনে সর্বদা আন্তরিক। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট ও একাডেমিক ব্যস্ততার কারণে প্রতিদিন হলে উপস্থিত থাকা সম্ভব হয় না। এছাড়া, কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভাব থাকায় অনেক সময় শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সেবা পেতে বিলম্ব হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. তৌফিক আলম বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে হলের প্রভোস্ট ও হাউস টিউটরদের সঙ্গে বসে সমাধানের চেষ্টা করব। শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে হলের যাবতীয় সমস্যা ও শিক্ষার্থীবান্ধব যেকোনো সিদ্ধান্তই গুরুত্বের সঙ্গে দেখব।
কেকে/এএস