‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সাভার-আশুলিয়ায় শ্রমিকদের ওপরে গণহত্যা চালানো হয়েছিল, হত্যার পরে লাশগুলোকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। লাশের সঙ্গে এমন বর্বরতা, লাশের সঙ্গে এমন নির্মমতা, মনে হয় কারবালার যে নৃশংসতা তাকেও হার মানিয়েছে।’— এসব কথা বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধের গন্তব্যে দেড় দশকের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শেষ পর্যন্ত জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের হাজারো শহিদের প্রাণের বিনিময়ে স্বৈরাচার এদেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকালে আশুলিয়ার শ্রীপুরের দারুল ইহসান মাদ্রাসা মাঠে ঢাকা জেলা বিএনপির উদ্যোগে শ্রমিক-ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থান-২০২৪ “নারকীয় আশুলিয়া স্মরণে” অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির ভার্চুয়ালি বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শহিদ হয়েছে শ্রমজীবি মানুষ। বিশেষ করে এই সাভার-আশুলিয়ায় শ্রমিকদের ওপরে গণহত্যা চালানো হয়েছিল, হত্যার পরে লাশগুলোকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। লাশের সঙ্গে এমন বর্বরতা, লাশের সঙ্গে এমন নির্মমতা, মনে হয় কারবালার যে নৃশংসতা তাকেও হার মানিয়েছে।
ছবি: খোলা কাগজ
তিনি বলেন, সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত বছরের জুলাইয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই আন্দোলনে কিন্তু শ্রমজীবী মানুষের হয়তো সরাসরি কোন স্বার্থ জড়িত ছিল না। কারণ, তারা কোন সরকারি চাকুরির আশা করেনি। তাহলে প্রশ্ন আসে—পোশাক কারখানার শ্রমিক, রিকশা চালক, দিনমজুর, ভ্যান চালক, অটো রিকশা চালক, ট্রাক চালক, হেলপার, দোকানদার কিংবা রেস্তোরা কর্মী অথবা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ, সকল শ্রেণিপেশার মানুষ কেন সেদিন রাজপথে নেমেছিল?
“একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি একটি কারণ খোঁজে পাই—এর কারণ একটাই, দেশপ্রেমী গণতন্ত্রকামী জনগণ বিশ্বাস করেছেন, রাষ্ট্র ক্ষমতায় ক্ষমতালোভী ফ্যাসিস্ট যে পালিয়ে গিয়েছে তারা যদি রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকে, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, জনতা, কেউ তাদের গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার ফেরত পাবে না। কারো কোন ন্যায্য দাবি আদায় হবে না। দেশপ্রেমিক গণতন্ত্রকামি জনগণ বিশ্বাস করেছিল সেদিন, যে ক্ষমতালোভী ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে সক্ষম হলে দেশের সার্বভৌমত্ব ভূ-লুন্ঠিত হবে। এ কারণেই ফ্যাসিস্টদের সেই স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক শ্রমজীবী-কর্মজীবী মানুষ নির্দিধায় মৃত্যুকে সাহসের সঙ্গে সেদিন আলিঙ্গন করেছিল।”
অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, সকল শহিদদের রক্তের বিনিময়ে পতিত, পলাতক, পরাজিত, বিতাড়িত, ফ্যাসিবাদী অপশক্তি, রাষ্ট্র রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ নিতে ওঁৎ পেতে রয়েছে। সরকারের যেকোনো ভুল সিদ্ধান্তে দেশের গণতন্ত্র উত্তোলনের যাত্রা বা পথকে সংকটে ফেলে দিতে পারে। দেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। কাজেই এ ব্যাপারে আমাদের সকলকে বিশেষ করে অন্তর্বর্তিকালীন সরকারকে অত্যান্ত সতর্ক থাকতে হবে, থাকা প্রয়োজন।
শহিদ পরিবারের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, শহিদরা কেবল শুধুমাত্র একটি সংখ্যা নয়, একটি প্রাণের সমাপ্তির অর্থ। একটি পরিবারের মৃত্যু। একটি স্বপ্ন সম্ভাবনার অবসান। তবে আপনাদের সন্তান-স্বজনের শহিদি মৃত্যু দেশ এবং জনগণকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছে। দেশ আপনাদের শহিদ সন্তানের কাছে ঋণি। প্রতিটি শহিদ পরিবারের প্রতি রাষ্ট্র এবং সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষ যাতে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শ্রমজীবীদের অবদান নিয়ে গর্ব করতে পারে। শ্রমজীবী কর্মজীবী শহিদ পরিবার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সদস্যরা যাতে তাদের স্বজনদের শহিদি মৃত্যু নিয়ে গৌরব করতে পারে।
তিনি আরও জানান, বিএনপি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে সাভার-আশুলিয়ায় কিংবা অন্য কোনো সুবিধাজনক এলাকায় শ্রমজীবী কর্মজীবী মানুষের আত্ম ত্যাগের সম্মানে একটি বিশেষ স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকের সভাপতিত্বে এবং সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হোসান খান, বিএনপির সহ পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ডা. সালাউদ্দিন বাবু।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, আশুলিয়া থানা বিএনপির সাধারন সম্পাদক হাজী আব্দুল গফুর, ঢাকা জেলা যুবদলের সাধারন সম্পাদক আইয়ুব খান, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম মন্ডল, ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান মোহন প্রমুখসহ ঢাকা জেলা বিএনপি ও এর অংগসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যদের ক্রেষ্ট দিয়ে সম্মাননা জানানো হয় এবং আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়।