স্বাধীনতা পরবর্তী কয়েক লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ বৈষম্যের শিকার রংপুর অঞ্চল। কাঙ্খিত বরাদ্দ না মেলায় শুধু পিছিয়ে পরা অঞ্চলেরই তকমা পায়নি, কর্মহীন ও দরিদ্র মানুষের সংখ্যাও প্রকট এ অঞ্চলে।
বিগম কয়েক বছরের এডিপির বরাদ্দ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়— ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী বিভাগের যেখানে এডিপিতে বরাদ্দ ১০. ১২ শতাংশ থেকে ৩৮. ৫৪ শতাংশ। সেখানে রংপুরে এই ঘর গড়ে ৩. ১৩ শতাংশ। কোনো কোনো সময় তা নেমেছে ১ শতাংশের নিচে। দীর্ঘ সময় ধরে বরাদ্দে এমন বৈষম্যের কারণে অর্থনৈতিক ভাবে হোচট খেয়েছে রংপুর অঞ্চল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর দাবি উঠেছিলো বিশেষ বরাদ্দের। ৫ আগষ্টের পর রংপুর সফরে এসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছিলেন বৈষম্য দূর করে রংপুর হবে দেশের এক নম্বর জেলা।
কিন্তু অভ্যুত্থান পরবর্তী বাজেট ও এডিপির বরাদ্দে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বতী সরকার গত ১০ মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) মোট ১০ টি সভা করেছে। এসব সভায় সারা দেশে বিভিন্ন উন্ময়ন প্রকল্পের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় অনুমোদন করা হয়েছে। এ উন্নয়ন বরাদ্দের অর্ধেকই খরচ হবে বানিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের জন্য। যার মধ্যে রয়েছে মেগা প্রকল্পও। অথচ দাবি থাকার পরও রংপুর অঞ্চলের জন্য বিশেষ কোনো বরাদ্দ নেই। রংপুর বিভাগে ৪ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার থাকলেও কোনো অগ্রগতি নেই। এমনকি গেল বাজেটেও এ বিষয়ে কোনো বরাদ্দ উল্লেখ করা হয়নি। অন্যদিকে কৃষি নির্ভর রংপুর অঞ্চলকে এগিয়ে নিয়ে কৃষি শিল্প, বাজার ব্যবস্থাপনা, কৃষকদের জন্য হিমাগার নির্মাণ, আধুনিক সেচ ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তেমন বরাদ্দ নেই।
এদিকে উত্তরাঞ্চলের বাজেট বৈষম্য নিরসন ও এই অঞ্চলের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিতে একটি স্বতন্ত্র আঞ্চলিক কমিশন গঠন করা এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি স্বায়ত্তশাসিত পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তর করা, এই দুই দফা দাবিতে আন্দোলন করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে রোড ব্লকেডের মতো কর্মসূচিও পালন করে তারা। এছাড়াও রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে একটি লিখিত দাবিনামা তুলে দেন শিক্ষার্থীরা।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী, শামসুর রহমান সুমন বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর প্রধান উপদেষ্টা রংপুরের বরাদ্দ বৈষম্য নিরসনে আশ্বাস দিলেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। দক্ষিণাঞ্চলে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হলেও উত্তরাঞ্চলের জন্য বিশেষ কোনো প্রকল্প গ্রহণ করেনি অন্তবর্তী সরকার। আমরা আন্দোলন করছি। ভবিষ্যতে প্রত্যাশা পূরণ না হলে আবারো কর্মসূচি দেয়া হবে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুকের মতে, রংপুর অঞ্চলকে উন্নয়নের মূল স্রোত ধারায় যুক্ত করতে হলে অবশ্যই বিশেষ বরাদ্দে গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষ করে যে চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হবার কথা সেগুলোতে বরাদ্দ দিয়ে চালুর উদ্যোগ নিতে হবে। গ্যাস সংযোগ দিয়ে শিল্পায়নে মনযোগ দিতে হবে। একই সাথে কৃষিভিত্তিক অঞ্চল হিসেবে কৃষি শিল্পে বাজেটে বরাদ্দ দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে হবে। এছাড়াও দারিদ্রতা হার কমাতে ও কর্মসংস্থান বাড়াতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না গেলে রংপুর অঞ্চল আরো পিছিয়ে পড়বে।
কেকে/ এমএস